হলুদ এখন পশ্চিমের 'সুপার ফুড'
ভারত উপমহাদেশে খাবারের ইতিহাস হাজার বছরের পুরানো। এমনকি এই অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর আবির্ভাবও খাবারের উপাদানকে কেন্দ্র করে- মশলা।
মশলার গন্ধে পর্তুগিজ-ব্রিটিশদের উপমহাদেশ দখল করে নেওয়ার ইতিহাস সবার জানা। কিন্তু কোহিনূরের মতো আমাদের এই অঞ্চলের অনেক রেসিপিও যে তারা চুরি করে নিয়েছে, তা কি জানেন?
দুধ-হলুদ, ঠাণ্ডা-জ্বরে দাদি নানিদের অব্যর্থ দাওয়াই। এক গ্লাস দুধে এক চামচ চিনি আর এক চিমটি হলুদ গুলে দিতেন, খেতে জঘন্য কিন্তু খুব কাজের। খাওয়ার পর মুখে হলুদের গন্ধ লেগে থাকত, দাঁত হলুদ হয়ে থাকত না মাজলে। পশ্চিমারা হলুদের ব্যবহার শিখেছে গত এক দশক আগে। এখন ইউরোপ আমেরিকার অনেক রেস্তোরাঁয় গেলে এখন 'গোল্ডেন লাটে' বা 'গোল্ডেন মিল্ক' নামে পেয়ে যাবেন শৈশবের চিরচেনা দুধ-হলুদ। তারা একে নাম দিচ্ছেন 'সুপার ফুড' হিসেবে।
ভারতীয় উপমহাদেশে হলুদ শুধু এক ধরণের মশলা বা খাবারে রঙ আনার উপকরণই নয়, এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অনেক বড় এক অংশ জুড়ে রয়েছে হলুদ। এখনো বিয়ের আগে বর-কনেকে হলুদ বাটা লাগিয়ে গোসল করানো হয়। কাচা হলুদে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক সুন্দর করে।
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ ভারতে নবান্ন উৎসব পোঙ্গাল পালিত হয়। সেদিন গেরস্থের বাড়িতে চুলায় দুধের হাঁড়িতে হলুদের পাতা বেঁধে ফোটানো হয়। গেরস্থের বাড়িতে যেন সারাবছর গোলাভরা ফসল থাকে, সেই প্রার্থনা করা হয়।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও হলুদের দেখা পাওয়া যায়। কাটা-ছেঁড়া বা হাতে পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানো তো ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি আমরা। আবার বন্ধ নাক, ঠান্ডা-কাশিতে কাঁচা হলুদ পানিতে সেদ্ধ করে ভাপ নিলে উপকার হয়।
সুতরাং এরপর থেকে যখন রান্নায় হলুদ দেবেন, এর রাজকীয় প্রোফাইলটা যদি একটু মনে করে নিতে পারেন- ভালো লাগবে। তরকারিতে শুধু সোনালি রঙ আনাই এর কাজ নয়। বরং দিনের পর দিন আমাদের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে চলেছে সে। আমরা হয়তো টের পাচ্ছি না, কিন্তু পশ্চিমারা কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলেছে এই 'সুপার ফুড' এর জাদু।
সূত্র: বিবিসি