একবার পায় তারে
১৭ জুলাই শুক্রবার। না বুধবার?
একটা সতেরো জুলাই বুধবার ছিলো। তাহলে যে কোন ১৭ জুলাই-ই বুধবার। তাহলে গতকাল মানে মঙ্গলবার আমি দুটো বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছি। "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ'' এবং ' — হিমুর দ্বিতীয় প্রহর।'
রাতে টেক্সট করেছিলাম স্যার'কে, 'স্যার, আদাব। আমি কি কাল আসবো ? '
আজ ঘুম থেকে উঠে দেখি স্যার রিপ্লাই দিয়েছেন রাত তিনটায়, 'ইয়েস ইওর টাকিলা ইজ রেডি।'
টাকিলা ইজ রেডি !
স্যার টাকিলা পছন্দ করেন না। আমার জন্য রাখেন।
আমি স্যারের কাছে যাই সন্ধ্যায়। সকালে গেছি দুই–একবার।
সকালে স্যার লিখেন। এজন্য বিরক্ত করতে যাই না সহজে।
টাকিলা রঙের আকাশ ছিলো সারাদিন। মাথায় নিয়ে স্যারের ফ্ল্যাটে গেছি সন্ধ্যায়।
ইয়েস, টাকিলা ইজ রেডি।
স্যার প্রচ্ছদ দেখলেন। পছন্দ করলেন। দুটো বইয়ের প্রচ্ছদের চারটা ডিজাইন করেছি। 'হিমুর দ্বিতীয় প্রহর' – এর অমনোনীত প্রচ্ছদটা স্যার মনোনীত করলেন 'ম্যাজিক মুনশি'র জন্য। নতুন বই।ছাপা হয়েছে এক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায়। মেলায় বই হবে।
আমি টাকিলা, স্যার শিভাস। কোন কথা থেকে কোন কথায় গেছি, আতকা ভেতরে যে কী দুঃখ উথলাল, মনে পড়লো এক অপমানের দিন।
ইন্ধন জোগানো অপমানের দিন। কী দুঃখের ! কী দুঃখের !
নিজে বলিনা, 'মিডিয়া' বলায়।
'স্যার আপনি একদিন আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করছেন। '
'তোমার সাথে ! প্রশ্ন-ই উঠে না !'
'দিন তারিখ বলবো? আমার মনে আছে। ১৭ জুলাই ৷ আপনি বার বার অ্যানয়েড শব্দটা বলতেছিলেন। আমি তখন অ্যানয়েড শব্দের অর্থই জানিনা। বাসায় গিয়া ডিকশনারিতে দেখি বিরক্ত। আমার কর্মকাণ্ডে আপনি বিরক্ত।'
আমি এত কথা বলি নাকি? সব দোষ টাকিলার। স্যার দেখি চুপ করে গেছেন। আমাকে দেখছেন। আমার ধরল ডরে।
খেপিয়ে দিলাম নাকি ? খেপে গেলে রণচণ্ডীর পিতামহ স্যার।
না, এখন খেপে গেলেন না। শান্ত গলায় বললেন, 'আমার মনে নাই। তবে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার আমি করতেই পারি।'
আমি তাকালাম।
হুমায়ুন আহমেদের চোখের লাবণ্য কজন দেখেছেন, যখন আমি লাবণ্য শব্দের উঃসমুখ জানি।
স্যারের কন্ঠস্বর কিছু আর্দ্র কি হলো ? বললেন, 'ইউ আর মাই সন আই হ্যাভ নেভার হ্যাড।'
অপমানের দিন এমন রঙিন হয়ে যায় ! অপমানের দিন ! কিছু ঘটেছিলো নাকি কোনোদিন ? আমার আর মনে থাকবে কেন ? ক্ষমা করে দিলাম গুপ্ত ইন্ধনদাতাদের। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
কিন্তু আজ ১৭ জুলাই ২০২০। আজ শুক্রবার নাকি বুধবার ?
টাকিলা ইজ রেডি। আমি স্যারের কাছে যাব সন্ধ্যায়।
কোন দুটো বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে যাবো ?
মায়া। সব। টাকিলা শিভাসের আজব সন্ধ্যাও। এসব ঘটে গেছে নাকি ঘটবে ? কী দরকার এতো ভাবন ঠাকুরগিরির ?
এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা।
আমি বলিনি, আইনস্টাইন বলেছেন। মুশকিল হলো সেই মায়া ধরার কোনো উপায় নেই। আমি আছি, থাকি মায়ায়। স্যারের বইয়ের প্রচ্ছদ বানাই এখনও।
স্যারকে টেক্সট দিই, স্যারের টেক্সট পাই,'ইওর টাকিলা ইজ রেডি।'
মায়ার ডিসেকশন করে আমি কী করব?
এখনও, কখনও কখনও আমি স্যারের কাছে যাই সন্ধ্যায়।