একজন মায়াস্বরীর আখ্যান
সত্যজিৎ রায়ের 'ভুতো' গল্পের কথা আপনাদের মনে আছে? ওই যে কথার ফোয়ারা বইয়ে দেয়া পাপেট ভুতো ও তার চালক নবীনের কথা। পাপেট ভুতো তার কথা মাধ্যমে সবাইকে যেভাবে আনন্দ দিতো, ঠিক সেভাবেই কথার কলকল ধ্বনিতে বাংলা মাতিয়ে রাখছে পাপেট গ্র্যানি। সে তার ইচ্ছেমতো কথা বলছে, সুযোগ পেলেই গান গাইছে আবার কেউ বুড়ো বললে বেজায় চটে যাচ্ছে।
পাপেট কথা বলতে পারে নাকি? এ আবার কেমন ধারার কথা! হ্যাঁ, এই পাপেট কিন্তু কথা বলতে পারে। এ আবার ব্যাটারি চালিত যেমন তেমন পাপেট নয়; ব্যাটারির সাহায্য ছাড়াই অনর্গল কথা বলে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। চমকে দিতে পারে সকলকে! 'জীবনের নিয়মে' চলতে থাকা জীবনকে একটু হাসি উপহার দিতে পারে। এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে বশ করতে পারে আবার এক লহমায় হাসি-আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারে।
কথা বলা পাপেটের এই কারসাজির পেছনকার গল্পের নাম হলো ভেন্ট্রিলোকুইজম। 'ভে-ন্ট্রি-লো-কুই-জম' শুনতে কেমন যেন শক্ত শক্ত শোনাচ্ছে, তাই না? ইংরেজিতে খটমট শব্দ হলেও ভেন্ট্রিলোকুইজমের বাংলা অর্থটা কিন্তু বেশ মিষ্টি। বাংলায় এর অর্থ মায়াস্বর। যিনি এই মায়াস্বরের চর্চা করেন তাকে বলা হয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বা মায়াস্বরী।
ল্যাটিন শব্দ ভেন্টার আর লোকুই থেকে ভেন্ট্রিলোকুইজমের উদ্ভব। ভেন্টার শব্দের অর্থ হলো উদর ও লোকুই মানে কথা বলা। অর্থাৎ ভেন্ট্রিলোকুইজম শব্দের মানে উদর বা পেট থেকে কথা বলা। হিব্রু বাইবেলের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রীক অনুবাদ সেপ্টুয়াজিন্ট বাইবেলে ভেন্ট্রিলোকুইস্টদের কথা বলা আছে। প্রাচীন গ্রীসে একে বলা হতো গ্যাস্ট্রোম্যান্সি যার অর্থ উদর থেকে ভবিষ্যতবাণী করা।
বিশ্বব্যাপী ভেন্ট্রিলোকুইজম কলার চর্চা বেশ পুরোনো হলেও বঙ্গদেশে কিন্তু এই চর্চা বেশি পুরোনো নয়। বাংলাদেশে ভেন্ট্রিলোকুইজমের চর্চা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মানসুরা মুবাশ্বিরা। সুনিপুণ দক্ষতায় মায়াস্বরকে ব্যবহার করে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি; সঙ্গে থাকা চরিত্রদের নিয়ে অনবরত দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিস্ময়।
যেভাবে শুরু হলো মানসুরার যাত্রা
'তখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। আমেরিকা'স গট ট্যালেন্ট নামের একটি শো ছিলো আমার অনেক প্রিয়। এখনো আমি সবসময় দেখি। সেখানে আমার সমবয়সী একটা মেয়ে আমেরিকা'স গট ট্যালেন্ট- ২০১৭ এর চ্যাম্পিয়ন হয়। অনেক ট্যালেন্টের মধ্যে একটা ইউনিক ট্যালেন্ট তার মধ্যে দেখলাম; মেয়েটি একটা পাপেট নিয়ে কথা বলছে। আমার সমবয়সী একটা মেয়ে পাপেট নিয়ে কথা বলছে, সেটা দেখে আমারও আগ্রহ বেড়ে যায়', সোৎসাহে বলেন মানসুরা।
২০১৭ সালের আমেরিকা'স গট ট্যালেন্টের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন ডার্সি লিন। ডার্সি লিন ও মানসুরা দুজনে সমবয়সী হওয়ায় মানসুরার মনে হতে থাকে, ডার্সি লিন যদি এই বয়সে পাপেট নিয়ে কথা বলতে পারে তাহলে চেষ্টা করলে তিনিও পারবেন। যেই কথা সেই কাজ; তখন পাপেট না থাকায় মানসুরার সেভাবে চর্চা শুরু হয়নি। কিন্তু আগ্রহ তুমুলে থাকায় নিয়মিত ডার্সি লিনের ভিডিও দেখতেন। একই ভিডিও একাধিকবার দেখে নিজে নিজেই কৌশল রপ্ত করার চেষ্টা করতেন।
পাপেট নিয়ে চর্চা শুরু করতেও অনেকটা সময় লাগে মানসুরার। ২০১৯ সালে যখন মানসুরার বাবার অফিসের কাজে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হয়, তখন বাবার গলা জড়িয়ে মেয়ে পাপেট নিয়ে আসার জন্য আবদার করে বসে। মেয়ের আবদার কী বাবা আর ফেলতে পারে! তার উপর মেয়ে বাংলাদেশে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এমন পাপেট কিনতে পারেনি।
ব্যাস, বাবাও দু'বার বিদেশ ঘুরে মেয়ের জন্য পাপেট নিয়ে আসেন। পাপেট পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় মানসুরা। কিন্তু এ যাত্রাতেও বাঁধ সাধে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর তখন আর চর্চায় ততটা গুরুত্ব দিতে পারেননি তিনি।
লকডাউনই যখন চর্চা শুরুর প্রথম বন্ধু
২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয় লকডাউন। অখণ্ড অবসরে মানসুরার মনে হলো এবার তিনি পুনরায় ভেন্ট্রিলোকুইজমের চর্চা শুরু করতে পারেন। শুরু হল কর্মযজ্ঞ; নানারকমের বই ও ইন্টারনেটই ছিলো মানসুরার ভেন্ট্রিলোকুইজম চর্চার প্রথম শিক্ষক। বই ও ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজে নিজে নোট করে কৌশল রপ্ত করেছেন তিনি।
পুরো লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজে যেমন নানাবিধ কৌশল শিখেছেন, তেমনি ইউটিউবে ভিডিও বানিয়েছেন। এই লকডাউনের মধ্যেই তিনি অংশ নিয়েছেন মাল্টি ট্যালেন্ট হান্ট শো 'জিপিএইচ ইস্পাত- অনন্য প্রতিভা' প্রতিযোগিতায়। হাজার হাজার প্রতিযোগীকে হারিয়ে হয়ে যান চ্যাম্পিয়ন। সেই থেকেই মানসুরার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে যায়। বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া গ্র্যানিকে নিয়ে নতুন পথচলা শুরু হয় মানসুরার।
ছোটবেলার খেলনা পুতুল যখন প্রথম পাপেট!
