ব্ল্যাকহোলের আকার ধারণার চেয়েও অনেক বড়: নতুন অনুসন্ধান
আমাদের মহাবিশ্বে যত রহস্য আছে, তার মধ্যে ব্লাকহোল বা কৃষ্ণগহবর অন্যতম। এখনো পর্যন্ত এই কৃষ্ণগহবর কেউ দেখেনি। তবে এর সন্ধানে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন।
একেবারে প্রথম যে ব্ল্যাকহোল শনাক্ত হয়েছিল, সেটি নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম এটির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। সম্প্রতি জানা গেল, যতটা ধারণা করা হয়েছিল, এর আকার তার চেয়েও বড়।
জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত সমীক্ষায় এ তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার গবেষকরা জানান, সিগনাস এক্স-১ ব্ল্যাকহোলটি আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে ২১ গুণ বড় এবং পূর্ববর্তী ধারণার চেয়ে ৫০ শতাংশ বৃহৎ।
এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া এটিই নিকটতম ব্ল্যাকহোল। ৭,২০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে সিগনাস এক্স-১- যা আগের গণনার চেয়েও বেশি দূরে! বলে রাখা ভালো, এক আলোকবর্ষ সমান ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার বা ৫.৯ ট্রিলিয়ন মাইল।
তীব্র মহাকর্ষীয় টানের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্ল্যাকহোল তার অভিকর্ষজ টানে আলো শুষে নিতে পারে। 'সুপারম্যাসিভ' ব্ল্যাক হোল রীতিমতো প্রকাণ্ড, অনেকটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের মতো, যা সূর্যের ভরের ৪ মিলিয়ন। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত ছোট স্টেলার-মাস ব্ল্যাকহোলের ভর একক তারকার ভরের সমান। তাই স্টেলার ব্ল্যাকহোলের তুলনায় সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে সম্রাট বলা যায়।
কার্টিন ইউনিভার্সিটি এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি রিসার্চ ইন অস্ট্রেলিয়ার জ্যোতির্বিদ এবং সমীক্ষাটির প্রধান জেমস মিলার-জোনস বলেন, সিগনাস এক্স-১ মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সবচেয়ে বড় স্টেলার-মাস ব্ল্যাকহোল। পৃথিবী থেকে যেসব শক্তিশালী রঞ্জনরশ্মি পাওয়া যায়, তার মধ্যেও এটি অন্যতম।
মিলার-জোনস আরও বলেন, এই ব্ল্যাকহোল এত দ্রুতগতিতে ঘুরতে পারে যে, এটি পদার্থবিদ আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের কল্পিত সর্বোচ্চ গতিকেও হার মানায়।
আজ থেকে ৪০ অথবা ৫০ লাখ বছর আগে নক্ষত্র হিসেবেই এটি আবির্ভূত হয়েছিল, যার ভর সূর্যের চেয়ে ৭৫ গুণ বড় ছিল; তারপর হয়তো কয়েক হাজার বছর আগে নিভে গিয়ে সংকুচিত হতে হতে ক্ষুদ্রতম অবস্থায় পতিত হয়ে এটি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়।
কোনো বস্তু যখন ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্তে প্রবেশ করে, সেটি আর কখনোই ফিরে আসতে পারে না; ধাবিত হয় এর কেন্দ্রে।
গবেষণাটিতে ১০টি মার্কিন পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সমন্বিত ভেরি লং বেসলাইন অ্যারে রেডিও টেলিস্কোপের ডেটা অন্তর্ভুক্ত করা করেছে।
বলে রাখি, সিগনাস এক্স -১ যখন প্রথমে ব্ল্যাকহোল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, তখন বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে বাজির খেলায় মেতে উঠেছিলেন! পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং দাবি করেছিলেন, এটিই মহাবিশ্বে একমাত্র ব্ল্যাকহোল নয়; অন্যদিকে আরেকজন বিজ্ঞানী কেপ থর্ন ঠিক বিপরীত কথা বলেছিলেন।
মজা করে তাই মিলার-জোনস বলে ওঠেন, 'অন্তত আমার অনুসন্ধানের ওপর এখনো কেউ বাজি ধরে বসেনি!'
- সূত্র: রয়টার্স