সবার আগে নববর্ষ উদযাপন করবে কোন দেশ? বাংলাদেশ? সবচেয়ে পিছিয়ে কারা?
২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সারা বিশ্বের মানুষ। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে পালিত হবে এই নববর্ষ। এই ক্যালেন্ডার অনুসারে বিশ্বের প্রায় সব দেশই ৩৬৪ বা ৩৬৫ দিন পরপর নববর্ষ উদযাপন করে।
সেই অনুযায়ী ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ মধ্যরাতের আগে কাউন্টডাউন শুরু হবে সারা বিশ্বে। তবে সব জায়গায় যে একইসঙ্গে নতুন বছর শুরু হবে তা নয়।
এর কারণ আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। এই তারিখ রেখা মেনেই প্রতিদিনের আনুষ্ঠানিক সূচনা ও সমাপ্তি ঘটে।
১৮৮৪ সালে এক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও রেলব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় রাখতে তারিখরেখা চালু করা হয়। কাল্পনিক এই রেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। রেখাটি মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে ১৮০তম দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে।
যেসব দেশের ওপর দিয়ে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা গেছে তারা কোন টাইম জোনে থাকতে চায় সেই সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। আর সেই অনুযায়ীই কার ঘড়িতে সবার আগে ১২টা বাজে তা-ও নির্ধারিত হয়ে থাকে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতে কোন অঞ্চলে সবার আগে ও কোন অঞ্চলে সবার শেষে নববর্ষ উদযাপিত হবে তা দেখে নেওয়া যাক।
সবার আগে উদযাপন করবে যারা
বিশ্বে সর্বপ্রথম যে অঞ্চল নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে তা হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাতির অন্তর্ভুক্ত কিরিতিমাতি ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় জনবসতিহীন আরও ১০ প্রবালপ্রাচীর।
মজার বিষয় হলো হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রায় সরাসরি দক্ষিণে হওয়া সত্ত্বেও দুই অঞ্চলে পুরো একদিনের তফাতে নববর্ষ উদযাপিত হয়।
এই অবস্থা অবশ্য বেশিদিন আগে থেকে চলছে না। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা একসময় কিরিবাতির ওপর দিয়েই যেত। অর্থাৎ রেখার পূর্ব ও পশ্চিমের দ্বীপগুলোকে ভিন্ন দিনে নতুন বছর উদযাপন করতে হতো।
তবে ১৯৯৫ সালে কিরিবাতি রেখাটি প্রতিস্থাপন করে, যাতে নতুন সহস্রাব্দে প্রবেশের সময় সমগ্র অঞ্চল একই দিন একই সময়ে উদযাপন করতে পারে।
কিরিবাতি ছাড়াও সর্বপ্রথম উদযাপনকারী অঞ্চল ও দেশের মধ্যে রয়েছে চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়ার চুকোতকা এবং কামচাতকা, সিডনি।
ওয়ার্ল্ড টাইম জোনে এগিয়ে থাকায় অনুসারে কিরিবাতি, নিউজিল্যান্ডের সবার আগে বরণ করে নেবে নতুন বছরকে। আবার বাংলাদেশের টাইমজোন +৬। তাই কিরিবাতি, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর কোরিয়া, চীন, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের পর নববর্ষ উদযাপন করবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বলা যায়, বাংলাদেশ অনেকটা মাঝামাঝি সময়ে নতুন বছর উদযাপন করবে। বাংলাদেশের পর নতুন বছর বরণ করে ভারত, আফগানিস্তান, ইরান, গ্রিস, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ।
সবার শেষে উদযাপন করবে যারা
সবার শেষে যে অঞ্চলে নববর্ষ উদযাপিত হবে, সেটি হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে কিরিবাতির দক্ষিণ-পশ্চিমে নিও এবং আমেরিকান সামোয়া দ্বীপপুঞ্জ।
৩১ তারিখ সবচেয়ে পরে শেষ হবে মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন বেকার দ্বীপ ও হাওল্যান্ড দ্বীপে। তবে দ্বীপগুলো জনবসতিহীন হওয়ায় সেখানে কেউ নববর্ষ উদযাপন করবে না বা তারিখ-সময় নিয়েও মাথাও ঘামাবে না।
সর্বশেষ নববর্ষ উদযাপিত হবে এমন অঞ্চলগুলোর মধ্যে একসময় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ সামোয়াও ছিল। তবে ২০১১ সালে দেশটি বাণিজ্যিক মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একই টাইমজোনে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে সর্বশেষ উদযাপনকারীর দেশগুলোর তালিকা থেকে রাতারাতি সর্বপ্রথম উদযাপনকারী দেশগুলোর তালিকায় নাম লেখায় সামোয়া।
- সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক