৯৫ বছরে টিনটিন: বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত তরুণ রিপোর্টার!
১৯২৯ সালের ১০ জানুয়ারি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিচিত তরুণ রিপোর্টারের আবির্ভাব ঘটে এক কমিক স্ট্রিপের মাধ্যমে। নয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট জর্জেস রেমি, যিনি অ্যার্জে ছদ্মনামে লিখতেন, তার ২৪টি বইয়ের এই তারকা সময়, ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছাড়িয়ে হয়েছে পৃথিবীখ্যাত।
আপনি যদি একজন টিনটিন্টোলজিস্ট হন, তবে আপনি জানতে পারবেন, টিনটিনের প্রথম দুর্দান্ত অভিযান শুরু হয়েছিল 'টিনটিন ইন দ্য ল্যান্ড অফ দ্য সোভিয়েত' বইয়ে, যেখানে তার কুকুর স্নোয়িকে সাথে নিয়ে সে ব্রাসেলস থেকে মস্কোর ট্রেনে চড়ে। ২৪ বছর পর 'টিনটিন অ্যান্ড আলফ-আর্ট'-এর রচনা শেষ হওয়ার আগেই মারা যান অ্যার্জে। অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপিটি পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রথম সাক্ষাৎ
ব্রাসেলস স্টেশনে কিছুটা খাটো, কিছুটা মোটা আর কাপড়ে মোড়া টিনটিনের সাথে প্রথম দেখা হয় পাঠকদের। সাদা-কালো রঙের স্কেচে তার বয়স বোঝার উপায় নেই, অবশ্য সেটি কোথাও উল্লেখও করা হয়নি। তার জুতো ওভারকোটের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। পাঠকদের জানানো হয়, টিনটিনের সংবাদপত্র Le Petit Vingtième (ল্য প্যতি ভাঁতিয়েম) সবসময় পাঠকদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য এবং তাদেরকে বৈদেশিক বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাতে সর্বদা তৎপর। যে কারণে তারা সোভিয়েত রাশিয়ায় তাদের এক সেরা রিপোর্টারকে পাঠাচ্ছে, এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে প্রতি সপ্তাহে সোভিয়েত রাশিয়ায় তার অ্যাডভেঞ্চার সম্পর্কে পাঠকদেরকে জানাবে।
পরবর্তী পাঁচ দশকে টিনটিনের কার্টুন অ্যাডভেঞ্চারগুলো ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। প্রকাশক মন্তব্য করেন, "সাত থেকে ৭৭ বছর বয়সী" লক্ষ লক্ষ শিশু থেকে বৃদ্ধের কল্পনাকে রাঙিয়েছে। অসাধারণ গল্পকার অ্যার্জে রিপোর্টার হিসেবেও কাজ করেছেন, যিনি নিয়মিত চলমান ঘটনাগুলোকে আগ্রহ নিয়ে পড়তেন। ব্রাসেলসে ছেলেবেলা কাটিয়েছেন, ফলে সরাসরি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার দেশ জার্মানদের দখলে চলে যাওয়াকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কৈশোরেও ভার্সাই চুক্তির কঠোর শর্তগুলো নিয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করেছিলেন ভালোভাবে।
টিনটিনের রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন, অন্তত তার প্রথম বইয়ে, ডান দিকেই ঝুঁকেছিল। তার সংবাদপত্রটিও ছিল কঠোর ক্যাথলিকপন্থী, যা সেই অশান্ত সময়ে বলশেভিক-বিরোধী এমনকি ইহুদি-বিরোধিতাও করতো। টিনটিনের রাজনৈতিক বার্তাই প্রথম দিকের বছরে এটি রচনার মূল কারণ ছিল। যদিও অ্যার্জে পরবর্তীতে তার রচনাকে ডানপন্থী থেকে বামপন্থীতে 'সংশোধন' করেছিলেন। টিনটিনের প্রথম অভিযানকে অনেকেই প্রাথমিকভাবে কমিউনিজমের খারাপ জিনিসগুলোকে 'প্রকাশ' করার লক্ষ্যে একটি প্রোপাগান্ডামূলক রচনা হিসেবে দেখে।
রাশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর পর থেকে ব্রাসেলসে ফিরে আসা পর্যন্ত টিনটিন বহুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়, যেখান থেকে সে সে বারবার পালায়। সোভিয়েত দেশ থেকে পালানোর পর সে অক্ষত অবস্থাতেই ব্রাসেলসে ফিরে আসে।
মাইকেল ফার নামের একজন টিনটিন বিশেষজ্ঞ, যিনি ২০০১ সালে 'টিনটিন: দা কমপ্লিট কম্প্যানিয়ন' লিখেছেন, জানিয়েছেন, "টিনটিনের রুশ অ্যাডভেঞ্চারের পড়া শ্বাসরুদ্ধকর ব্যাপার ছিল, যার মাঝখানে পাঠকদের হাঁপ ছেড়ে বাঁচার সময় খুব কমই দেওয়া হয়। তৎকালীন সময়ের চলচ্চিত্রের হেলটার-স্কেলটার পুলিশ আর কী স্টোন কপসের মতোই দ্রুতবেগে এর কাহিনী চলতে থাকে।"
১৯২০-এর দশকে ভিয়েনিজ ফ্রিটজ লাং-এর এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্র থেকেও অ্যার্জে অনুপ্রাণিত হতে পারেন, যেখানে কমিক স্ট্রিপে আলো এবং অন্ধকারের মেলোড্রামাটিক ব্যবহারের সাথে সিনেমাটিক বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায়।
প্রথম টিনটিন বইটি হয়তো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতার দিক থেকে সবচেয়ে কম নির্ভরযোগ্য, তবে এটি এখনো পর্যন্ত টিনটিনের সবচেয়ে চমৎকার বই। এর বাস্তবসম্মত ডিটেইলগুলোর ওপর ভিত্তি করেই অ্যার্জের পরবর্তী কাজগুলো আরো পরিপক্ক হয়ে ওঠে। টিনটিনও পরিবর্তন হতে থাকে, যেখানে তার বিরুদ্ধে আরো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিপক্ষকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়, আরও জটিল পরিস্থিতিতে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এবং এটিই পুরো ধারাবাহিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।
সূত্র: দ্য ফেডারেল