লন্ডনের রাস্তায় বাঙালির প্রিয় ঝালমুড়ির জমজমাট ব্যবসা!
নানা পদের মুখরোচক রান্না ও মিষ্টান্ন দিয়ে অনেক আগেই বিশ্ব মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় রন্ধনশিল্প। ইউরোপ-আমেরিকার যে দেশেই যাওয়া হোক না কেন, ভারতীয় রেস্টুরেন্ট সেখানে একটি হলেও থাকবেই। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী ভারতীয়রা ছাড়াও, পশ্চিমাদের কাছেও ভারতীয় খাবারের ব্যাপক চাহিদা। আবার ভারতীয় অনেক রান্নার সঙ্গেই বাঙালি রান্নার বেশ মিল পাওয়া যায়। প্রতিটি রান্নায় বা খাবারে একাধিক মশলা মেশানো, পরিমিত পরিমাণে টক-ঝাল এই সবকিছু মিলিয়ে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়াটা কঠিন নয়।
তবে ভারত এবং বাংলাদেশ দুই জায়গায়ই অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার ঝালমুড়ি নিয়ে এবার বিলেতে বাজিমাত করেছেন ব্রিটিশ শেফ (রাঁধুনি) অ্যাংগেস ডেনুন! অনেক বছর আগে একবার কলকাতা ভ্রমণে এসে ঝালমুড়ি খেয়ে সেই স্বাদই তার জিভে লেগে রয়েছে। তাই ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে পুরোদস্তুর ঝালমুড়ির স্টলই দিয়ে বসেছেন এই শেফ।
বাঙালি স্ট্রিট ফুডের জগতে সবচেয়ে পুরনো একটি নাম 'ঝালমুড়ি'। মুড়ির সঙ্গে মশলা, চানাচুর, সেদ্ধ বুট, তেতুলের টক, ধনেপাতা কুচি এবং কখনো কখনো ডিম মিশিয়ে বানানো এই খাদ্যটি বেশ উপাদেয়। বৈকালিক আড্ডা থেকে শুরু করে স্কুলের টিফিনে ঝালমুড়ি খাননি- এমন বাঙালি পাওয়া মুশকিল!
সম্প্রতি এনডিটিভির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাসখানেক আগে ইউএস-ইন্ডিয়া ইমপোর্টারস কাউন্সিল এর সভাপতি এবং রিচ মাইন্ডস সেন্টার অব এক্সিলেন্স এর সিইও রবি নায়ারের চোখে পড়ে ডেনুনের 'ঝালমুড়ি এক্সপ্রেস' নামক সেই স্টলটি। এরপর সেই দোকানে ঝালমুড়ি বানানোর একটি ভিডিও তিনি লিংকডইনে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, "যুক্তরাজ্যের রাস্তায় একজন বিদেশিকে ভারতের জনপ্রিয় খাবার ভেলপুরি বানাতে দেখে খুব ভালো লাগলো।" তবে রবি নায়ার ভেলপুরি বলে উল্লেখ করলেও, এটি যে আদতে ঝালমুড়ি তা ভিডিও দেখে সহজেই বোঝা যায়।
লিংকডইনে রবি নায়ার আরো লেখেন, "ভেলপুরি (ঝালমুড়ি) নামক খাবারটির উৎস আসলে ভারতে; এটাকে এক ধরনের চাটও বলা যায়। মুড়ি, সবজি কুচি আর তেতুলের সস মিশিয়ে মুচমুচে এ খাবার বানানো হয়।"
আরেকটি পোস্টে রবি নায়ার লেখেন, বিদেশ-বিভূঁইয়ে একজন বিদেশিকে ভারতীয় স্টাইলে এই সুপরিচিত খাবারটি বানাতে দেখেই তার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
২০১৯ সালে লন্ডনে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ চলাকালীন ক্রিকেটভক্তদের কাছে ঝালমুড়ি বিক্রি করার সময় ডেনুন প্রথম ভারতীয়দের নজরে আসেন। একেবারেই দেশি স্টাইলে ম্যাগাজিনের কাগজ ছিঁড়ে তা দিয়ে কোণের মতো বানিয়ে তাতে ঝালমুড়ি ঢেলে পরিবেশন করেন তিনি।
সেসময় টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কলকাতা ভ্রমণে এসে অন্যান্য স্ট্রিট ফুডের পাশাপাশি ডেনুন ঝালমুড়ি বানানোও শিখে নিয়েছিলেন এবং সেই জাদুতেই তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন লন্ডনের ভোজনরসিকদের। শুধু কলকাতাই নয়, মাইসোর এবং মুম্বাইয়ে ঘুরে ঘুরেও বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় স্ট্রিট ফুড চেখে দেখেছেন তিনি।
মূলত কলকাতায় ঘুরেই বাঙালি কুইজিনের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা জন্মায় অ্যাঙ্গাস ডেনুনের। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের ও বাঙালি খাবার যারা ভালোবাসেন, তাদেরকে এই লোভনীয় খাবারটি বানিয়ে খাওয়ানোর তাড়না অনুভব করেন। নানা ধরনের স্ট্রিট ফুডের মেনু নিয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন ফুড ফেস্টিভ্যালেও অংশগ্রহণ করেছেন ডেনুন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলাই হয়েছিল, ডেনুনের এই ঝালমুড়ির এক ঠোঙার দাম ৩.৫০ পাউন্ড, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৩১০ রূপির মতো ছিল। তবে গত কয়েক বছরে অন্য সবকিছুর মতোই ডেনুনের ঝালমুড়ির দাম বেড়ে চার পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে।