ই-বুকের চেয়ে বেশিদিন টিকে ছাপা বই
শতবর্ষ পুরোনো বই কখনো পড়েছেন? লাইব্রেরিতে গিয়ে হয়তো এরকম পুরোনো কপি হাতে পড়েছে। আবার দাদার আমলের দুর্লভ বইগুলোও হয়তো বাড়িতে যত্ন করে রেখে দেওয়া আছে। এমন বই পড়ার ব্যাপারই আলাদা। শত বছরে শত হাত ঘুরে আসা এসব বইয়ের অ্যান্টিক মূল্যের আলাদা হিসাব তো আছেই, এর বাইরে একবার ভেবে দেখুন এই বইগুলো কতখানি টেকসই।
এবার মনে করে দেখুন মাত্র ১০ বছর আগে কেনা কোনো ই-বই কি এখন আবার পড়তে পারবেন? সম্ভাবনা কম। হয়তো বহু আগেই ডিলিট করেছেন। নয়তো সেটার অ্যাক্সেস আর নেই।
সময় সঙ্গে বাড়ছে ডিজিটালাইজেশন। আমরা ভাবছি যেকোনো জিনিস সংগ্রহ এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। কথা অবশ্য ভুল নয়। কিন্তু ছাপা কোনো বইয়ের থেকে ই-বইয়ের স্থায়িত্ব অনেক কম।
যারা ডিজিটাল বইয়ের লাইব্রেরি চালান তারা জানেন যে এই বইগুলো সংরক্ষণ করতে নিয়মিত রিপ্রসেস, রিফরমেট, রি-ইনভাইগোরেট করা প্রয়োজন। তা না হলে সেগুলো আর পড়ার উপযোগী থাকে না বা পড়া যায় না।
বড় বড় প্রকাশকদের দাবী ইলেকট্রনিক বই কালোত্তীর্ণ হয়ে টিকে থাকবে, এর নষ্ট হওয়ার ভয় কম। কিন্তু এটা একদমই সত্যি নয়। নতুন অপটিকাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন প্রযুক্তি আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্টারনেট আর্কাইভ আগের সবকিছু প্রসেস ও রিপ্রসেস করে। টেক্সট বোঝার নতুন প্রযুক্তি থেকে হয় নতুন বিশ্লেষণ। এভাবেই ফরম্যাট বদলে ইপাব ১ থেকে ইপাব ২ আবার সেখান থেকে আসে ইপাব ৩, যা চলতেই থাকবে। এর জন্য কয়েক হাজার কম্পিউটারের কয়েক মাস সময় লাগে। আর প্রোগ্রামারের লেগে যায় কয়েক বছর।
এছাড়া যে ডিজিটাল মাধ্যম তারা দখল করে থাকে সেটিও পরিবর্তিত হয়। যেমন ডিজিটাল লিনিয়ার টেপ থেকে পাটা হার্ড ড্রাইভ। সেখান থেকে সাটা হার্ড ড্রাইভ, আবার সাটা থেকে এসএসডি'স। নিয়মিত এগুলা হালনাগাদ করা না হলে ডিজিটাল বই আর পাঠোপযোগী থাকে না।
এরপর আছে ক্যাটালগিং ও মেটাডেটা। ডিজিটাল পাঠকদের প্রত্যাশা উত্তরোত্তর বাড়ছে বই কমছে না। তাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে বইও চলবে না। এটা যেমন চলমান, তেমনই ব্যয়বহুল।
আমাদের ছাপা বইগুলো শতবর্ষ পার করেও লাইব্রেরির শেলফে রয়ে গেছে। পাতা হলদে হয়ে বাঁধাইটা ঢিলা হয়ে গেলেও এখনো পড়ার উপযোগী আছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই বইগুলো টিকে আছে। স্রেফ পোকা বা ইঁদুরে যেন না কাটে বা ভিজে স্যাঁতসেতে না হয়ে যায় সেগুলো খেয়াল রাখলেই হলো। কিন্তু ডিজিটাল বই যদি এভাবে ফেলে রাখা হয় তাহলে ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে সেগুলো বড়জোর এক দশক টিকবে।
আমাদের ডিজিটাল বইয়ের সংরক্ষণাগারকেও আরও টেকসই করতে হলে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তিন আবশ্যক। এরজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশকের সহায়তা যেমন প্রয়োজন তেমনই তহবিল, আইনি ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্যও প্রয়োজন।
প্রথম বিষয় হলো ডিজিটাল নথি সংরক্ষণের জটিলতার বিষয়টি বুঝতে পারা ও এর স্বীকৃতি প্রদান। এরপর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা ও দাতব্য সংস্থার সহায়তায় ডিজিটাল বই ও নথি সংরক্ষণ কাজকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। তাহলেই এর সংরক্ষণ সম্ভব হবে। তা না হলে ছাপা বইয়ের আগেই ডিজিটালি প্রকাশিত বইগুলো বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।