মানসুরার জনপ্রিয়তার পেছনে প্রধান পাপেট গ্র্যানি হলেও, গ্র্যানি কিন্তু মানসুরার প্রথম পাপেট নয়। শুরুতে ছোটবেলার খেলনা পুতুলের মুখ কেটে নিজেই চেষ্টা করতেন পাপেট বানানোর। সেই পুতুলগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট বানিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু আসল পাপেট হিসেবে গ্র্যানিই প্রথম, যাকে মানসুরার বাবা বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন।
গ্র্যানি ছাড়াও মানসুরা আরো তিনটি পাপেটের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়েছেন। তাদের নাম লিলিয়ানা, টিটো ও ত্রুডি। মোট চারজন চরিত্রকে নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন মানসুরা।
ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হয়ে ভিন্নভাবে পুতুলকে দিয়ে কথা বলানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। একজন মানুষের পক্ষে সেটা করাও যারপরণাই কঠিন। প্রতিটি চরিত্রের জন্য স্বরের বদল ঘটিয়ে কী করে তিনি কথা বলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'প্রত্যেকটা পাপেটের জন্য কথা বলার বাচনভঙ্গি আলাদা করতে হচ্ছে, তাদের চরিত্র অনুসারে কথার স্টাইল বদলাতে হচ্ছে এবং সবশেষে চরিত্র অনুসারে কণ্ঠস্বর বদলাতে হচ্ছে। তিনটা কাজ মিলিয়ে এখনো চর্চার মধ্যে আছি। এখনো পুরোপুরি রপ্ত করে উঠতে পারিনি। চর্চার মাধ্যমে যতটা উন্নত করা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছি'।
মানসুরার মায়াস্বর চর্চার কৌশল
ভেন্ট্রিলোকুইজম বা মায়াস্বরের ইচ্ছা স্কুলজীবন থেকে শুরু হলেও পাপেট নিয়ে চর্চা করছেন এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে। তবে এইটুকু চর্চার মাধ্যমেই তিনি দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছেন এমনটা মানতে নারাজ মানসুরা। প্রায় তিন চার বছর ধরে চর্চার পর তিনি মুখ বন্ধ করে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্রথম দিকে পাপেট ছাড়াই মুখ বন্ধ করে কথা বলার চেষ্টা চালাতেন তিনি। মুখ বন্ধ করে কথা বলে বন্ধুদের চমকে দেয়ার চেষ্টা করতেন তখন। বন্ধুরাও তাতে মজা পেতো খুব।
চর্চার জন্য প্রথমে প্রাথমিক কৌশল হিসেবে প, ফ, ব, ভ, ম ছাড়া যে বর্ণগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করে দাঁত চেপে কথা বলার চেষ্টা করতেন মানসুরা। প বর্গের বর্ণ হিসেবে প, ফ, ব, ভ, ম ব্যবহার করে কথা বললে ঠোঁট নাড়ানো লাগতো বেশি। এই কয়েকটা অক্ষর না থাকলে যেকোনো কথাই ঠোঁট ফাঁকা করে অথচ না নাড়িয়ে বলা যায়। তাই প, ফ, ব, ভ, ম এর জায়গায় ক, খ, গ, ঘ, ঙ এই বর্ণগুলো ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা করে চর্চা চালিয়ে যেতেন।
গ্র্যানিকে নিয়ে প্রথম মঞ্চে উঠলেন চর্চা ছাড়াই
গ্র্যানিকে হাতে পাওয়ার পর ক্লাস টেনে পড়াকালীন প্রথম স্কুলের মঞ্চে উঠেন মানসুরা। সদ্য পাপেট হাতে পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি নিজেও। তাই সবাইকে এই চমৎকার দেখাবেন এমন বাসনাও ছিলো মনে। তাই খুব বেশি চর্চা ছাড়াই গ্র্যানিকে নিয়ে মঞ্চে ওঠার আকুতি জানান শিক্ষকের কাছে। এমনিতেই স্কুলের প্রিয়মুখ মানসুরা; নাচ, গান সবকিছুর মাধ্যমে মাতিয়ে রাখার কারণে শিক্ষকও গ্র্যানিকে নিয়ে মানসুরাকে মঞ্চে উঠতে দিলেন।
