হরর মুভি দেখা কেন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
লকডাউনের উদ্বিগ্ন আর একাকী দিনগুলোতে মানুষের হরর বা ভৌতিক সিনেমা দেখার প্রবণতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি স্টিভেন সোডারবার্গ পরিচালিত ২০১১ সালের প্যান্ডেমিক থ্রিলার ছবি 'কনটাজিয়ন' ছিল ২০২০ সালের সবচেয়ে বেশি দেখা মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা নিয়ে বেশ কিছু সংবাদও দেখা গেছে। মানুষ যখন ইতোমধ্যে এক ভীতিকর দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছে, তখন কেনই বা তারা আবার সেই ভয়ের বিষয়গুলোই ঘাটছে?
এখানে অন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। অনেকের পরীক্ষা ভীতি আছে। কিন্তু সেই ভীতি কাটাতে আমরা কখনো নিজেদের বা কখনো অন্যদের বলি যে এই ভয় কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর মুখোমুখি হওয়া। ভয় এড়িয়ে না গিয়ে তাকে জয় করতে হবে।
হরর ফিকশনগুলোও সম্ভবত সেভাবেই আমাদের মহামারির বিরুদ্ধে মানসিক প্রস্তুতি তৈরিতে সাহায্য করছে। আগামী দিনগুলোর জন্য মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ করেছে।
তবে এর বাইরেও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
ধরুন আপনি একটি হরর মুভি দেখছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। ভয়ে বুক দুরুদুরু কাঁপছেও। কখন কী হয় তা নিয়ে ভীষণ ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আপনার এই মানসিক চাপটা কিন্তু কৃত্রিম। আপনি জানেন এর পুরোটাই বানোয়াট এবং চাইলেই স্ক্রিন বন্ধ করে দিয়ে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাস্তব জীবনের দুঃস্বপ্নগুলো থেকে কিন্তু চাইলেই জেগে ওঠা যায় না।
'দ্য রিং' দেখার সময় সত্যি সত্যিই মেয়েটা হামাগুড়ি দিয়ে স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আপনি হয়তো ভয় পাচ্ছেন। আপনার নার্ভাস সিস্টেম এক 'ফাইট অর ফ্লাইট' প্রস্তুতিও নিচ্ছে। হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপও বেড়ে গেছে। কিন্তু মনের গহীনে কোনো এক জায়গায় আপনি জানেন যে আসলেই কেউ স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে আসবে না। এটা সম্ভব নয়।
আপনার অবচেতন মন জানে আপনি লিভিং রুমে নিরাপদেই আছেন। এখন এই উত্তেজনা প্রশমণ করবে আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। রক্তচাপ, হার্টবিট কমানোর পাশাপাশি শরীরকে রিল্যাক্সড হতে সাহায্য করবে। আর সেই সঙ্গে আপনি পাবেন একটি চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে পারার অনুভূতি ও উদ্দীপনা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাতেও একই তথ্য ওঠে এসেছে। গবেষণায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারীকে তাদের পছন্দের শো এবং মহামারিকালে তাদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, 'স্বেচ্ছায় হরর বিনোদন বেছে নিলে ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে পালানোর প্রবণতা কমে। নিরাপদ পরিবেশে কৃত্রিম ভয় তৈরির মাধ্যমে হরর ফিকশন দর্শকদের আবেগ ও মানসিক স্থিতি নিয়ন্ত্রণ চর্চার সুযোগ করে দেয়। ফলস্বরূপ মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়তে দেখা যায়।'
অন্যভাবে বললে, হরর ছবি ভয় তৈরি করে না, বরং ভয় প্রশমিত করে।
- সূত্র: ক্রাইম রিডস