সাংবাদিকের অফিস গমন
আমি তখন মিরপুর থাকি আর অফিস ধানমন্ডি। সাংবাদিকতায় ততদিনে আমি ৩ বছর পার করেছি। মিরপুর থেকে কখনো বাসে, কখনো বেবি ট্যাক্সিতে যাওয়া-আসা করতাম। আমি বাবার গাড়িতে লিফট নেয়ার কথা ভাবতাম না—কারণ ওনার সাথে চড়তে গেলে ঝগড়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। অন্ততপক্ষে ঝগড়া করার মুড থাকতে হবে।
ও, আপনারা হয়তো জানেন না—আমার বাবা, বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্র সেই পঞ্চাশের দশকে এবং পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কাজ শুরু করে সেক্রেটারি হিসেবে রিটায়ার করেছেন। এই কারণে উনি বোঝেন বেশি এবং আমার মতো ফেলু ছাত্র—যে কিনা সাংবাদিকতা করে; ছবি আঁকে আর গিটারে হাউমাউ করে গান গায়—তার মতামত তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। একজন জাঁদরেল অফিসারের এইরকম মন-মানসিকতা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি মনে করি আমি ওনার চেয়ে বেশি ভালো বুঝি। ওনার চল্লিশের দশকের মানসিকতার সাথে আমার টক্কর একটা ডালভাত ব্যাপার। সেটা বাবাও জানেন, আমার মা-ও জানত।
একবার আমি ওনার গাড়িতে চড়ে অফিসের দিকে রওয়ানা দিয়েছিলাম। যেতে চাইনি। কিন্তু আকাশে মেঘ একদিকে আর আরেকদিকে বাবা খুব স্নেহ করে বললেন, 'চল, তোকে নামিয়ে দেই! পথে বৃষ্টি হতে পারে!'
ওকে। রওয়ানা দিলাম। সেটা নব্বই দশকের প্রথম দিক। বাবা রাজনীতির এটা-সেটা বললেন; আমি হুঁ-হাঁ বলছি। তারপর তিনি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জিজ্ঞেস করেই বললেন, 'শোনো, এবার একটা চাকরি খোঁজো!'
আমি আর থাকতে না পেরে কেশে বললাম, 'এখন যা করছি—সেটা কি?'
বাবা স্বভাবগত স্টাইলে দাঁত খিলাতে খিলাতে বললেন, 'ওইসব সাংবাদিকতা কি চাকরি নাকি? এগুলা করে সংসার চলবে?'
আমি তখন ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দিলাম, 'কোনটা তাইলে চাকরি? যেটায় রিভলভিং চেয়ার থাকবে? যেই চেয়ারের হেলানের অংশে একটা তোয়ালে বিছানো থাকবে? যেখানে সর্বদা স্যার স্যার বলে কথা বলতে হবে...'
বাবা তখন খেপে গেলেন, 'সবসময় সার্কাস্টিক উত্তর দিতে হবে কেন...চাকরি নিতে বলেছি, চাকরি নাও!'
ব্যস, লেগে গেল। এদিকে বাইরে বৃষ্টি আর এখানে গাড়ির ভেতর গরম গরম তর্ক। একপর্যায়ে দুজনই চুপ। তারপর ধানমন্ডির অফিস থেকে ২০০ গজ দূরে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলেন বাবা, 'আমার তাড়া আছে!'
তারপর বৃষ্টিতে ভিজে অফিস পৌঁছেছিলাম! আর সেই কথা স্মরণ করেই আমি ওনার গাড়িতে চড়ি না।
সেদিন কাঠফাটা দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে মিরপুর এক নম্বরে এসে বাসের অপেক্ষায় আছি। কোনো বাস আসে না! অনেকক্ষণ হয়ে গেছে—বাস নেই; স্কুটার ও নেই। আছে কয়টা টেম্পো। আমি আবার টেম্পোতে চড়তে তেমন আগ্রহী নই। যতবার চড়েছি, প্রত্যেকবার আমার হাঁটু প্রচণ্ড ব্যাথা হয়ে যেত, কারণ বসার জায়গাটা খুব ছোট। কিন্তু এদিকে কোনো যানবাহন না দেখে একটা টেম্পোর দিকে এগুলাম।
'আয়া পড়েন! আয়া পড়েন! মিরপুর-নিউ মার্কেট!'
