কেমন হতো নিখোঁজ পোষা প্রাণীর পোস্টার?
আমার বিড়ালকে কি দেখেছেন?
অনেকেই হয়তো হন্তদন্ত হয়ে নিজের পোষ্যবন্ধুকে খুঁজে বেড়ানো কারো মুখে প্রশ্নটি শুনেছেন। বিড়াল-কুকুর বা পোষা প্রাণী হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করতে পোস্টার বানানোর চল কিন্তু বেশ পুরনো। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ছবি প্রিন্ট করেই পোস্টার বানানো যায়, ছবি দিয়ে নিজেই বর্ণনা লিখে বানিয়ে ফেলা যায় নিখোঁজ পোস্টার।
মাস দুয়েক আগেই ঢাকার গুলশান এলাকার রাস্তায় রাস্তায় চোখে পড়ে একটি পোস্টার- তাতে লেখা, 'সন্ধানদাতার পুরষ্কার ৫০ হাজার টাকা। কিউই (টিয়া) পাখিটি নিজের নাম বলতে পারে।' পাশেই পাখিটির একটি রঙিন ছবি।
সব কিছু এতো সহজ হওয়ার আগেও কিন্তু মানুষ তার পোষ্য বন্ধুকে খুঁজতে পোস্টার বানাতো। পেন্সিলের স্কেচ, বা রংতুলির অগোছালো আচড়ে আঁকা ছবির পোস্টার।
কানাডিয়ান শিল্পী ইয়ান ফিলিপস এ ধরনের হাতে আঁকা কিছু নিখোঁজ পোস্টার দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তার রুমমেটকে তার বিড়াল খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। মানুষ ওই সময়টায় যেভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে, নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করে এ বিষয়টিই অভীভূত করে তাকে। এরপরই তিনি এসব নিখোঁজ পোস্টার সংগ্রহ শুরু করেন। সারা বিশ্ব থেকে নিজেদের আঁকা কিংবা রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে, টেলিফোণ বুথে, বুলেটিন বোর্ড থেকে সংগ্রহ করা পোস্টারের ছবি পাঠায় তাকে অনেকে। নিখোঁজ পোস্টারগুলোই যেন এক ধরনের আলাদা শিল্পকর্ম। বিশ্বের ছয়টি মহাদেশ থেকে পাওয়া এমন ছবিগুলো দিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন তিনি। বইটির নাম 'লস্ট: লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড পেট ফ্রম এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড'।
এসব পোস্টারের প্রত্যেকটির পেছনে হৃদয়বিদারক গল্প আছে, পোষ্যবন্ধুকে হারিয়ে ফেলার বেদনার ছাপ আছে কাঁপা হাতে আঁকা আবছায়া ছবিগুলোতে । এসব পোস্টার বানাতে হয়তো তেমন খরচ হয়নি, সহজেই হয়তো নষ্টও হয়ে যেত। কিন্তু নিজের পোষ্যবন্ধুকে হারিয়ে ফেলার অনুভূতির বাস্তব ছাপ আছে এসব পোস্টারে। নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি লিখে এঁকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন রাস্তার ধারে।
ফিলিপ বুঝতে পারেন, এই পোস্টারগুলো শুধু হারিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোর কথাই বলে না, মানুষগুলোর গল্পও বলে।
তিনি খেয়াল করেন, নিখোঁজ বিড়ালের পোস্টারের ভাষা কিছুটা নরম গড়নের হয়। অন্যদিকে কুকুর নিখোঁজের পোস্টারে হন্তদন্ত ভাব বেশি দেখা যায়। আবার, কুকুর নিখোঁজের বেশিরভাগ পোস্টে পুরষ্কারের ঘোষণা থাকে। অনেকে সরাসরি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান। বাচ্চারা কাঁদছে ধরনের লাইন দিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে লিখে দেন, ফেরত পেলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। পোষ্যবন্ধুকে অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে ফিরে পাওয়ার শেষ মিনতি ফুটে ওঠে এভাবেই।
ফিলিপ ইচ্ছে করেই এসব পোস্টারের পরবর্তী ঘটনা বইয়ে রাখেননি। কী হয় তা রহস্য হিসেবে রাখতে চেয়েছেন তিনি।