চাওয়ামাত্রই কীভাবে সৃজনশীল চিন্তায় সাড়া দেবেন
সৃষ্টিশীলতাকে সাধারণত প্রকৃতিপ্রদত্ত আশীর্বাদ হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। তবে গবেষকরা বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৃজনশীলতাও শেখা যায়।
অনেকসময় দেখা যায় আমাদের ওপর কোনো কাজ শেষ করার চাপ থাকে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে না। কীভাবে নতুন নতুন আইডিয়া বের করা যায়, তা নিয়েও অনেকে গলদঘর্ম হয়ে যায়। চলুন দেখে নেয়া যাক কীভাবে প্রয়োজনের মুহূর্তে আরও সৃষ্টিশীল আইডিয়া বের করা যায়।
সমস্যা লিখে নিন, তারপর তা নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দিন
বুদ্ধিমত্তাকে বিরক্ত করলে সৃজনশীলতা উদ্দীপিত হয়। নিজেকে যখন জটিল, কৌতূহলোদ্দীপক, অমীমাংসিত কোনো সমস্যা দেবেন—এবং স্পষ্ট ও সচেতনভাবে সেটা বুঝিয়ে দেবেন—আপনার মস্তিষ্ক তখন বিরক্ত হবে।
যেমন, একটি প্যাডে লিখে নিতে পারেন: 'বাইরের সম্পের সহায়তা ছাড়া আমার দলের মানুষগুলোর জন্য ৩০০টি মাঝারি শ্রেণির কর্মসংস্থান তৈরি করব কীভাবে?'
খাতায় লেখার ফলে সমস্যাটি আপনার মনে গেঁথে যাবে।
বুদ্ধিমত্তাকে আলোড়িত করার একটি উপায় হলো, প্রথমে সমস্যার কিছু এলোমেলো সমাধান দাঁড় করানো। ওই সমাধানগুলো আপনাকে সন্তুষ্ট করবে না।
এলোমেলো সমাধানগুলো লেখার পর খানিকটা হাঁটাহাঁটি বা অন্য কোনো হালকা কাজ করে আসুন। মোদ্দা কথা, আপনার অবচেতন মনকে কাজ করার সুযোগ দিন। অধিকাংশ সময়ই এতে কাজ হয়। আপনার পূর্ব-অভিজ্ঞতা, মানসিক ও সৃজনশীল শক্তি—সব মিলিয়ে দেখবেন মনের মতো কোনো সমাধান পেয়ে গেছেন।
নিজের কৌতূহলী মনকে সম্মান দেখান
স্টিভ জবস দাবি করতেন, সৃষ্টিশীলতা হল স্রেফ বিভিন্ন জিনিসকে এক সুতায় গাঁথার প্রক্রিয়া।
নিজেকে আরও বেশি সৃষ্টিশীল করতে হলে আপনাকে আরও বেশি বেশি জিনিস এক সুতায় গাঁথতে হবে।
সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে, এমন মানসিক ডাটাবেজ গড়ে তোলার সেরা উপায় হলো কৌতূহলকে সম্মান করা।
মাথায় যদি হুট করে কোনো চিন্তা বা কোনো ব্যাপারে কৌতূহল চলে আসে, তার পেছনে খানিকটা সময় ব্যয় করুন।
ধরুন, কোনো বই, লেখা বা সম্মেলন আপনাকে ভাবিয়ে তুলেছে। হুটহাট চলে আসা এসব এলোমেলো ভাবনা বা কৌতূহল বেশিরভাগ সময়ই আমরা পাশ কাটিয়ে যাই। কিন্তু এ কাজ করার মানে হলো নিজের সৃজনশীলতাকে বিপদের মুখে ফেলে দেয়া।
কাজেই এরকম কৌতূহল বা চিন্তার পেছনে সময় দিন। অনেক সময়ই এসব চিন্তা থেকে নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়।
অভিজ্ঞতার ভান্ডার সাজিয়ে ফেলুন
আপনার অভিজ্ঞতাগুলো সংগ্রহ করার ও সুবিন্যস্ত করে সাজানোর উপায় খুঁজে বের করুন। যেমন, কোনো বই বা প্রবন্ধ পড়ার সময় ইচ্ছামতো দাগিয়ে হাইলাইট করুন।
পুরো লেখা/বই পড়া শেষ হলে দাগিয়ে রাখা অনুচ্ছেদগুলো আবার পড়ুন। তারপর ওখান থেকে সবচেয়ে ভালো অংশগুলো আলাদা একটি ফাইল বা ফোল্ডারে নিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে সংরক্ষিত করুন। যাতে পরে সহজে খুঁজে পেতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ায় একটা সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার গড়ে তুলে ওখান থেকে নানা আইডিয়া নিতে পারেন বিভিন্ন সময়ে। এই তথ্যের ফোল্ডার খুলে নিয়মিত চোখ বোলাবেন।
যেসব কাজ আপনাকে টানে না, তা করুন
এমন কিছু কাজ করুন, যেগুলোর প্রতি আপনার কোনো আগ্রহ নেই। যেমন প্রতিবারই পত্রিকা পড়ার সময় আপনার আগ্রহ নেই, এমন বিষয়ের ওপর অন্তত একটি লেখা পড়ুন।
নিজের আগ্রহের বাইরের বিষয় থেকেও এভাবে অনেকসময় অনেক নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়। কাজেই বিরক্তিকর বা একঘেয়ে বলে কোনো জিনিসকে উড়িয়ে দেবেন না। ওসব বিষয়ের ওপরও মাঝেমধ্যে পড়াশোনা করুন।
অস্বস্তিকর আলোচনায় অংশ নিন
নতুন আইডিয়া পাওয়ার বা সৃজনশীলতা বাড়ানোর আরেকটি দারুণ উপায় হলো নিয়মিত এমন মানুষের সঙ্গে আলাপ করা যার সংসর্গে থাকলে আপনি অস্বস্তি বোধ করেন।
এ ধরনের মানুষের সঙ্গে আলাপ করলে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে এভাবে আলাপ করলেও অনেক সময় নতুন নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়।
বিক্ষিপ্ত চিন্তা মাথায় এলেই কাজে লেগে পড়ুন
অনেক সময়ই আমাদের ভেতরে একসঙ্গে অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত আইডিয়া দলা পাকিয়ে যায়। ওই সময় সুচিন্তিত আইডিয়াগুলো পেটে আসে তো মুখে আসে না।
আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, ওই মুহূর্তের অনুভূতি আর বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো ঝটপট খাতায় লিখে ফেলা।
ওরকম মুহূর্তের চিন্তাগুলোকে উপেক্ষা করবেন না। বরঞ্চ ওসব বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা নিয়ে ভাবতে বসুন। দেখবেন কোনো না কোনো নতুন আইডিয়া পেয়ে গেছেন।
সৃষ্টিশীলতা বরাবরই রহস্যের চাদরে মোড়ানো থাকতে পারে। তবে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের সৃষ্টিশীলতার ধার বাড়াতে পাড়ি।
- সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ থেকে অনূদিত