স্পেস স্টেশনে দিনে ১৬ বার সূর্যাস্ত দেখেন এই মহাকাশচারী। তিনি কীভাবে রোজা রাখবেন?
পবিত্র রমজানে মুসলিমরা রোজা ভাঙেন সূর্যাস্ত দেখে। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর সন্ধ্যায় তারা সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখে রোজা ভাঙেন। এটাই নিয়ম। কিন্তু সূর্যের ঘূর্ণন যদি হঠাৎ বদলে যায়? যখন সূর্যাস্ত হওয়ার কথা, সে সময়ের অনেক আগেই কিংবা পরে যদি সূর্য ডোবে? যেমনটা হয়ে থাকে মহাশূন্যে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নভোচারীদের বেলায়। এই ঘূর্ণায়মান ল্যাবরেটরি পৃথিবীর চারপাশে ঘণ্টায় প্রায় ২৭,৬০০ কিলোমিটার গতিতে চক্কর মারে। এর ফলে এই ল্যাবের যাত্রীরা প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেন।
ডজনখানেকের কিছু কম মুসলিম নভোচারী মহাশূন্য ভ্রমণ করেছেন। তাদের জন্য রমজান মাসে এটা একটা সমস্যাই। গত ৩ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছেন সুলতান আলনেয়াদি।
আলনেয়াদি যে ছয় মাস মহাশূন্যে থাকবেন, তখন পৃথিবীর মানুষ পবিত্র রমজান মাস পার করবে। আলনেয়াদি মহাশূন্যে অবস্থানকালে মুসলিমদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন—ঈদুল-ফিতর ও ঈদুল-আযহা।
তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, আলনেয়াদি এ সময় রোজা রাখবেন কী করে। এ প্রশ্নের উত্তরও ইসলাম ধর্মে দেওয়া আছে। আলনেয়াদি বলেন, একজন নভোচারী হিসেবে তাকে 'সফরকারীর' তালিকায় ফেলা যায়। আর সফরকারীদের জন্য রোজা ভাঙার অনুমতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'অসুস্থ বোধ করলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। কাজেই এই মিশনকে বিপদে ফেলা কিংবা ক্রু মেম্বারদের ঝুঁকিতে ফেলার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে আমাদের খাবার খাওয়ার অনুমতি আছে।'
দুবাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলনেয়াদি আরও বলেন, তিনি গ্রিনিচ মান সময় কিংবা কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সেল টাইম (যা স্পেস স্টেশনের স্বীকৃত টাইম জোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়) অনুসারে রোজা রাখতে পারেন।
জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আলনেয়াদি সাংবাদিকদের বলেন, 'যদি আমাদের সেই সুযোগ আসে আরকি। রোজা রাখার জন্য রমজান মাস খুব ভালো উপলক্ষ। আর এটা আসলে স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।'
মহাশূন্যে ধর্মপালনের নজির
মহাশূন্যযাত্রার শুরু থেকেই মহাকাশচারীরা মহাশূন্যে নানাভাবে ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন। ১৯৬৮ সালে নাসার অ্যাপোলো ৮ মিশনে নভোচারীরা চাঁদে যাওয়ার পথে বাইবেলের প্রথম বই জেনেসিস পাঠ করেন।
২০০৭ সালে মালয়েশিয়ান নভোচারী শেখ মুজাফর শুকুর প্রথম ধর্মপালনকারী (প্র্যাকটিসিং) মুসলিম হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থান করেন। ইসলামিক ন্যাশনাল ফতোয়া কাউন্সিল অভ মালয়েশিয়া তার ও ভবিষ্যৎ মুসলিম নভোচারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা প্রদান করে।
মুজাফর রমজানে মহাশূন্যে পাড়ি দিলেও কাউন্সিল বলে যে, পৃথিবীতে ফেরার আগপর্যন্ত তিনি রোজা না রাখলেও চলবে, অথবা তিনি চাইলে যে জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করেছেন সেখানকার টাইম জোন অনুসারে রোজা রাখতে পারবেন।
এছাড়া কাউন্সিলের পক্ষ মুজাফরকে বলা হয়, নামাজ পড়ার সময় তাকে হাঁটু গেড়ে না বসলেও চলবে (শূন্য মাধ্যাকর্ষণে এ কাজটি অত্যন্ত কঠিন)।
ফতোয়া কাউন্সিলের নির্দেশিকায় কিবলামুখী হয়ে—অর্থাৎ মক্কার দিকে ফিরে—নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করা হয় মুজাফরের জন্য। বলা হয়, এটি তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করলেই হবে।
- সূত্র: সিএনএন