দানবাকৃতির বনরুটি
মেকং নদীর অববাহিকায় অবস্থিত প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা ভিয়েতনামের আন-গিয়াং প্রদেশ। তবে ঠিক এই সৌন্দর্যের কারণে নয়, বরং প্রায় আধা-মানুষ সমান লম্বা বনরুটির কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববাসীর আকর্ষণ কেড়েছে প্রদেশটি।
এই আকর্ষণের সূত্রপাত ২০১৮ সালে। যাপিত-জীবন এবং বিনোদন বিষয়ক ব্রাইটসাইড নামক পশ্চিমা ওয়েবসাইট সে বছর বিশ্বের অদ্ভুত সব খাবার নিয়ে এক তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে স্থান করে নেয় আন-গিয়াং প্রদেশের ওই বিশাল বনরুটির ছবি। ব্রাইটসাইড তখন দাবি করে, এ রুটি নাকি প্রদেশটির মানুষের খুবই প্রিয় খাদ্য।
কিন্তু বিশ্বাস করেননি অনেকেই। তারা দাবি করতে থাকেন এসব রুটির ছবি ফটোশপ করে বড় করে দেখানো হয়েছে অথবা ছবি তোলার সময় নানা কোণ থেকে ক্যামেরার কারসাজির মাধ্যমে এমন দৃষ্টিভ্রম তৈরি করা হয়েছে।
এসব যুক্তিই হয়তো শেষ পর্যন্ত মেনে নিতেন সবাই। কিন্তু বাধ সাধলো ডিজিটাল দুনিয়াটাই। ইন্টারনেটে এরপর একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকল আন-গিয়াং প্রদেশের সেই বিশাল সব রুটির চিত্র আর ভিডিও। যা খুব শীঘ্রই ভাইরাল আকার ধারণ করে। খবর অডিটি সেন্ট্রালের।
দেশের একটি খাদ্যের প্রতি বিদেশীদের আকর্ষণ টের পেয়ে এবার চুপ থাকল না ভিয়েতনামের গণমাধ্যম। এবার তারাও আন-গিয়াংয়ের দানব রুটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ শুরু করলো। এভাবে ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বে প্রতিষ্ঠা পেল রুটিটির প্রচার।
দৈর্ঘ্যে কমপক্ষে এক মিটার, আর ওজনে কমপক্ষে ৩ কিলোগ্রাম হয় রুটিগুলো। সাধারণত বড় একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে এ রুটি বিক্রি করা হয়। যার মূল্য ২ দশমিক ১৪ মার্কিন ডলার বা ৫০ হাজার ভিয়েতনামি ডং (জাতীয় মুদ্রা)।
ভোজন রসিকদের প্রচার দেখতে যেমন বড়, এগুলো খেতেও নাকি তেমনই সুস্বাদু । অবশ্য উপাদান আহামরি কিছু নয়। সাধারণ বনরুটির মতোই উনুনে বেক করার পর এর মাঝখানে মাখনের পুরু প্রলেপ দেওয়া হয়। বাড়তি স্বাদ যোগ করতে রুটির উপরে দেওয়া হয় তিলের দানা।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, আন-গিয়াং প্রদেশের এই বনরুটি সেখানকার কোনো প্রাচীন খাদ্য সংস্কৃতির অংশ নয়। বরং সেখানকার এক নারী বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারক নিছক মজা করেই এই রুটি বানানো শুরু করেছিলেন। তাও বেশিদিন আগে নয়।
ফাম থি বাক নামের ওই নারী স্থানীয় গণমাধ্যম ভিএন এক্সপ্রেসকে বলেন, আসলে আমি অবসর সময়ে মজা করে এসব বনরুটি বানানো শুরু করি। কিন্তু এরপর এখবর ছড়িয়ে পড়লো আর কিছুদিনের মধ্যেই তা বিদেশী পর্যটকদের নজরেও পড়লো। তখন তারা স্মারকচিহ্ন হিসেবে এই রুটি কেনা শুরু করলেন।
বিদেশীদের এই কৌতূহলের তোড়ে; ভিয়েতনামে গিয়ে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে এই আন-গিয়াংয়ের এই বনরুটি। প্রদেশটিতে পর্যটনের নতুন মাত্রাও যোগ করেছে এর জনপ্রিয়তা।