আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয়: ভবিষ্যতের কন্টাক্ট লেন্স রোগ নির্ণয় করবে, তুলবে ছবিও
কন্টাক্ট লেন্সে অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকবে। ওই লেন্স ছবি-ভিডিও গ্রহণ করতে পারবে, রোগ পরীক্ষা করতে পারবে এমনটি রোগের চিকিৎসাও করতে পারবে। কয়েক বছর আগেও এমন চিন্তা ছিল কল্পকাহিনীর মতো। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমন বুদ্ধিমান কন্টাক্ট লেন্স তৈরির কাজে অনেকটাই এগিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল পাইস।
মোজো ভিশন নামক একটি মার্কিন কোম্পানি ২০১৫ সাল থেকে স্মার্ট কন্টাক্ট লেন্সের প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে এটি অগমেন্টেড রিয়্যালিটিভিত্তিক লেন্স নিয়ে প্রকল্প শুরু করেছে। এ লেন্সের ভেতরে থাকা বালিকণার মতো ছোটছোট মাইক্রোএলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে পরিবেশের সব ধরনের তথ্য জানা যাবে।
'শুনতে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি শোনালেও ২০ বছর আগেও আমরা এখনকার অনেক প্রযুক্তির কথা চিন্তাও করতে পারতাম না,' বলেন মোজো ভিশন প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত অ্যানা বেলেন সিসনেরোস দেল রিও।
তবে ভিন্নমতও আছে এ বিষয়ে। স্পেনের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল এলিজ মনে করেন এ ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স স্মার্টফোনের মতো দৈনন্দিন ব্যবহারের সাধারণ ডিভাইসের সমতুল্য হয়ে উঠবে না। এর বিশেষ কারণ হিসেবে তিনি এগুলোর বেশি দামের কথা উল্লেখ করেন।
ম্যাজিক লিপ নামক আরেকটি কোম্পানিও চাচ্ছে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি কনট্যাক্ট লেন্স তৈরি করতে। কয়েকবছর আগে ভিডিও রেকর্ড করার লেন্সের পেটেন্ট নিয়েছে সনি। স্যামসাংও ক্যামেরাসংযুক্ত এমন এক ধরনের লেন্সের পেটেন্ট গ্রহণ করেছে যেগুলো ব্যবহারকারীর চোখে ছবির বিচ্ছুরণ করাতে পারে।
কিছু গবেষক চেষ্টা করছেন এমন রোবোটিক লেন্স তৈরি করতে যেগুলো চোখের পাতা ফেলার মাধ্যমে জুম ইন বা আউট করতে পারে। অন্যরা চাচ্ছেন নাইট ভিশন প্রযুক্তির লেন্স তৈরি করতে যেগুলো বিশেষ করে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য দারুণ কার্যকরী হবে।
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের লেন্স তৈরিতে অস্বচ্ছ ও ভঙ্গুর উপাদান ব্যবহার করে। এগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করতে পারে। তাই বিভিন্ন প্রাযুক্তিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি কন্টাক্ট লেন্স নির্মাতাদের চোখের স্বাস্থ্যের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞানী; দু'পক্ষই কন্টাক্ট লেন্সের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্ভবনাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস টেকনোলজিস নামক আরেকটি জার্নালে প্রকাশিত রিভিউতে জানানো হয়েছে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে অনেক রোগ ও শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ভবিষ্যতের কন্টাক্ট লেন্স চোখের চাপ পর্যবেক্ষণ, গ্লুকোমা পরীক্ষা ইত্যাদি করতে পারবে। এগুলো হয়তো হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, ও ডায়াবেটিসও আগে থেকে নির্ণয় করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের লেন্স তৈরি করতে গুগল ও মাইক্রোসফট কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে।
তবে এসব লেন্সের একটি সীমাবদ্ধতা হলো এগুলো কেবল চোখের একক বায়োমার্কার, যেমন গ্লুকোজ বা ল্যাকটিক এসিড শনাক্ত করতে পারে। যদি ভবিষ্যতের কন্টাক্ট লেন্সগুলো একাধিক জৈবরাসায়নিক উপাদান চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে সেগুলো শক্তিশালী বায়োমেডিকেল টুল হিসেবেও কাজ করতে পারবে।
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে ঔষধ পরিবহন
চোখের কিছু রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে স্মার্ট কন্টাক্ট লেন্স। এগুলো দিয়ে ঔষধের প্রতি চোখের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ, অস্ত্রোপচার ব্যবস্থার মূল্যায়ন ইত্যাদি কাজ করা সম্ভব। এমনকি চোখের ড্রপের সূক্ষ্ম পরিমাণও কন্টাক্ট লেন্সের মাধ্যমে ঠিক করে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন সিসনেরোস।
আগামী দশকগুলোতে কন্টাক্ট লেন্সে কী পরিমাণ প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন দেখা যাবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু লেন্সের প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের সম্ভাব্যতা সীমাহীন।