লতা-পাতা খেয়েও পান্ডারা কেন নাদুস-নুদুস হয়
'পান্ডা' শব্দ ব্যবহার করে কেউ কোনোদিন 'চিকন', 'লিকলিকে', 'হাড্ডিসার' কিছু বোঝায়নি। 'পান্ডা' বিশেষণ ব্যবহার করা হয় 'মোটা' 'ভুঁড়িওয়ালা', 'নাদুস-নুদুস' মানুষজনকে বোঝাতে। কিন্তু কখনো কি আপনার মনে হয়েছে পান্ডা নামক প্রাণীটি তৃণভোজী হওয়া সত্ত্বেও কেন এত নাদুস-নুদুস হয়?
নিরীহ এ প্রাণীটি জীবনের পুরো সময় বাঁশের কচি কাণ্ড, লতা, পাতা খেয়ে বাঁচে। বছরের দুই-তৃতীয়াংশ সময় শুধু বাঁশের পাতাই খায়। কম চর্বি ও ক্যালরির খাবার খাওয়া সত্ত্বেও পান্ডা সমানে মোটা হতে থাকে।
গত সপ্তাহে বিখ্যাত সাময়িকী 'সেল রিপোর্টস'- এর একটি সমীক্ষায় প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদের ধারণা, পান্ডার অন্ত্রে থাকা এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার কারণে তৃণভোজী হওয়া সত্ত্বেও পান্ডার ওজন বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছেন বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে যখন বাঁশ থেকে কচি কাণ্ডের জন্ম হয় তখন পান্ডার ওজন বাড়ে।
তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, পান্ডার অন্ত্রে থাকা ক্লসট্রিডিয়াম বাটিরিকাম (Clostridium butyricum) নামক ব্যাকটেরিয়াটি পান্ডাকে শরীরে চর্বি ও ক্যালরি জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। পান্ডা সেই চর্বি অন্যান্য ঋতুগুলোয়, যখন তাদের শুধু পাতা খেয়ে বাঁচতে হয়, ব্যবহার করে।
মানুষের অন্ত্রেও ক্লসট্রিডিয়াম বাটিরিকাম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। এটি আন্ত্রিক জ্বলন বা প্রদাহজনিত রোগ এবং উদরাময় রোগ নিরাময়ে ক্লিনিক্যালি ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা পান্ডার শরীরের ক্লসট্রিডিয়াম বাটিরিকাম ব্যাকটেরিয়াগুলো বিপাক প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব সৃষ্টি করে, যার ফলে পান্ডা চর্বি জমিয়ে রাখার সুযোগ পায়।
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের প্রাণীবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে গবেষক গুয়ানপিং হুয়াং বলেন, আমরা পান্ডার অন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রো ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছি যেগুলো বাঁশের কাণ্ড ভক্ষণের সময় তাদের শরীরের ওজন বাড়ায়। আমরা এ ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত।' গুয়ানপিং প্রেস রিলিজে গবেষণা সমীক্ষাটি প্রকাশ করেন।
গবেষকগণ মধ্য চীনের কুইংলিন পাহাড়ের বন্য পান্ডার অন্ত্রে ক্লসট্রিডিয়াম বাটিরিকাম ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান। গবেষণাগারে বিষয়টি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে।
গবেষণাগারে কয়েকটি ইঁদুরকে পান্ডাদের মতো বাঁশের কচি কাণ্ড খেতে দেয়, কয়েকটি ইঁদুরকে খাওয়ানো হয় সাধারণ খাবার। পরে বন্য পান্ডা ও বাকি ইঁদুরদের মল পরীক্ষা করে দেখা যায় বাঁশের কাণ্ড খাওয়া ইঁদুরগুলো পান্ডাদের মতো বেশি ওজন লাভ করেছে।
গুয়ানপিং প্রাণীর শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, একদিন এর দ্বারা অনেক রোগের প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।
বাঁশের কাণ্ড ভক্ষণে পান্ডার শরীরের ওজন বাড়লেও এই সময়কালে পান্ডাকে পরিযায়ী হতে হয় এবং এর স্বাভাবিক যৌনাচারে বাধার সৃষ্টি হয়। গবেষণা সমীক্ষায় বিস্তারিতভাবে এ বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।
ঋতুভেদে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার আচরণ পরিবর্তনের বিষয়টি বন্যপ্রাণীদের মাঝে খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে প্রাণীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। পান্ডার ক্ষেত্রে বছরের অন্যান্য সময় ব্যবহারের জন্য শরীরের ওজন বা ক্যালরি যুক্ত হয়।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট