লাশ রাখার জায়গা নেই কোথাও
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে জনজীবন জর্জরিত। হু-হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, বৈশ্বিক এ মহামারিতে দুনিয়াজুড়ে এ পর্যন্ত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২ লাখ ২৯ হাজার ১৫১ সুস্থ হয়ে উঠলেও প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ হাজার ২০৩ জন।
এত প্রাণহানীর ঘটনার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আরেকটি বড় সঙ্কট। করোনাভাইরাস মারাত্মক সংক্রামক বলে লাশের শেষকৃত্য করতে হয় খুব সাবধানে, বিশেষ ব্যবস্থায়। এ পরিস্থিতিতে লাশ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশগুলোকে।
ফ্রান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল থেকে ইন্দোনেশিয়া, পৃথিবীর এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে দেশগুলো। লাশ রাখতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর।
যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। নিউইয়র্কের অধিকাংশ ফিউনারেল হোম বা লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের লাশের শেষকৃত্যে সাড়া দিচ্ছে না। আবার কোথাও কোথাও ফিউনারেল হোমের গাড়ি রাখার গ্যারেজে জমছে লাশের পাহাড়।
ব্রুকলিনের নিউইয়র্ক ফিউনারেল সার্ভিসের কর্ণধার প্যাট মারমো জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬০টি লাশ সংরক্ষণের সামর্থ্য থাকলেও প্রতি মুহূর্তেই একের পর এক মৃত্যুসংবাদবাহী ফোন কল আসছে। একদিনে প্রায় ২০০ লাশের শেষকৃত্য করার অনুরোধ এসেছে তাদের কাছে। মৃতদের ৮০ শতাংশই করোনাভাইরাসের শিকার। এত লাশ সৎকার করা তাদের পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব না।
বৈশ্বিক এই মহামারিতে ইতালি কয়েক মাস ধরেই পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ইউরোপের এই দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ১৪ হাজার ৬৮১ জন, যা এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। লাশ সৎকারে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাধ্য হয়ে যেখানেই সম্ভব, করে রাখা হচ্ছে কফিনের স্তূপ।
দেশ হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানী ঘটেছে স্পেনে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ হাজার ১৯৮ জন। জায়গা না থাকায় বার্সেলোনার মেমোরা ফিউনারেল হোমের গ্যারেজে প্রতিদিন গড়ে রাখা হচ্ছে ২০০টি কফিন।
এদিকে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৬৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ২১৬ জন। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বাড়ার আশঙ্কায় ফুটবলের দেশ হিসেবে খ্যাত ব্রাজিলের সরকার নিয়ে রেখেছে আগাম প্রস্তুতি। ওই মহাদেশের সবচেয়ে বড় সমাধিক্ষেত্র সাওপাওলোর ভিলা ফারমোসা সিমেট্রিতে আগে থেকেই খুড়ে রাখা হয়েছে কবর।