টেম্পোতে কয়েক সেকেন্ডে যাত্রী ভরে গেল। আমি দেখলাম সামনের ড্রাইভারের সিটের পাশে একটা জায়গা আছে! এটাই তো চাই। পেছনে যাতাযাতি করে না চড়ে ড্রাইভারের পাশে বসলেই তো আরামে যাওয়া যায়। উঠে পড়লাম। টেম্পোর হেল্পার একটা ১২-১৩ বছরের চালু ছেলে, যে টেম্পোর বডিতে থাপ্পড় মেরে পেছনে ঝুলতে লাগল আর টেম্পোটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে চলতে শুরু করল।
শুরু হতে না হতে পেছনে কেউ একজন বলল সে ভুল গাড়িতে উঠে গেছে এবং তাকে নামতে হবে। কেউ কেউ বিড়বিড় করে গালি দিল। টেম্পো থামল; সবাই হুড়মুড় করে একসাথে নামল আর অমনি টেম্পোটা পিছন দিকে উঁচিয়ে গেলো; মানে আমি আর ড্রাইভার তখন শূন্যে ভাসছি! হেল্পারটা তাড়াতাড়ি লোকজন সরিয়ে বাহনটাকে স্বাভাবিক করল।
এ তো বিনাপয়সায় থ্রিল! বুক ধুকধুক করছে। টেম্পো ড্রাইভার হেসে বলল, "আরে ভয় পাইবেন না! কী আর হইবো!"
ওকে! টেম্পো আবার যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করল। ফেট ফেট করে যাচ্ছে। দুপুরের গরমে ঘামাচ্ছি। ওটার তেমন স্পিড নেই বলে তেমন বাতাসও লাগছে না! সে যা-ই হোক, কোনোমতে অফিস যেতে পারলেই হলো।
কল্যাণপুর পার হবার পর গোলযোগ শুরু হলো—হঠাৎ টেম্পোটা থেমে গেল। ইঞ্জিন বন্ধ! ধুর!
আমরা সবাই নামলাম। ড্রাইভার এটা-সেটা চেক করে বলল, 'তেল কইমা গেছে! এ সদরুল—হাত লাগা!'
তেল কমে গেলে তেল ভরবে। এখানে হাত লাগানোর কী আছে।
সেই ১২-১৩ বছরের চেঙ্গু চিকনা ছেলেটা কয়েকটা যাত্রীকে বলল, 'ভাই আসেন—একটু টেম্পোটারে আলগাই!'
আলগাই মানে পেছন থেকে টেম্পোটা সবাই মিলে আলগালাম—সামনের দিকটা নিচু থাকল। আইডিয়াটা হচ্ছে ট্যাংকিতে যেইটুকু তেল আছে সেটা যেন ট্যাংকির পাইপের মুখে যায়। এতে কাজ হয় কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। কিন্তু সেই সন্দেহের মুখে ছাই দিয়ে ফটফট করে টেম্পো আবার চালু হলো। আমরা আবার উঠলাম। প্রায় ৫০০ গজ যাবার পর আবার টেম্পো থেমে গেল। আবার যাত্রীরা পেছন দিক উঁচু করল। আবার কয়েকশো গজ যাবার পর গণভবনের আগে থেমে গেলাম! আর আধা কিলো গেলেই পেট্রল পাম্প!
ভাবলাম এবার বোধ হয় হেঁটেই বাকি পথ যেতে হবে। এই গরমে আর তেমন কোনো যান বাহন দেখছি না!
কিন্তু না! ড্রাইভার এখনো তার সব ট্রিক আমাদের দেখায়নি! ড্রাইভার আমাকে বলল, 'স্যার, আপ্নে পেছনে যান! আমি ম্যানেজ করতেসি!'
