ট্রিপ অ্যাকসেপ্ট করে পরে আর আসছেন না কেন রাইডাররা?
একটা সময় ছিল, যখন মিটার মেনে ভাড়া নেওয়ার জন্য অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে ঝগড়া করতে হতো ঢাকার যাত্রীদের। এখন অবশ্য যাত্রীরা আর মিটার নিয়ে মাথা ঘামান না। তারা জানেন, মিটার মেনে ভাড়া দিয়ে চলাচল করা অসম্ভব। অটোরিকশাগুলো নিয়মনীতি মেনে চলছে কি না, পুলিশও এখন আর তা খতিয়ে দেখে না।
পাঠাও ও উবারের মতো রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী বেসরকারি কোম্পানিগুলোও সম্ভবত এই পথেই হাঁটছে। অনেক রাইডারই আজকাল অ্যাপে কল গ্রহণ করছেন, কিন্তু পরে আর আসছেন না। রাইডও ক্যান্সেল করেন না তারা। এতে ট্রিপ দিতে ইচ্ছুক অন্য রাইডাররাও কল গ্রহণ করতে পারছেন না। শেষতক যাত্রী বাধ্য হয়েই অ্যাপের বদলে ওই প্রথম ড্রাইভারের সঙ্গে আলাদাভাবে দরকষাকষি করে রাইড নিচ্ছেন, অথবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর নিজেই রাইড ক্যান্সেল করে দিয়ে রাস্তা থেকে অন্য গাড়িতে 'খেপ'-এ যাচ্ছেন। এরকম অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সবগুলো প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহারকারীরা এখন এই সমস্যায় পড়ছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা আশিকুর রহমান নিয়মিত পাঠাও ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, 'কয়েক মাস আগে আমি পাঠাও বাইক সার্ভিসে একটা রাইড রিকোয়েস্ট করেছিলাম। একজন রাইডার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলেন, কিন্তু রাইড কনফার্ম করার জন্য আমাকে কল করলেন না। এই কাজটা তারা প্রায়ই করেন। তাই আমিই তাকে কল দিলাম, কিন্তু দেখা গেল তার যাওয়ার ইচ্ছা নেই।'
আশিক বলীন, 'প্রথমে মনে হয়েছিল এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এখন আমার আর তা মনে হয় না। আজকাল প্রায়ই এরকম ঘটনার মুখোমুখি হই। আরেকদিন একজন রাইডার অ্যাপে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলেন, কিন্তু আমাকে কল করলেন না। তারপর ম্যাপে দেখলাম তার বাইক আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।'
এখন সমস্যা হচ্ছে, একজন ব্যবহারকারীকে যদি রাইড বাতিল করতে হয়, তাহলে এর জন্য অ্যাপ তাকে জরিমানা করতে পারে।
উবারের কার ব্যবহারকারীরাও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
অনেক রাইডারই শুধু 'খেপে' যেতে আগ্রহী—অর্থাৎ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে ভাড়া ঠিক করে রাইড দেন তারা। এর ফলে প্ল্যাটফর্মকে এড়িয়ে যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারেন চালকরা।
খেপ এতটাই নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে যে, পাঠাও রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবহারকারীদের এতে নিরুৎসাহিত করেছে। খেপ রাইড ব্যবহারকারীদের হেয়ও করেছে। তবে নতুন এই পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই খারাপ হয়ে থাকা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। এই রাইডাররা এখন খোদ অ্যাপগুলোকেই টার্গেট করছেন। ফলে ব্যবহারকারীরা অনানুষ্ঠানিক চুক্তিতে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাইডাররা প্রতিষ্ঠিত সিস্টেম লঙ্ঘনের কোনো ব্যাখ্যা দেননি। ট্রিপ নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও কেন অ্যাপে কল গ্রহণ করেন—এ প্রশ্নের জবাবে কেউ কেউ শুধু বলেন, যাত্রী যে গন্তব্যে যাবেন তারা সেদিকে যাবেন না। একাধিক রাইডার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হুট করে ফোনকল কেটে দেন।
অন্যদিকে এখনও সিস্টেম মেনে চলা রাইডাররা জানান, নিয়ম না মানা রাইডারদের কারণে তাদের যাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঠাও ও উবার কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই সমস্যা মোকাবিলায় তারা ক্রমাগত কাজ করছে।
পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অফলাইন ট্রিপ—সেটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরকষাকষির মাধ্যমেই হোক কি অ্যাপে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে পরবর্তীতে তা বাতিল করে অফলাইনে রাইড করার মাধ্যমে হোক—এটি রাইডার ও ব্যবহারকারী উভয়ের নিরাপত্তাকেই মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।'
ফাহিম আরও বলেন, 'পাঠাওয়ের উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ সক্ষমতা প্ল্যাটফর্মটিতে সন্দেহজনক বা জালিয়াতিমূলক কার্যকলাপ শনাক্ত করতে পারে। অফলাইনে রাইড দেওয়ার উদ্দেশ্য রিকোয়েস্ট বাতিল করা হলে তা-ও শনাক্ত করতে পারে। এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা সতর্কতা ও স্থগিতাদেশসহ বিভিন্ন সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিই।'
পাঠাওয়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে উবারও বলেছে যে তারা প্ল্যাটফর্মের বাইরের ট্রিপগুলোকে দৃঢ়ভাবে নিরুৎসাহিত করে, কারণ এতে রাইডার বা চালক কারোরই কোনো জবাবদিহি বা নিরাপত্তা সহায়তা থাকে না।
টিবিএসের প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে উবারের মুখপাত্র বলেন, 'অফলাইনে নেওয়া ট্রিপগুলো জিপিএসে থাকে না। তাই [এসব ট্রিপ] ট্র্যাক করা যায় না। অফলাইন ট্রিপে রাইডার ও চালকরা উবার অ্যাপে হোস্ট করা কোনো নিরাপত্তা ফিচার ব্যবহার কিংবা উবারের নিরাপত্তা সহায়তা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না।
'এছাড়া বুকিংয়ের সময় রাইডাররা চালকের পরিচয় [নাম, ছবি, রেটিং ইত্যাদি] দেখতে পারেন না। রাইডার যদি পুলিশের কাছে ট্রিপ সম্পর্কে রিপোর্ট করার প্রয়োজন বোধ করেন, তাহলে তারা চালকের নাম ও তার ছবির মতো মৌলিক তথ্যগুলো পাবেন না।'
উবারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অফলাইন ট্রিপ দেওয়ার আরেকটি অসুবিধা হলো, এতে চালক বার রাইডারদের কেউই বিমার আওতায় আসেন না। এতে দুই পক্ষই সমস্যায় পড়েন।