মাছ-মাংস ছাড়াই খাদ্যতালিকায় মিলবে প্রোটিন
প্রোটিন বা আমিষ মানেই মাছ-মাংস- এমন ধারণা অনেকেরই। এগুলো প্রাণিজ আমিষ। মাছ, মাংস ও ডিম ছাড়াও কিন্তু নিয়মিত খাদ্যতালিকায় প্রোটিন থাকতে পারে। আর মহামারির এ সময়ে প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া যেহেতু কিছুটা ঝুঁকির, তাই উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের জুড়ি নেই।
কোনগুলোকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বলে? বীজ জাতীয় খাবার, যেমন- মটরশুটির বিচি, শিমের বিচি, কুমড়ো বিচি, বিভিন্ন বাদাম, মসুর ডাল ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যে প্রোটিন রয়েছে।
আমেরিকান পুষ্টিবিদ ও 'দ্য ফ্লেক্সিটারিয়ান ডায়েটে'র লেখক ডিজে ব্লাটনার বলেন, 'যারা নিরামিষভোজী, তাদের চিন্তার কারণ নেই। কারণ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে রয়েছে উদ্ভিদজাত কিছু খাদ্য, যা মাছ-মাংস ও ডিমের বিকল্প হিসেবেই কাজ করে।'
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিনের ক্যালরি চাহিদার অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন থেকে পূরণ করা উচিত।
প্রতিদিন কতটুকু প্রোটিন খাওয়া উচিত, সে বিষয়ে ব্ল্যাটনার বলেন, 'একজন নারীর গড় ওজন যদি ১৫০ পাউন্ড (প্রায় ৬৮ কেজি) হয়ে থাকে। তার মানে তার প্রতিদিন প্রায় ৫৪ গ্রাম করে প্রোটিন খাওয়া উচিত।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিনের খাবারে এই আইটেমগুলো রাখলে যেমন তা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারি, তেমন সুস্বাদুও বটে।'
চলুন, এ রকম কিছু শক্তিশালী উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উপকারিতা জানা যাক:
শস্যজাতীয় খাবার
শুধু চাল আর গমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় গম ও ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ দানাদার খাদ্যশস্য। গম উদ্ভিজ্জ প্রেটিনের প্রধান উৎস। চাল, গম ও ভুট্টা দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা হলেও পুষ্টি বিবেচনায় গম ও ভুট্টায় তৈরি খাবেরের পুষ্টিমান বেশি। কিনোয়া, ওটস, বাকহুইট, আমারনাথ, বজরা ইত্যাদি সবগুলোতেই চাল ও গমের তুলনায় বেশি প্রোটিন থাকে।
বাদামের তৈরি দুধের খাবার
বাসায় তৈরি কাজু বাদাম ও কাঠবাদামের মাখন চীনাবাদামের মতোই প্রোটিনের ভালো উৎস। কাঠবাদামের দুধ সহজ প্রাপ্য এবং এটি খুব সহজেই তৈরি করা যায়। কেউ চাইলে হাতের মুঠোয় করে বাদাম খেতে পারেন, এটি খেতে বেশ মজাদার এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি-চাহিদার সকল উপাদান পাওয়া যায়।
বাদাম
বাদামও প্রোটিনের উৎস হিসেবে খুব ভালো। ২০টি কাঠবাদামে পাবেন প্রায় ৪ গ্রাম এবং একই পরিমাণ কাজুবাদাম থেকে ৬ গ্রাম প্রোটিন। এই খাবারে আরও পাবেন উপকারি চর্বি (ওমেগা ফ্যাট) এবং আঁশ। তবে বাদাম লবণ ছাড়া খাওয়া ভালো।
বীজজাতীয় খাবার
যেকোনো ধরনের বীজজাতীয় খাবারে প্রোটিন থাকে।মটরশুঁটিও প্রোটিনের চমৎকার উৎস। বীজজাতীয় খাবার নাস্তায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আঁশ গ্রহণ করা যায়।
কুমড়া, তিল ও সূর্যমুখীর বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস। এক টেবিল-চামচ বীজে দৈনিক প্রোটিন চাহিদার ১০ থেকে ২০ ভাগ পাওয়া যায়। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন বি ও আয়রন- যা বাড়তি পাওনা হিসেবে শরীরের জন্য উপকারী।
প্রতিদিন এক বা একাধিক ধরনের বাদাম ও এক চামচ পরিমাণ ভাজা বীজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।
সবুজ মটর
আমরা জানি, সব ধরনের মটরজাতীয় খাবার, যেমন- ছোলা, ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বিচি ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। এগুলোর মধ্যে সবুজ মটর অন্যতম। এক কাপ মটরে যে পরিমাণ প্রোটিন থাকে, তা প্রায় এক কাপ দুধের প্রোটিনের সমপরিমাণ। তাই তরকারি, সালাদ অথবা বিকালের নাস্তায় এক কাপ সবুজ মটর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
সয়া
এটি আরেকটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের উৎস। তাই একে খাদ্যাভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। টোফু, নিউট্রেলা, মটরশুঁটি ইত্যাদিও প্রায়শই খাওয়া উচিত।
টফু
টফু ও পনির দেখতে অনেকটা এক রকম হলেও এ দুটি আসলে ভিন্ন বস্তু। টফু দিয়ে নানা রকমের খাবার তৈরি করা যায়। আধা কাপ টফুতে থাকে ২০ গ্রাম প্রোটিন, যা সারাদিনে দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় অর্ধেক।
টফু নানাভাবে খাওয়া যায়। মসলা ও সবজি দিয়ে, সালাদের উপাদান হিসেবে অথবা ভেজে সস দিয়ে পরিবেশন করেও টফু খাওয়া যায়।
ডাল
বেশি করে ডাল খেতে হবে। আধা কাপ রান্না ছোলায় পাওয়া যাবে ৭ গ্রাম প্রোটিন, আধা কাপ মসুর ডালে ৯ গ্রাম। প্রোটিনের উৎস হিসেবে সবচেয়ে আদর্শ ডাল হলো মসুর ও ছোলার ডাল।
পালংশাক, ব্রকলি, মূলজাতীয় খাদ্য
সবুজ শাকসবজি শুধু আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ নয়; প্রোটিনেরও ভালো উৎস। প্রতি কাপ এইসকল সবজিতে চার থেকে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। সিদ্ধ করে সুপে মিশিয়ে অথবা সবজি হিসেবে রান্না করে- যেভাবেই হোক, সবুজ সবজি খেতে হবে।
সবজি
মটরশুঁটি, ব্রকলি, পালংশাক প্রতি কাপে দেয় প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন। আলু, ফুলকপি, ঢেঁড়স, মাশরুম ইত্যাদি প্রতি কাপে যোগায় প্রায় ৫ গ্রাম প্রোটিন। বিটরুট প্রতি কাপে দেয় প্রায় ৪ গ্রাম। সবগুলো হিসাবই রান্না করা অবস্থায়। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন যোগায়- এমন সবজি বেশি খেলে স্বাভাবিকভাবেই প্রোটিনের চাহিদা মিটবে সহজে।
আরও কিছু
'স্পিরিলুনা অ্যালজি' নামক এক ধরনের শৈবাল ৩০ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করলে প্রায় ৮ গ্রাম ভালোমানের প্রোটিন পৌঁছায় শরীরে। তাছাড়া সব ধরনের দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিনের পরিপূর্ণ উৎস।
- সূত্র: প্রিভেনশন ডটকম