সাইকেলে ২১৭৫ মাইল পাড়ি দিয়ে দেশে ফেরা
স্কটল্যান্ডে আটকে পড়া শিক্ষার্থী ২০ বছর বয়সী ক্লেওন পাপাদিমিত্রি সাইকেলে চালিয়েই ফিরে যান নিজ দেশ গ্রিসে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এতদিন নিজ দেশে ফিরতে পারছিলেন না তিনি। তাই সিদ্ধান্ত নেন, সাইকেলেই ২১৭৫ মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে দেশে ফিরবেন।
যাত্রা শুরুর পর দুই হাজারেরও বেশি মাইল পাড়ি দেওয়া নিয়ে খানিকটা দ্বিধা ছিল তার মনে, পারবেন কি না! শেষ পর্যন্ত পেরেছেন পাপাদিমিত্রি।
৪৮ দিনের এই রোমাঞ্চকর সফর নিয়ে তিনি বলেন, 'এটি যে কত বড় অর্জন, সবেমাত্র বুঝতে পারছি। নিজের সীমাবদ্ধতা, সামর্থ্য, দুর্বলতা বুঝতে শিখেছি; নিজেকে চিনেছি নতুনভাবে। আশা করি, আমার এই সফর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্তত একজন মানুষ নিজের গণ্ডি থেকে বের হয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করবে।'
ইউনিভার্সিটি অব আবেরডিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ক্লেওন জানান, মার্চের শেষদিকে তিনি গ্রিসে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। তার অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধব ততদিনে চলে গেলেও, তিনি ক্লাস শেষ করার জন্য তখনো স্কটল্যান্ডেই ছিলেন। তিনবার বিমানের টিকিট কাটার পর বাতিল হয়ে যায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের জের ধরে।
তিনি বলেন, 'এপ্রিলের শুরুর দিকেই ধরে নিয়েছিলাম সামনের কিছু মাস আমাকে এখানে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।' কিন্তু তারপরেই তিনি এই পরিকল্পনা করেন।
সার্ডিনের কৌটা, সাইকেল ও তাঁবু
রোমাঞ্চের খোঁজে ও পরিবার থেকে এত দূরে আটকে পরার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন পাপাদিমিত্রি। সাইকেলে চড়ে এ ভ্রমণ শেষ করতে কী কী প্রয়োজন- খুঁজতে থাকেন। প্রথমদিকে এটি অবাস্তব স্বপ্ন মনে করলেও কিছুদিন পরেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনতে শুরু করেন। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবকে এই সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, 'এটি আমার ঝোঁকের মাথায় করে বসা পরিকল্পনা; ক'দিন পরেই ভুলে যাব- এমনটা ভেবে তারা সম্মতি দেন।'
যাত্রা শুরুর আগে পাপাদিমিত্রির বাবা তাকে একটি শর্ত জুড়ে দেন। অ্যাপের মাধ্যমে তার অবস্থানের সার্বক্ষণিক খবরাখবর পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সার্ডিন মাছের কৌটা, পিনাট বাটার, স্লিপিং ব্যাগ আর তাঁবু নিয়ে ১০ মে শুরু হয় তার যাত্রা।
সিএনএনকে তিনি জানান, প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৭৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছেন। ইংল্যান্ড থেকে নেদারল্যান্ডস হয়ে যাত্রা শুরু, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া হয়ে পৌঁছেন ইতালি। সেখান থেকেই গ্রিসে গিয়ে পৌঁছান।
পুরো সফরের সময়ে তিনি মাঠে বা কোনো বনে তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করতেন। দিনশেষে প্রতিদিনকার অগ্রগতি, আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজাতেন; নিয়মিত পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পাড়ি দেওয়ার সময় বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত কারও বাড়িতে বিশ্রাম ও গোসলের জন্য থামতেন।
যাত্রা শুরুর প্রায় ৫০ দিন পর ২৭ জুন অ্যাথেন্সে, নিজের বাড়িতে পৌঁছান পাপাদিমিত্রি। সেদিন বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ছাড়াও অসংখ্য অপরিচিত মানুষ তার আগমন উদযাপনের জন্য অপেক্ষা করছিল।
তিনি বলেন, 'অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ছিল ব্যাপারটি। বাবা-মা দুজনই তরুণ অবস্থায় অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ছিলেন, এই ঘটনা তাদের কাছে আলাদা গুরুত্ব রাখে। তারা এখন অন্তত স্বস্তিতে আছেন।'
গ্রীসে এখন তিনি অ্যাথেন্স ছেড়ে গ্রীষ্মকালীন চাকরি করছেন। সেইসঙ্গে তার সাত সপ্তাহের সাইকেল সফরের স্মৃতিচারণা করছেন। বলেন, 'আমি বর্তমানে নিজের ওপর, নিজের সামর্থ্যের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।'
সফলভাবেই এই যাত্রা সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি এখন ভাবছেন পরবর্তী বড় কোনো পরিকল্পনা নিয়ে।
৪৮ দিনের বাইক সফর অত্যন্ত কষ্টসাধ্য মনে করছেন অনেকেই৷ এ ব্যাপারে পাপাদিমিত্রি বলেন, 'লক্ষ্য যদি অনেক উঁচুতে হয়, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও সেই যাত্রাপথ অনেক কিছু শিখিয়ে যায়, সমৃদ্ধ করে। নিজের সম্পর্কেই এত নতুন জিনিস আবিষ্কার করবেন, নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।'
- সূত্র: সিএনএন