'তখন আমার টিচার আমাকে খুবই বোরিং স্ক্রিপ্ট লিখে দেন। আমিও সেই স্ক্রিপ্ট মুখস্ত করে স্টেজে উঠে গেলাম। স্কুলের বাচ্চারা পাপেট দেখে খুবই মজা পেয়েছিলো। ওটা দেখে আমারও খুব খুশি লাগলো। তখন মনে হলো এবার তো চেষ্টা করাই যায়। তখন নার্ভাস ছিলাম কিছুটা, কিন্তু বাচ্চাদের সামনে ছিলাম বলে মজাও পেয়েছিলাম অনেক', বলছিলেন মানসুরা।
বাচ্চাদের সামনে বা রিয়েলিটি শোতে দর্শকদের থেকে মানসুরা ভালোই সাড়া পেয়েছেন। তবে অফিসিয়াল কোনো অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে ভালোমতো প্রতিক্রিয়া অনেকেই দেখাতে চান না।
শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া মানসুরা ভেন্ট্রিলোকুইজমের বাইরে পড়াশোনার পাশাপাশি নৃত্যকলাতেও সমানভাবে পারদর্শী। ছোটবেলা থেকেই শিখেছেন কত্থক। নাচেও অর্জন অনেক মানসুরার। থানা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা, কলেজের বার্ষিক প্রতিযোগিতা সব জায়গাতেই সেরাদের সেরা হয়ে সফলতা মুকুট পরেছেন তিনি।
গ্র্যানির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন 'জেনারেশন গ্যাপ'
মানসুরা যে কথাগুলো গ্র্যানিকে দিয়ে বলান, তার পেছনেও লম্বা সময় ব্যয় করতে হয় তাকে। যেকোনো প্রোগ্রাম বা ভিডিওর স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজে তাকে অনেককিছু লক্ষ রাখতে হয়। মানসুরা সবসময়ই গ্র্যানিকে দিয়ে বলানো কথাগুলোর মাধ্যমে কিছু না কিছু বার্তা দেওয়া চেষ্টা করেন। অনন্য প্রতিভাতে অংশগ্রহণকালে প্রত্যেক পারফরম্যান্সে একেকটা থিম রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
গ্রামের প্রতি মায়া, দাদু-নানুদের প্রতি মায়া, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, শিশুদের প্রযুক্তি নির্ভরতা এই জাতীয় বিষয়ের উপর স্ক্রিপ্ট তৈরি করে বেশি কাজ করেছেন তিনি। আর গ্র্যানিই যেহেতু মানসুরার প্রধান পাপেট, তাই গ্র্যানির মাধ্যমে 'জেনারেশন গ্যাপ' এর বিষয়টি বেশি আনতে পেরেছেন তিনি।
সিংহভাগ সময়ে একা হাতেই স্ক্রিপ্টিং এর কাজ করতে হয় মানসুরাকে। তাই স্ক্রিপ্ট লেখার সময় অনেক মনোযোগী হতে হয় তাকে।
'একটা কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলে সেটা তো ফেরত নেওয়ার উপায় নেই। তাই মঞ্চে আমি কী বলবো এবং আমার পাপেটরা কী বলবে সবকিছুই একদম ঠিক করে রাখতে হয়। তবে পাপেট দিয়ে স্ক্রিপ্টিং করার সুবিধা আছে। আমি যদি পাপেট দিয়ে উল্টা-পাল্টা কিছুও বলি সেটা অনেকে মজা হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু একই কথা যদি আমি বলতাম তাহলে হয়তো অনেকে মনে কষ্ট পেতো'।
ভবিষ্যতেও আরো মজাদারভাবে সচেতনতামূলক ভিডিও বানানে চান তিনি। সবার কাছে পৌঁছে যাবে এমন বার্তা নিয়ে তিনি ভবিষ্যতে কাজ করতে চান।
'দেশেই তৈরি হোক ভেন্ট্রিলোকুইজমের পাপেট'
'দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে কোথায় ভেন্ট্রিলোকুইজমের পাপেট পাওয়া যায় আমি ঠিক জানি না। যে কয়টা জায়গায় বাংলাদেশে পাপেট্রি করা হয় জানতাম, সব জায়গাতেই যোগাযোগ করেছি। ওখানে সব পাপেটগুলো হাফ পাপেট বানানো হয়। মানে ওদের পা থাকে না, জাস্ট পাপেট শো করার জন্য যেসব পাপেট হয় সেরকম বানায়', হতাশার সুরে বলছিলেন মানসুরা।
বাংলাদেশে ভেন্ট্রিলোকুইজমের পাপেট বানানোর জন্য অর্ডার দেওয়া হলেও সেখানে খরচ অনেক বেশি পড়ে, যা মানসুরার পক্ষে বহন করা কষ্টকর। তাই এখন পর্যন্ত মানসুরার সংগ্রহে থাকা পাপেটগুলো দেশের বাহির থেকেই আনতে হয়েছে। ভারত থেকে আনতে হলে খরচ তুলনামূলক কম পড়ে। এখন পর্যন্ত যদিও ভারত থেকে পাপেট কিনে আনেননি; তবে অদূর ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়লে প্রতিবেশি দেশটি থেকেও পাপেট সংগ্রহ করতে চান মানসুরা।
দাদু-নানুরা গ্র্যানিকে দেখে খুশি হন সবচেয়ে বেশি
মানসুরা ও গ্র্যানিকে টেলিভিশনে দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হন দাদু-নানুসহ পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা। কোথাও একটা গিয়ে গ্র্যানির সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পাওয়ায় তারা মজাও পান খুব বেশি।
'পাপেট নিয়ে যখন দাদু-নানুদের সামনে শো দেখাই, তারাও বাচ্চাদের মতো হয়ে যান', হেসে বললেন মানসুরা। তাছাড়া মানসুরার ভাই বোনেরা, বন্ধুরাও মানসুরাকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়। মানসুরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে আটকে যান, বা স্ক্রিপ্ট লেখার সময় যদি কোনো সমস্যায় পড়েন তখন মানসুরাকে সাহায্য করার জন্য এক পায়ে খাঁড়া হয়ে যান মানসুরার বন্ধু ও ভাইবোনেরা।
মানসুরার পরিবারও এ ব্যাপারে বেশ সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত উৎসাহ, সাহায্য সবকিছুই মানসুরা পরিবার থেকে পান। এমনকি ইউটিউবে ভিডিও বানানোর সময় প্রথমদিকে মানসুরার ভাই ক্যামেরার পেছনে থাকতেন।
২০২২ সালের শুরুতে গ্র্যানি আর মানসুরার গাওয়া এই মায়াবী চাঁদের রাতে গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এ নিয়ে মানসুরা হেসে হেসে বলছিলেন, 'আমি ভিডিও আপলোড দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি এত এত কমেন্ট। এমন কিছু মানুষ ভিডিওটা শেয়ার করেছে, তা দেখে আমি অনেক খুশি ছিলাম। সব রকমের কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দুদিন সময় লেগেছে'।
কেউ যদি ভেন্ট্রিলোকুইজম শিখতে চান, তাদের জন্য মানসুরার কী কী উপদেশ থাকবে প্রশ্নের উত্তরে মানসুরা জানান, 'প্রথমত, অনেক বেশি আগ্রহ থাকতে হবে। একদিন চেষ্টা করে ছেড়ে দিলে হবে না। দ্বিতীয়ত, ভেন্ট্রিলোকুইজম কারো কাছ থেকে শেখার চাইতে বা ইন্টারনেট দেখে শেখার চাইতে নিজের চর্চা করা বেশি জরুরি'।
রোল মডেল ডার্সি লিনকে দেখে মানসুরারও ইচ্ছা শিশু হাসপাতালে গিয়ে ভেন্ট্রিলোকুইজমের শো করে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো।
'যেসব শিশুরা বাহিরে আসতে পারে না বা তাদের খেলার বয়সেও তারা খেলতে পারে না, তাদেরকে আনন্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাই'।