জনশূন্য সৈকতের নীল জলে খেলছে কুকুর, ঝাঁকে ঝাঁকে শামুক-ঝিনুক
জনশূন্য সৈকতে নির্জনতার সুবাদে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। ডালপালা মেলতে শুরু করেছে লতাপাতা। সৌন্দর্য্যবর্ধনে লাগানো গাছগুলোতে ফুটছে ফুল। সমুদ্রতীরে ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করছে শামুক-ঝিনুক। সমুদ্রের নীল জলে খেলা করতে দেখা গেছে একদল কুকুরকেও।
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের উপস্থিতি না থাকায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সৈকতে প্রকৃতির এমন পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকা পতেঙ্গা সৈকত প্রায়ই নিস্তব্ধ। সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে সম্মুখে শুধু পানি আর পানির দেখা মেলে। কোলাহল শূন্য সৈকতের গাছগুলোতে গজাতে শুরু করেছে নতুন নতুন ডালপালা। জনশূন্য সৈকতে কুকুরসহ নানা ধরনের প্রাণী গোসল করছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে সৈকত মানুষের দখলে থাকে। তখন মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর দেখা মেলে না। করোনার কারণে পতেঙ্গা সৈকত এখন জনশূন্য। এই এখণ সৈকতে পশু-পাখিসহ প্রকৃতির দখলে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন সরকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সকালবেলা হাটতে বের হলে সৈকতে যাই। এখন মানুষের আনাগোনা না থাকায় সৈকত শান্ত। গাছগুলোতে ফুল ফুটে আছে। শামুক-ঝিনুকে ভরে আছে সৈকত। সবমিলিয়ে নতুন রূপ ধারণ করে আছে পতেঙ্গা সৈকত।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পতেঙ্গা সৈকত। চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়িতে করে সমুদ্রপ্রেমীরা এই সৈকতে ভিড় করেন। তখন আবর্জনা ও দূষণে সৈকত রুগ্ন রূপ ধারণ করে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও পরিবেশের জন্য সেটি ইতিবাচক হয়েছে। প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে নিজের রূপ।
পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি ইদ্রিছ আলী বলেন, কক্সবাজারের পর মানুষের কাছে পতেঙ্গা সৈকত পছন্দ। একসময় এই সৈকতে অনেক পাথর ছিলো। সেগুলো কোনায় কোনায় বালি জমতো। সৈকত জুড়ে ছিলো বিভিন্ন উদ্ভিদ। অনেকগুলো গাছও ছিলো। সংস্কারের পর সৈকতের লতাগুলো হারিয়ে গেছে। পুরো এলাকায় সীমানা দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের দূষণের কারণে সৈকতের আগের রূপ হারিয়ে গেছে। এখন যেই রূপ পতেঙ্গা সৈকত ফিরে পেয়েছে সেটি গত এক দশক আগেও ছিলো।
সমুদ্র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সমুদ্র সৈকতের লবণাক্ত জলে বেঁচে থাকে অসংখ্যা জলজ উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদ সমুদ্র তীরে জন্মায়। এগুলো সৈকতের ক্ষয় রোধ করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রকৃতি মানুষকে দুই হাত ভরে দেয়। কিন্তু মানুষ এসব প্রকৃতির মূল্য বুঝে না। সৈকতের তীরে এমন কিছু উদ্ভিদ থাকে যেগুলো সৈকতের ক্ষয় রোধ করে। যেমন সাগরলতা। পতেঙ্গা সৈকতে সাগরলতার এখন চোখে পড়ে না। মানুষের আনাগোনা ও যত্রতত্র উন্নয়নের কারণে এসব উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে।
১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পতেঙ্গা সৈকতের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি ইতোমধ্যে সৈকতের ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি ও সৌন্দর্য্যবর্ধন করেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দূষণ রক্ষায় আমরা সৈকত সংলগ্ন প্রায় ৩০০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়া সৈকতে নামার জন্য নির্দিষ্ট সড়ক তৈরি, আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন, পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা, টয়লেট, সৈকতে আলোকায়নের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু অনেক অসচেতন মানুষ ময়লা ফেলে সৈকত নষ্ট করছে। তবে আমরা নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে দূষণরোধের চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে পতেঙ্গা সৈকতের অবস্থান। সৈকতপ্রেমী অনেকে বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। এই সৈকতকে ঘিরে বর্তমানে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সৈকত ঘেঁষে তৈরি হয়েছে সাড়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড।