কার মধ্যে নেতৃত্বগুণ আছে কীভাবে বুঝবেন? এই ৪টি লক্ষণের খোঁজ করুন!
'নেতৃত্বের উপরই নির্ভর করে সাফল্য-ব্যর্থতা', এই প্রবাদের সঙ্গে আপনি একমত না হোন আর না হোন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে সঠিক নেতৃত্বের জন্ম দিতে না পারলে কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের উন্নতির ধারা ধরে রাখতে পারে না।
যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিরই উচিত জন-কেন্দ্রিক নেতৃবৃন্দ গড়ে তোলা, যাদের মাঝে সেবার মানসিকতা আছে। এবং এমন নেতা তৈরি করা, যাকে বাকিরা অনুসরণ করবে।
বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রকাশনা, ইঙ্ক ম্যাগাজিন কর্পোরেট জগতের নেতৃত্বস্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে চারটি লক্ষণ বেছে নিয়েছে, যেগুলো একজনের মধ্যে থাকলে আপনি তাকে ভালো নেতা হিসেবে বিবেচনা করতে পারবেন।
১। বস না, সাধারণ মানুষ
দ্য লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মন্টে উইলিয়ামসের মতে, নেতাদের মানবিকতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে 'উপরের কেউ' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বদলে সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মানসিকতা থাকতে হবে নেতাদের।
উইলিয়ামস বলেন, "যখন নেতারা তাদের কর্মীদের প্রথমে মানুষ হিসেবে বোঝার চেষ্টা করেন এবং সে অনুযায়ী তাদের উপর প্রতিষ্ঠানের কর্মপন্থা প্রয়োগ করেন, তখন সেই দলের কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত হয়।"
একজন নেতা হিসেবে দলের সঙ্গে আপনার মানবিক স্তরে সম্পর্ক গড়ে তোলাটা জরুরী বলে উল্লেখ করেন তিনি। কারণ, মানবিক সংযোগই কোম্পানির জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আসে।
২। নেতৃত্বের মাঝেও শেখার মানসিকতা আছে
ক্লাউড কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নাইস ইনকনট্যাক্টের সিইও পল জার্মান শেখার মানসিকতার সঙ্গেই সবকিছুকে যুক্ত করেন।
"যখন আপনি নিজের মনকে উন্মুক্ত রাখেন এবং প্রতিষ্ঠানের সবাইকে বলার সুযোগ দেন, তখন প্রতিটি মিথস্ক্রিয়ায় ব্যক্তিগত এবং পেশাগত মানোন্নয়ের সুযোগ তৈরি হয়," বলেন জার্মান।
একটি প্রতিষ্ঠান যখন যথেষ্ট পরিপক্ব হয়ে যায়, তখন তার নেতারা ভাবতে পারেন আর সৃজনশীলতা ও নতুন উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। যদি নেতার শেখার মানসিকতা থাকে তাহলে আপনাকে আর শুনতে হবে না, 'এভাবেই করা হয় এই কাজ'।
৩। সহানুভূতির মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে তোলেন
বেশিরভাগ নেতাই এ ব্যাপারে একমত যে শেষ পর্যন্ত একটি জিনিসের উপরই নেমে আসে কোম্পানির সাফল্য। সেটি হচ্ছে, সম্পর্ক। এবং এই সম্পর্কগুলোকে লালন করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে সহানুভূতিশীল মানসিকতা ।
অ্যাথলেটিক-ভিত্তিক ফিটনেস ফ্র্যাঞ্চাইজি ডি-ওয়ান ট্রেনিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা সিইও উইল বার্থোলোমিউ বলেন, "আপনার দলের কর্মীরা সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা একসাথে কাজ করেন। তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ দেখা দিবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যখন আপনি একটি সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি করেন, যখন অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেন এবং বাকিদের উৎসাহিত করেন তা করতে; তখন দলের মাঝে মতবিরোধ আর বড় রূপ ধারণ করে না। দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে পারে সবাই।"
মহামারীর এ সময়ে যোগাযোগের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। এই অতিরিক্ত যোগাযোগকে সহনীয় করতেও সহানুভূতির বিকল্প নেই। অফিসে সহানুভূতিশীল পরিবেশ থাকলে কর্মীরা তাদের মতামত জানাতে এবং নিজের উন্নতির জন্য প্রতিক্রিয়া জানতে যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
৪। সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী
গ্রান্ট থর্নটন কোম্পানির সংস্কৃতি, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি বিভাগের প্রধান রাশাদা হোয়াইটহেড বলেন, "সম্পর্ক গড়ে তোলাটা তেমন কঠিন কিছু না। দলের সদস্যদের সুপ্রভাত বলার অভ্যাস করা, যে যেই নামে স্বচ্ছন্দ বোধ করে তাকে সেই নামে ডাকা, কেউ তার জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বা গল্প শেয়ার করলে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া; এসব ছোট ছোট মুহূর্তই প্রমাণ করে কোম্পানির লাভক্ষতির বাইরে সবার সঙ্গে সবার আলাদা সম্পর্ক রয়েছে।"
এক কথায়, কর্মীদের একমাত্র কাজ হচ্ছে অফিসের দায়িত্ব পালন করা, এই মানসিকতা থাকতে পারে না একজন নেতার মাঝে। একজন যোগ্য নেতা সবসময় তার কর্মীদের সঙ্গে মানবিক পর্যায়ে যোগাযোগ করবেন এবং যোগাযোগের পরিবেশ তৈরি করবেন।
ভালো নেতারা সবসময় গভীরভাবে দলের সদস্যদের বোঝার জন্য স্বাস্থ্যকর বিতর্ক ও আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেন। ধারণা বিনিময়ের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া, নিজেরা মতামত জানাতে ইতস্তত বোধ করেন এমন কর্মীদের কাছেও মতামত জানতে চান তারা। যার ফলে কর্মীদের মাঝে এক ধরনের আস্থা তৈরি হয় এবং তারা কর্মস্থলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
সূত্র: ইঙ্ক।