প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি সহযোগিতা- সহকর্মীর সাথে কখন কেমন আচরণ
কর্মক্ষেত্রে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলো বেশ তিতা-মিঠা ধাঁচের। কখনো সহকর্মীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপ নেয় বিবাদে। আবার কখনো একসঙ্গে কাজ করে তৈরি হয় দারুণ বোঝাপড়া। যৌথ কাজে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি সব সময় সহজ নয়।
২৫ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বোঝাপড়ার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল। দেখা গেছে বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে সামলাতে ব্যর্থ হলে ক্যারিয়ারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিগুলো সামলে নিতে প্রথমেই জানতে হবে আপনার সঙ্গে আপনার সহকর্মীর সম্পর্ক কোন পর্যায়ের।
যখন সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত মাত্রায় থাকে তখনই শুরু হয় বিবাদ। এক্ষেত্রে এক পক্ষের জিতে যাওয়া মানেই যেন অন্য পক্ষের হার। আবার অন্যদিকে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কের ধারাটি কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় মিলবে। দেখে নেওয়া যাক, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের কোন পর্যায়ে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করবেন।
বিবাদ
অনেক সময় অফিসের সহকর্মীরা সরাসরি বিবাদে জড়িয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে জেসি আর জয়ের কথা ধরা যাক। দুজনেই একটি বড় ফিন্যান্সিয়াল ফার্মে কর্মরত। সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদের জন্য যেকোনো একজন প্রমোশন পাবে। জেসি বেশ কয়েক মাস ধরেই বড় এক ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলেই জেসির প্রমোশন প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু অফিসের জুনিয়র এক সহকর্মীর কাছে সে জানতে পারে যে জয় ওই একই ক্লায়েক্টের পেছনে লেগেছে। এবারই প্রথম নয়, জয় এর আগেও এমন কাজ করেছে। এই অবস্থায় জেসির কী করা উচিৎ?
জেসি যদি পুরো ব্যাপারটা এড়িয়ে যায় তাহলে জয় তাকে আরও পেয়ে বসবে। আর যদি ক্লায়েন্টটিকে নিয়ে আসতে জয় সফলও হয়, তখনও সে জেসিকে সেজন্য বিন্দুমাত্র ক্রেডিট দেবে না। সহকর্মী ও অধীনস্তরাও জেসিকে বোকা ভাববে, তার প্রতি ভরসা হারাবে। অন্যদিকে জেসি যদি সরাসরি জয়কে এর জন্য দায়ী করে তখন কিন্তু ঘটনা উল্টো দাঁড়াবে। অন্যরা বলাবলি করবে যে জেসি সামান্য বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। সে শুধু নিজের কথাই চিন্তা করছে। কোম্পানির সামগ্রিক ভালোমন্দ চিন্তা করলে যে-ই ক্লায়েন্ট আনুক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না।
এ অবস্থায় পরিস্থিতির সামাল দিতে, জেসিকে এমন কৌশল বের করতে হবে যাতে দু'দিকই রক্ষা হয়। প্রথমেই জেসিকে প্রতিপক্ষের শক্তি সম্পর্কে ধারণা করতে হবে। জয়ের মধ্যে এমন কোন গুণ আছে যার জন্য ক্লায়েন্ট তাকে বেশি পছন্দ করতে পারে সে সম্পর্কে জেসিকে জানতে হবে। আর সেজন্য জেসি নিজের কাজে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, তাও দেখতে হবে।
