যে সামুদ্রিক মাছ সারাজীবন উল্টোভাবে সাঁতারেই জীবন পার করে দেয়!
সমুদ্রের অন্ধকার গভীরতায় বসবাসকারী অ্যাংলারফিশের একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, প্রজাতিটি তাদের পুরো জীবন উল্টোভাবে সাঁতরে কাটিয়ে দেয়।
প্রজাতিটি তাদের ভয়ঙ্কর চেহারার জন্য সুপরিচিত। তাদের দেহের অগ্রভাগে রয়েছে বায়োলুমিসেসেন্ট (এটি জীবিত প্রাণির দেহ থেকে নির্গত এক ধরনের আলো। সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণির দেহে এ ঘটনা দেখা যায়)। উপাঙ্গটি তাদের মুখের উপরের অংশ থেকে খানিকটা সামনের দিকে ঝুলে থাকে। সম্ভবত অন্ধকার সমুদ্রের এই বাসিন্দারা উপাঙ্গটির আলোর সাহায্যে তাদের শিকারকে আকৃষ্ট করে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের একটি সহযোগী দল বিশেষ যানের (রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল বা আরওভি) সাহায্যে আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের তলদেশের বিভিন্ন অংশজুড়ে ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় মাছটির এই অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করেন তারা।
মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইকের মতে, এই অ্যাংলারফিশ প্রজাতিটির বাস সমুদ্রের তিন হাজার থেকে আট হাজার ফুট গভীরতায়। এত গভীরতায় বাস করার কারণে তাদের আচরণ সম্পর্কেও খুব কমই জানা গবেষকদের।
উল্টো সাঁতারের অদ্ভুত ঘটনা
১৯৯৯ সালে একটি আরওভির ক্যামেরায় হাওয়াই ও ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যবর্তী অংশ থেকে উল্টোভাবে সাঁতার কাটতে থাকা হুইপনোজ অ্যাংলারফিশের চিত্র ধরা পড়ে।
এ পর্যন্ত এটি একটি একক এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ধারণা করা হয়েছিল।
কয়েক বছর পর গবেষকরা জাপান উপকূলে ইজু-ওগাসাওয়ারা ট্রেঞ্চে গবেষণা করার সময় একটি আরওভির ধারণ করা চিত্রে ওই মাছের একই আচরণ লক্ষ্য করেন। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণার পর তারা অ্যাংলারফিশের অনুরূপ আটটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাছগুলোর এই আচরণ নির্দিষ্ট ক্রিয়া-কলাপের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। মাছগুলো অবিরাম উল্টোভাবেই সাঁতার কাটে।
গবেষক দলের ধারণা, এই উল্টো সাঁতারের বিষয়টি সম্ভবত তাদের মুখের উপরে রডের মতো উপাঙ্গটির সঙ্গে সম্পর্কিত। বেশ কয়েকটি ভিডিওতে মাছগুলো উল্টোভাবে থাকার সময় তাদের এ উপাঙ্গটি সমুদ্রের নিচের দিকে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।
এটি সমুদ্রের তলদেশে গাছপালার ভেতর লুকিয়ে থাকা শিকার খুঁজে পেতে মাছকে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণাটি জার্নাল অব ফিশ বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।