কী ম্যানেজ করবে? আমি গেলাম পেছনে! আর পেছন থেকে চেঙ্গু হেল্পার গেল সামনে। ড্রাইভার তার স্টিয়ারিং হুইলের পাশে পেট্রোলের ঢাকনা খুলে রেখেছে। চেঙ্গু হেল্পার সেখানে মুখ লাগিয়ে দিল হাওয়া—অমনি আবার গাড়ি স্টার্ট! আশ্চর্য!
এদিকে আমি টেম্পোর পিছনের একটা সিটে বসে আছি। একটা ঝাঁকি খায়—আমরা সবাই শূন্যে উঠে যাই, তলদেশ থেকে সিটটা সরে যায়—আবার তলদেশ নেমে আসে; সিটের বদলে লোহার ফ্রেমে নিতম্ব আটকে যায়। আমরা টেনেটুনে নিজেদের ঠিক করি আর টেম্পো আগায়।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম, হেল্পারটা দাঁড়িয়ে এক হাতে একটা রড ধরে মাথা নামিয়ে মনোযোগ দিয়ে ট্যাংকিতে ফুঁ দিচ্ছে আর আমরা যাচ্ছি! এটাই বোধ হয় দোয়ার কেরামতি! যা-ই হোক, শেষে আমরা পাম্পে এলাম এবং তেল ভরে বাকিটুকু মোটামুটি নিরাপদে গেলাম!
এর পর কখনো এই ধরনের টেম্পোতে চড়িনি!
এর এক বছর আগে আমার অফিস ছিল মতিঝিল। মিরপুর থেকে মতিঝিল মানে অন্তঃজেলা ভ্রমণ। অধিকাংশ সময় বাস দিয়ে যেতাম; আবার কখনো কখনো মাঝরাস্তায় তল্লাবাগে বন্ধুর বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে রিকশা-স্কুটারে কিংবা বন্ধুর মোটরসাইকেলে করে যেতাম। দুজন একই অফিসে কাজ করি।
এমন এক শীতের দুপুরে আমার বন্ধুর বাসায় খেয়ে দুজন বের হয়ে রিকশা খুঁজছি—ও সেদিন মোটরসাইকেল চালাবে না পিঠ ব্যথা বলে। চার দিক খাঁ খাঁ। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা রিকশা পেলাম। রিকশাচালক একটা যুবক চাদর পেঁচিয়ে অলসভাবে থামল। সেই সময় তল্লাবাগ থেকে মতিঝিল দৈনিক বাংলার মোড়ের ভাড়া ছিল ৮ টাকা। কিন্তু ব্যাটা ১০ টাকা চাইল। দুই টাকা বেশি চেয়েছে বলে আমাদের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো; কারণ তখন টাকার অনেক মূল্য ছিল। কিন্তু আশেপাশে রিকশা নেই! আমরা দরাদরিতে হেরে গেলাম না—আচ্ছা, ১০ টাকাই সই!
রিকশায় উঠে আমরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করি; রিকশাওয়ালা অলসভাবে একমনে প্যাডেল দিচ্ছে। কয়েক মিনিট এগুতেই হটাঠা প্রচন্ড দুর্গন্ধ পেলাম; আমরা দুই বন্ধু কয়েক সেকেন্ড নাক-মুখ বুজে গন্ধটা চলে যেতে দিলাম!
'ইশ! ঢাকার যে অবস্থা! মানুষ যেখানে-সেখানে বাথরুম করে রাখে,' বলে আমরা আমাদের গল্প আবার শুরু করলাম!
দুই মিনিট পর আবার বিশ্রী গন্ধ! এবার আমি ভ্রু কুঁচকে আমার বন্ধুর দিকে তাকাই—আমার বন্ধু আমার দিকে অভিযোগের দৃষ্টিতে তাকায়। 'তুই এসব বন্ধ কর!' আমি বন্ধুকে কড়া সুরে বললাম!
আমার বন্ধু সমপরিমাণ কড়া স্বরে বলল, 'এসব নিম্নমানের কাজ সবসময় তুই করিস!'
দুজন মৃদু ঝগড়া করতে করতে আবার দুর্গন্ধ পেলাম!
