চট্টগ্রামের স্ট্রিট ফুড: রাস্তায় মুখরোচক খাবারের পসরা
এক সময় চিকেন ফ্রাই, চিকেন স্টিক, চাপ, গ্রীল চিকেন, বার্গারসহ বিভিন্ন ধরনের রিচ ফুড নামিদামি রেস্তোরাঁর বাইরে চিন্তা করা যেত না। এক দশকের ব্যবধানে এখন এসব খাবার স্ট্রিট ফুডে পরিণত হয়েছে। এসব স্ট্রিট ফুডকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের ফুটপাতের পাশে গড়ে উঠেছে কাস্টমাইজড ফুডকোর্ট। রোজ বিকালের পর থেকে সেখানে বসে বাহারি পদের খাবারের মেলা।
মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে এসেছে খাবারের এই ধারা। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় স্ট্রিটফুড মার্কেট গড়ে উঠেছে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলকে কেন্দ্র করে আড়াই শতাধিক ফুডকোর্ট নিয়ে বিশাল স্ট্রিট ফুডের মার্কেট গড়ে উঠেছে। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, শিলিগুড়ি শপিং মলসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় স্ট্রিট ফুড মার্কেট গড়ে উঠেছে। আর মুম্বাইয়ের পথেঘাটে, অলি-গলিতে নানারকম ভাজাপোড়ার দোকান তো রয়েছেই।
খাবার বিক্রির এই সংস্কৃতি ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামেও এসেছে। ইন্টারনেট-প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং ভারতীয় সিনেমা দেখতে দেখতে দেশে খুব দ্রুত বিকাশ ঘটে স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ফুড ব্লগিংয়ের প্রভাবও এখানে রয়েছে।
চট্টগ্রামে স্ট্রিট ফুডের বিকাশে ভূমিকা রয়েছে নগরীর ঝাউতলা এলাকার বিহারি সম্প্রদায়ের। সেখানে অল্প টাকায় বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায়। ৪০-৯০ টাকায় চিকেন চাপ, গ্রীল চিকেন, ঝাল ফ্রাই, বিফ স্টিক, গরুর বট বিক্রি হয়। ৭০-১০০ টাকায় গরুর নলার হালিম, বিফ হালিম পাওয়া যায়। অল্প টাকায় এসব মুখরোচক খাবারের ধারণা এখান থেকেই এসেছে।
গত কয়েক বছরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্ট্রিট ফুডের অঘোষিত জংশন তৈরি হয়েছে। নগরীর ২ নং গেট এলাকায় ফিনলে শপিং মল স্কয়ারকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক কাস্টমাইজ ফুডকোর্ট গড়ে উঠেছে। পাশেই বিপ্লব উদ্যোনেও গড়ে ওঠে ছোট ছোট রেস্তোরাঁ। এখানে বিরিয়ানি, বার্গার, কাবাব, পাস্তা, চিকেন-বিফ আইটেম থেকে শুরু করে জুস, স্যুপ, মিক্স ফ্রুটস, কফিও পাওয়া যায়। বিকাল থেকে রাত অবধি মানুষের আড্ডায় জমজমাট থাকে স্থানটি।
চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায়ও সন্ধ্যার পর ফুডকোর্ট বসে। সেখানে ফুচকা-চটপটি, ভাজাপোড়ার পাশাপাশি ঝটপট তৈরি নুডলসও পাওয়া যায়। চীন থেকে নুডলসের খাদ্যাভাস ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসে। এই নুডলস ভারতে চাউমিন নামে খুব জনপ্রিয়। দেশটির কর্পোরেট অফিসগুলোতে খুবই কম সময়ের ব্রেক দেয়া হয়। তখন চাকরিজীবীরা দ্রুত ও ঝামেলাবিহীন খাবার হিসেবে চাউমিন খেয়ে থাকে।
নগরীর জিইসি এলাকার সানমার ওসান সিটিকে কেন্দ্র করেও রয়েছে অর্ধ শতাধিক স্ট্রিট ফুডের দোকান। এখানের ছোলা-মুড়ির সঙ্গে ভাজাপোড়া পেয়াজিুর মিক্সার জনপ্রিয় আইটেম। এছাড়া এখানে আলুপুরি, আলুর দম, ভেলপুড়ি, হালিম ও বিরিয়ানিও পাওয়া যায়।
আগ্রাবাদ এলাকার কর্পোরেট অফিসগুলোর আশেপাশেও স্ট্রিট ফুডের আসর বসে। এখানে ৫০-৮০ টাকায় চিকেন চাপ, ঝাল ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই পাওয়া যায়। এছাড়া দুপুরে বিরিয়ানি বিক্রি হয় ভ্যানে। বনরুটির ভেতর ভাজা ডিম পুরে মরিচের চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয় ডিম বন। এমন নতুন নতুন স্ট্রিট ফুডের আইটেম সম্বলিত ফুডকোর্টগুলো সন্ধ্যার পর জমে উঠে। এছাড়া নগরীর হালিশহর, অলংকার, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা শিল্পকলা, পতেঙ্গা, ইপিজেড, চকবাজার, বহাদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, জামালখানসহ পাড়া-মহল্লায় ষ্ট্রিট ফুডের বিকাশ ঘটেছে।
শুধু সন্ধ্যায় নয়, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভ্যানে অস্থায়ী বিরিয়ানির দোকান বসে শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে। রাতে যানবাহনের চালকেরাই এর মূল ভোক্তা। ছোট প্লেটে ২০ টাকা থেকে শুরু করে প্রতি প্লেট ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
ওপেন কিচেন
ষ্ট্রিট ফুডের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ওপেন কিচেন। গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ঝটপট খাবার তৈরির পর গরম গরম পরিবেশন করা হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রাহকদের দ্রুত টানতে পারে ফুডকোর্টগুলো। এই ধারণা এখন বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো অনুসরণ করছে। হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর রান্নাঘর এক সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হতো। গত এক দশকে তা পরিবর্তন হয়ে ষ্ট্রিট ফুডের বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করেছে। গ্রীল চিকেন-কাবাবের স্ট্যান্ড, রুটি-পরটার স্ট্যান্ড, বিরিয়ানির বড় পাতিল এখন রেস্তারাঁগুলোর বাইরেই পরিবেশন করা হয়। থাইল্যান্ড, ইস্তাম্বুল, ভারতেও এই ওপেন কিচেন দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের ওপেন কিচেনের পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।