ফেসবুকের দুর্দিন কি শুরু হল!
ফেসবুকে ছড়ানো ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ভুলতথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের কনটেন্ট মডারেটিং পলিসি নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।
সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমালোচনার মুখে কিছু নীতিতে পরিবর্তন এনে ফেসবুক বলেছে, ঘৃণামূলক তথ্য প্রতিরোধে এবং ভোটারদের ওপর নানা বিষয়ে চাপাচাপি রোধে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
তবে ফেসবুকের নীতিমালা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব থাকা অ্যাক্টিভিস্টরা এতেও সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, ফেসবুক থেকে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা পর্যন্ত তারা চাপ প্রয়োগ করে যাবেন।
এবারই প্রথম ফেসবুকের কনটেন্ট মডারেশন পলিসি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়নি। এর আগেও হয়েছিল, তবে এভাবের মাত্রাটা আগের তুলনায় বেশ ভিন্ন।
নিজেদের নীতিমালা ইস্যুতে ফেসবুকের কার্যক্রম নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে হতাশার কথা জানান। অন্যদিকে ফেসবুকের পলিসি পরিবর্তনের জন্য বাইরে থেকে কয়েকশো কোম্পানি তাদের কোটি কোটি ডলারের বিজ্ঞাপনী ক্ষমতাকেও ব্যবহার করেছিল।
নানামুখী এই চাপের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ফেসবুককে মুক্তমতের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা।
তবে ফেসবুকের বিশালতা এবং কোম্পানিতে জাকারবার্গের প্রভাবের কারণে এটা পরিষ্কার নয় যে, নীতিমালার বিষয়গুলো কী পরিমাণ বা কতটুকু পরিবর্তন আসতে পারে।
ফেসবুকের সামনে কী আছে?
ঘৃণামূলক পোস্ট বিরোধী আন্দোলনকারীরা তাদের উদ্বেগ নিয়ে জাকারবার্গের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ফেসবুকের জন্য তা নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
বিগত সময়ে নানা ইস্যুতে ফেসবুকের ওপর দিয়ে যতো ঝড় গেছে তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে বিজ্ঞাপন বয়কট।
এই মুহুর্তে, এই পলিসি পরিবর্তনের পদক্ষেপ ফেসবুককে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায় নাকি প্রতিষ্ঠানটির অর্থায়নের কোনও উপাদানগত প্রভাব ফেলে তা এখন দেখার বিষয়।
দৃশ্যমানভাবেই কোম্পানিগুলোর বয়কটের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারী মানের যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফেসবুক প্রচুর রাজস্ব আয় করতো সেটিও কমে যেতে পারে।
মাসব্যাপী দীর্ঘ বয়কট শেষ হওয়ার পরে, এতে অংশ নেওয়া কিছু কোম্পানি ফেসবুকের কয়েক বিলিয়ন ব্যবহারকারী এবং ব্যবহারকারীদের ডেটা অ্যাকসেস ফিরে পেতে আগ্রহী হতে পারে।
তবে মার্ক জাকারবার্গ যেহেতু ফেসবুক কোম্পানির ভোটিং ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন তাই কোনো শেয়ারহোল্ডারও তাকে পদ থেকে সরাতে পারবেন না।
তবে ফেসবুকের এতো বিতর্ক আর সংকটের মধ্যেও নিজেদের বাজার প্রসারিত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
চীন-ভারত উত্তেজনার মধ্যে সম্প্রতি ভারত তাদের দেশের জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর 'রিলস' নামে একটি অ্যাপ দিয়ে সেই জায়গা দখল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে ফেসবুকেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রাম।
বিশ্বের বৃহত্তম বাজার ভারতে ফেসবুকের এই পদক্ষেপের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বার্তা দিচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে নানা চাপের মধ্যে থাকলেও ব্যবসাকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এসব বিষয় তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারে না।