এবার আমরা দুজনই থেমে গেলাম—ঘুরে তাকালাম যুবক রিক্সাওয়ালার দিকে।
কিন্তু রিকশাওয়ালার বিকার নেই। নিজেকে চাদরে মুড়িয়ে গভীর মনোযোগে সে রাস্তা দেখতে দেখতে প্যাডেল মারছে।
'এই মিয়া! এই!' আমি জোরে চেঁচালাম!
'এই তুমি কি একের পর এক বাৎকর্ম ছাড়ছ?' আমার বন্ধু প্রশ্ন করে।
রিকশাওয়ালার বিকার নেই। গরু যেমন আপন মনে জাবর কাটে, সে আপন মনে প্যাডেল মারছে। আমাদের প্রশ্ন তার কানে যাচ্ছে না!
'খবরদার! আর একটাও মারবে না!' আমি চিৎকার করে বললাম।
শুনল কি না জানি না। হয়তো শুনেছে! মানুষের লজ্জাশরম বলে তো কিছু আছে, নাকি?
কিন্তু এই রিকশাওয়ালার নেই! দুমিনিট পর আবার দুর্গন্ধ!
আমি আর আমার বন্ধু আবার চিৎকার, 'এই মিয়া, কী খেয়েছেন? আপনার পেট পচে গেছে তো!'
নির্বিকার প্যাডেল মারছে আর কিছুক্ষণ পরপর বাৎকর্ম করছে! আমি ততক্ষণে গুনেছি কয়বার সে এই কাজ করল! যখন সে সপ্তমবারের মতো বিভীষিকা বায়ু ছেড়েছে, আমি চিৎকার করে বললাম: 'এমনিতে দুইটাকা বেশি ভাড়া আবার তার ওপর বাতকর্মের অত্যাচার? ব্যাটা প্রতিটা বাতকর্মের জন্য এক টাকা করে কাটবো! বন্ধ কর এই অত্যাচার!'
কিন্তু রিকশাওয়ালা যেই কী সেই; গভীর মনোযোগে সে যেন ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে—কারো দিকে তাকায় না; কারো কিছু শোনে না—খালি প্যাডেল মেরে যাচ্ছে!
এর পরেরবার গন্ধ পেয়ে আমি নাক চেপে চিৎকার: '৮! আমি ৮ টাকা কাটব!'
এর পর ৯! এরপর ১০! আমরা যখন মতিঝিল অফিসে পৌঁছুলাম, ওর ১৩ টাকা কাটা গেছে!
রিকশা থামতেই চাদর মোড়া রিকশাওয়ালা নামল এবং এই প্রথমবারের মতো আমাদের দিকে ঘুরে তাকাল এবং বলল, 'স্যার, দুইটা টাকা বাড়ায় দিয়েন!'
আমি খেপে চিৎকার, 'বাড়িয়ে দেব মানে! এই ব্যাটা! তুমি উল্টো আমাদের টাকা দিবে!'
তক্ষুনি ছোঁড়াটা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, 'কেন, স্যার—১৩টা ছাড়ছি বইলা?'
আমরা দুজন কী বলবো! বদমাশ ফাজিল ছোঁড়া! হাসতে হাসতে মরি আরকি!
