নিলামে সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার ওঠা পিকাসোর প্রেমিকার প্রতিকৃতির পেছনের গল্প
তরুণ প্রেয়সী ম্যারি তেরেসাকে নিয়ে পাবলো পিকাসো 'ফেমে আসিসে প্রেস দুনে ফেনেতে' বা 'ওম্যান সিটিং নিয়ার আ উইন্ডো' চিত্রকর্মটি নির্মাণ করেছিলেন। বসন্তের নানা রঙে প্রেমিকার প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন স্পেনের এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। ১৯৩২ সালে আঁকা এই চিত্রকর্মটি আসন্ন মে মাসে নিলামে তুলতে চলেছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টিজ নিইয়র্ক। ধারণা করা হচ্ছে, চিত্রকর্মটি ন্যূনতম সাড়ে পাঁচ কোটি ডলারে বিক্রি হতে চলেছে।
পিকাসো ছাড়াও মে মাসে শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহলের নাইন মাল্টিকালারড মেরিলিনস সিরিজের (রিভার্সাল সিরিজ) (১৯৭৯-৮৬) শিল্পকর্ম তোলা হবে। এর মূল্য ধরা হয়েছে আনুমানিক ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। ক্লোদ মোনের ওয়াটারলু ব্রিজ, ও এফেক্ট দে ব্রাউইলার্ড (১৮৮৯-১৯০৩) শিল্পকর্ম দুটিও নিলামে তোলা হয়েছে। আগ্রহীরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে চিত্রকর্মগুলোর আনুমানিক মূল্য জানতে পারবেন ।
মে মাসে বিংশ শতাব্দীর শিল্পকর্ম কেন্দ্রিক বিশেষ নিলাম আয়োজনের সহ-প্রধান এবং ইমপ্রেশনিস্ট অ্যান্ড মডার্ন আর্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি ভেনেসা ফুসকো পিকাসোর শিল্পকর্মটিকে চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের মাঝামাঝি হিসেবে বর্ণনা করেন। সাদা রঙের পুরু প্রলেপে পিকাসোর তরুণী প্রেমিকা ম্যারি তেরেসা ওয়াল্টারের আবেদনময়ী মুখমন্ডল আঁকা হয়েছে। পরবর্তীতে চেহারার আকৃতি দিতে সেখানে করা হয়েছে খোদাই।
পিকাসোর বয়স যখন পঞ্চাশের কোঠায়, তখন তার সাথে ১৭ বছর বয়সী ম্যারি ওয়াল্টারের পরিচয় হয়। সেই সময়কার অন্যান্য চিত্রকর্মের তুলনায় ভিন্ন এই চিত্রটিতে ওয়াল্টারকে দেখা যাবে রাজকীয় রূপে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে বসে থাকতে। নিউইয়র্কের এই বিশেষজ্ঞ আরও জানান, শিল্পকর্মটিতে তরুণ ম্যারিকে পিকাসোর "কামনার দৃষ্টিতে দেখা অভীষ্ট" হিসেবে চিত্রায়ণ করা হয়েছে।
জীবনের কঠিন এক সময়ে পিকাসো চিত্রটি এঁকেছিলেন। সে সময় তিনি কিউবিজমের মতো যুগান্তকারী সৃষ্টির জন্য চাপ বোধ করছিলেন। একই সাথে, গৃহস্থালি ও বৈবাহিক জীবনের ফাঁদে আটকে পড়ার বিষয়টিও অনুভব করেছিলেন।
ফুসকো জানান, "পিকাসো সবে মাত্র পঞ্চাশে পা দিয়েছিলেন। সেইসাথে ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। তখন দুইটি জিনিস ঘটেছিল। তিনি চাঞ্চল্যে ভরপুর ম্যারি তেরেসা ওয়াল্টারের দেখা পেলেন এবং নির্দ্বিধায় তার প্রেমে পড়লেন। আপনি তার এই বিশেষ রুপান্তরের বিষয়টি চিত্রকর্মে দেখতে পাবেন। ধারণা করা হয়, ১৯৩২ সালের কাজে তিনি রঙ এবং সংবেদন ঢেলে দিয়েছিলেন এবং আবেদনময়ী রেখার সাহায্যে বর্ণনা করেছিলেন ম্যারি তেরেসাকে।"
২০১৩ সালে লন্ডনের সথেবিজে চার কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি হবার এক দশকের মাঝেই আবারও নিলামে উঠছে শিল্পকর্মটি।
ক্রিস্টিজ ইতিমধ্যে ৫৫ মিলিয়ন ইউরোতে তৃতীয় পক্ষের জামানত নিশ্চিত করে রেখেছে। অর্থাৎ, একজন সংগ্রাহক ইতিমধ্যেই ঐ পরিমাণ অর্থে চিত্রকর্মটি কেনার চুক্তি করেছেন। তবে, প্রতিষ্ঠানটি নিলামে শিল্পকর্মটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও বিক্রেতাদের উঁচুদরের শিল্পকর্ম নিলামে তোলার বিষয়ে রাজি করাতে হিমশিম খাচ্ছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, সামনের নিলামে পিকাসোসহ অন্যান্য বিখ্যাত শিল্পকর্মের উপস্থিতি থেকে ধারণা করা যায় যে বিক্রেতাদের দ্বিধা ক্রমশ দূর হচ্ছে।
এশিয়াকে কেন্দ্র করে নিলাম ঘরগুলোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি হংকংয়ে শেষ হল পিকাসোর ম্যারি তেরেসার চিত্রকর্মের তিনদিন ব্যাপী প্রদর্শনী। নিউইয়র্কে ফেরার আগে লন্ডনেও চিত্রকর্মটি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
ফুসকো বলেন, "আমরা যে ধরনের গ্রাহকের সন্ধান করছি তার জন্য কৌশলী হয়েই ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ করা হয়।"
"পিকাসো অন্যতম এক আকর্ষণ...বিংশ শতাব্দীর কোনো শিল্পী যদি বিশাল সংখ্যক মানুষকে উদ্বেলিত করে থাকে, তবে তিনি হলেন পিকাসোর মতো একজন শিল্পী। এছাড়া, ছবিটি কালজয়ী হওয়ায় এই মুহূর্তে তা বিক্রি করতে আমাদের সাহায্য করবে।"
- দ্য ন্যাশনাল নিউজ ডট কম অবলম্বনে