এরপর জেসিকে কোনো একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, সে এই কাজটি জয়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজে অন্য কোনো আরও ভালো প্রজেক্টে চমক দেখিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই ক্লায়েন্টের ওপরই যদি প্রমোশন নির্ভর করে, তাহলে তাকে অন্য পথে হাঁটতে হবে। জয় যা করছে জেসিকেও তা-ই করতে হবে। জয় কাজ করছে এমন কোনো ক্লায়েন্ট বা প্রজেক্টে জেসিকেও হাত দিতে হবে। নিশ্চিতভাবেই জয় বিরক্ত হবে এবং এই বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে চাইবে। আর এভাবেই আলোচনার মধ্যে দিয়ে কে কার কোন কোন কাজে নাক গলাতে আসবে না, তা ঠিক করে নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনি কোন বিষয়গুলো ঠিক রাখতে চান আর কোনগুলোতে ছাড় দিবেন। কারও মুখোমুখি দাঁড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কখনো কখনো এছাড়া অন্যকোনো পথ খোলা থাকে না। তবে মনে রাখুন, প্রতিপক্ষকে কখনোই একা মোকাবেলা করতে যাবেন না। বন্ধুদেরও সঙ্গে রাখুন।
প্রতিযোগিতা
প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তাদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। আপনি ও আপনার সহকর্মীরা হয়তো একই জিনিসের পিছে ছুটছেন। কিন্তু সবাই তা পাবেন না। কার বেতন বাড়বে, কে প্রমোশন পাবে, কে ভালো কাজটি লুফে নিবে সবকিছুর মধ্যে প্রতিযোগিতা এসে ভিড় করবে। তবে প্রতিযোগিতা দ্বন্দ্বের মতো অতোটা গুরুতর নয়। বরং এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়।
ইলা আর মাহিরের কথা ধরা যাক। বস তাদের দুজনকে একই প্রজেক্টে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। নতুন এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোম্পানির নীতিতে বিচিত্রতা, সমতার মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা। প্রজেক্ট ভালো-খারাপ যেমনই হোক না কেন তার প্রভাব দুজনের ওপরই পড়বে। কিন্তু মাহির জানে যে ইলা বেশিরভাগ কাজই তার ওপর চাপিয়ে দিবে। কিন্তু শেষে গিয়ে সবকিছু এমনভাবে উপস্থাপন করবে যেন ভালো আইডিয়াগুলো সব ইলাই বের করেছে, আর খারাপগুলো সব মাহিরের!
তাহলে মাহির কী করতে পারে? সে যদি এখনই সিনিয়র কারও কাছে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে তাহলে ইলাও উল্টো অভিযোগ তুলবে। কারণ সে এখনও এমনও কিছু করেনি যার জন্য বিচার দেওয়া যেতে পারে। আর মাহির যদি চুপচাপ কাজ করা শুরুও করে, তাও শেষ অবধি তার আশঙ্কাই সত্যি হতে পারে। অন্যদিকে সে যদি ইলার মতোই একই কৌশলে সব ভালো অর্জন নিজের নামে চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে তো দুজনের মধ্যে আর কোনো পার্থক্যই থাকছে না। দুজনেই সততা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।
এরকম পরিস্থিতিতে প্রথমেই দেখে নিন যে আপনাদের দুজনের কোন লক্ষ্যগুলো এক আর কোনগুলো ভিন্ন। এক্ষেত্রে মাহির ও ইলা দুজনেই চাইবে প্রজেক্টটি ভালোমতো শেষ হোক।
ইলার সঙ্গে আলোচনায় মাহিরকে সবসময় দলগতভাবে সাফল্য অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। দুজন যে একই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তা-ও বলতে হবে। তবে আলোচনা করে বা উৎসাহ যুগিয়েই যে সব কাজ হয়ে যাবে সেটা নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব পরিস্থিতিতে ইলা মাহিরকে অপদস্ত করতে পারে সেই পরিস্থিতিই যেন না আসে সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে। চূড়ান্ত সুপারিশগুলো নির্বাচনে ফিডব্যাক নিতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনে ইলাকে রাজি করাতে হবে। কিংবা তাদের পরিবর্তে তাদের বস যেন পুরো বিষয়টি প্রেজেন্ট করে সেই চেষ্টাও করা যেতে পারে। সুতরাং, কোন জিনিস সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তা নির্ধারণ করতে পারলেই সেটা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করা সম্ভব হবে।
- হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ অবলম্বনে