এর পরের ঘটনাটা ২০০৯-এর দিকে। ঘটনাটা আমার কলিগ আশীষের।
আশীষ আমাদের কারওয়ান বাজারের অফিস থেকে জরুরি কাজে ধানমন্ডি যাবে। রাস্তায় অনেক ভিড়—কিন্তু ধানমন্ডি যাবার মতো কিছু নেই। ও যখন একটা কালো ট্যাক্সিক্যাব পেল, সেটা ভালো করে না দেখেই খুশিমনে উঠে গেল। হাতে অনেক কাগজপত্র। সিটে বসে সেগুলো গোছাতে গোছাতে প্রথমে টের পেল গাড়ির ভেতর বেশ পুরোনো সিটের উৎকট গন্ধ। কী আর করা। গাড়িতে এসি নেই—সব জানালা খোলা; চললে গন্ধ নিশ্চয় কিছুটা কাটবে।
গাড়ি গাঁইগুঁই করে চালু হয়ে একটু এগুতেই আশীষ টের পেল গাড়িটা প্রচণ্ড ঝাঁকাচ্ছে—এটার কোনো সাসপেনশন নেই। ঝাঁকুনিতে ওর হাতের কাগজপত্র পড়ে যাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দুলুনি দিচ্ছে; নাকের ডগায় ঝাঁকুনি কেন্দ্রীভূত হয়ে পিঁড়পিঁড় করছে।
'এই ড্রাইভার,' আশীষ পেছন সিট থেকে ড্রাইভারকে ডাকল এবং সামনে তাকাল।
এই গাড়ির কোনো ড্যাশবোর্ড নেই। তার জায়গায় সরাসরি গাড়ির ইঞ্জিন দেখা যাচ্ছে; তার আর পাইপ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পড়া তেল দেখা যাচ্ছে।
আশীষ এতক্ষণে অবাক হয়ে তার ড্রাইভারকে খেয়াল করল। চেঙ্গু একটা ছোঁড়া; চুলের স্টাইল আর পোশাক দেখে মনে হয় সে হয় হিরোঞ্চি নাহয় মলম পার্টির সদস্য! তার দাঁত বের করা হাসি দেখে আশীষ মোটেও নিরাপদ বোধ করল না।
'জি, স্যার?' বলল সে।
আশীষ চোখ বড় বড় করে দেখল ছেলেটা যে স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে, সেটা শুধু একটা লোহার ফ্রেম—মানে স্টিয়ারিং হুইলের কংকাল!
আশীষ সভয়ে প্রশ্ন করলো, 'আপনার গাড়িটা এমন কেন?'
চেঙ্গু কাঁধ ঝাঁকাল, 'চলে তো, স্যার! একটু ঝাঁকায়—এই আরকি!'
আশীষ চুপ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে মলম পার্টির কাছে ধরা খেয়েছে! কথা বলে লাভ কী!
এর মধ্যে খেয়াল করল রাস্তায় যেকোনো মহিলা দেখলে চেঙ্গু ছোঁড়াটা তার মাথা সেদিকে ঘুরিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে স্টিয়ারিং হুইলও ঘুরে যায়। তাই আশীষ আবার কাশি দিয়ে ওর দৃষ্টি রাস্তার দিকে ফেরায়। ড্রাইভার হয়তো ভেবেছে নিশ্চয় এই লোকের ব্রঙ্কাইটিস আছে!
গাড়িটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে যখন ধানমন্ডি ২৭-এর মোড় পার হচ্ছে, হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি। অমনি ড্রাইভারটা গাড়ি রাস্তার সাইডে থামিয়ে দিল।
আশীষ ভাবল, 'এই কাজ সেরেছে! এখানেই নিশ্চয় ওর সাঙ্গপাঙ্গরা অপেক্ষায় আছে! ওরা এখন দুপাশ দিয়ে উঠবে; আমার চোখে মলম মাখাবে আর আমার সব টাকাপয়সা নিয়ে আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে ভাগবে!'
আশীষ গাড়ি থেকে নামার প্রস্তুতি নেবার আগে বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভার গাড়ির মেঝে থেকে কী একটা তুলে লাফিয়ে নামল। ওটা কী—পিস্তল না চাকু?
ড্রাইভার ওর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে নামতে বাধা দিল, 'স্যার, জানালা লাগাইতে হইবো!'
আশীষ আমতা আমতা করে বলল, 'কী?'
ও দেখল ড্রাইভারের হাতে একটা গাড়ির জানালার হাতল। এবার আশীষ খেয়াল করল ওর জানালায় কোনো হাতল নেই—আছে একটা স্ক্রু। ওপাশের দরজায়ও তা-ই! কোনো দরজায় কিছু নেই! ওই একটা হাতল স্ক্রুতে লাগিয়ে ঘোরালে জানালা ওঠে-নামে! চেঙ্গু ড্রাইভার সেভাবেই গাড়ির সব জানালা ওঠাল! তারপর আবার গাড়ি ঝাঁকুনি দিয়ে চালু করলো!
না, ব্যাটা কোনো মলম পার্টি না। ঢাকার ট্যাক্সিক্যাবগুলো একসময় এতই উন্নত ছিল!