সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমিতেও শস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা
চিলির উত্তরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রতিকূল এক মরুভূমি আতাকামা। শত বছরে গড়ে তিন থেকে চারবার বৃষ্টির দেখা মেলে এই ঊষর ভূমিতে। ফসল ফলানো তাই এখানে কঠিন।
তবে শত প্রতিকূলতার বিপরীতেও, এই অনুর্বর ভূমিতে কোনোভাবে টিকে আছে জীবন। মরুভূমির আশেপাশে প্রায় হাজারখানেক মানুষ নিয়োজিত আছেন কৃষিকাজে। ধারণা করা হয়, হাজার বছর আগে থেকেই এই মরুভূমিতে চাষাবাদ করা হয়।
এমন শুষ্ক, রুক্ষ আর অনুর্বর ভূমিতেও কীভাবে গাছপালা জন্মে, সম্প্রতি সেই রহস্য বের করার চেষ্টা করেছেন একদল বিজ্ঞানী। নতুন এক গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে সেই রহস্য। বিজ্ঞানীরা অভিযোজনের এমন জিনগত ভিত্তি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে আতাকামা মরুভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত ও চরম অবস্থাতেও জন্মাতে পারে খাদ্য শস্য।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট সিস্টেমস বায়োলজিস্ট গ্লোরিয়া কোরুজি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে শুষ্ক ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় যেন পুষ্টিকর শস্য উৎপাদন করা যায়, মূলত সে কারণে জেনেটিক ভিত্তি উন্মোচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'।
১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোরুজি ও একদল আন্তর্জাতিক গবেষক আতাকামা মরুভূমির ২২টি সাইটে উদ্ভিদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন।
মরুভূমি থেকে যত্ন সহকারে উদ্ভিদ এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় ল্যাবে; সেখানে জিনোমিক বিশ্লেষণের জন্য নমুনাগুলোকে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
আতাকামায় সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে এমন মোট ৩২টি উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়। জেনেটিক বিশ্লেষণের পর উদ্ভিদগুলোর সঙ্গে অন্য জায়গার আরও ৩২টি উদ্ভিদের (যেগুলো মরুভূমির উদ্ভিদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত) তুলনা করা হয়। তবে ভিন্ন জায়গার উদ্ভিদগুলোর কোনোটিই আতাকামার পরিবেশের সঙ্গে জেনেটিক অভিযোজনের জন্য উপযুক্ত ছিল না।
পরবর্তী গবেষণায় এমন ২৬৫টি জিনের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা, যেগুলো মিউটেশনের মাধ্যমে আতাকামায় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরপর এরকম আরও ৫৯ টি জিনের সন্ধান পাওয়া যায়।
এই জিনগুলো উচ্চ তাপমাত্রা বিকিরণ সহ্য করে মরুভূমি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠার সক্ষমতা রাখে।
এটি সত্যিই বিজ্ঞানীদের এক অভাবনীয় রহস্য উন্মোচন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশে গাছপালার জন্ম ও বেড়ে ওঠার এই রহস্যের সমাধানের মাধ্যমে মরুভূমিতে কয়েক ধরনের খাদ্য শস্য উৎপাদনের সম্ভবনাও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় যেখানে উর্বর জমিতে ফসলের পরিমাণ কমে আসছে, সেখানে বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে। বিশ্বের উষ্ণ অঞ্চলগুলোয় কোন ধরনের গাছ বৃদ্ধি পাবে সহজে ও তাদের যত্ন কীভাবে নিতে হবে, এ সবকিছু জানার একটি পথ তৈরি হলো এই গবেষণার মাধ্যমে।
চিলির পন্টিফিক্যাল ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন প্ল্যান্ট সিস্টেমস বায়োলজিস্ট রড্রিগো গুতেরেস বলেন, 'কাজটি বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান শুষ্ক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সরাসরি প্রাসঙ্গিক'।
'আতাকামার কিছু গাছ শিম ও আলুর মতো প্রধান খাদ্য শস্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত; আমরা শস্যের এমন জিনগুলোকে নির্বাচন করেছি যেগুলো উচ্চ তাপমাত্রা, খরা ও লবণাক্ততা সহ্য করেও টিকে থাকতে পারবে,' যোগ করেন তিনি।
- সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট