ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট? একটি প্রশ্নের মাধ্যমেই যেভাবে পাবেন এর জবাব
একজন মানুষ কি ইন্ট্রোভার্ট নাকি এক্সট্রোভার্ট? এর উত্তর খুঁজে পেতে অনেকেরই লেগে যায় বছরের পর বছর।
সাধারণত, যারা যোগাযোগ রক্ষায় ভালো, অন্যদের সাথে সময় কাটানো উপভোগ করে- এমন লোকদেরকেই এক্সট্রোভার্ট হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু, তারা কি আসলেই এক্সট্রোভার্ট?
কোন বিষয়টি আপনার শক্তি যোগায়?
১৯২০ এর দশকে মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে গবেষণাকালে প্রথমবারের মতো এক্সট্রোভার্ট ও ইন্ট্রোভার্টের ধারণা দেন মনোবিজ্ঞানী কার্ল জং।
কার্ল জং এর মতে, ইন্ট্রোভার্টরা নিজেদেরকে রিচার্জ করার জন্য নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতির মধ্যে বুঁদ থাকে। অন্যদিকে, এক্সট্রোভার্টরা অন্যদের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে নিজেদের শক্তি যোগায়।
কিন্তু, বিষয়টি এতটা সহজ নয়। ধরা যাক, ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট একটি পাল্লার দুই প্রান্তে অবস্থিত। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই এই পাল্লার যেকোনো একদিকে থাকলেও, এ বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে কে এক্সট্রোভার্ট এবং কে ইন্ট্রোভার্ট।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা, ইন্ট্রোভার্টরা মূলত শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির। কিন্তু, এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। এমন অনেক ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি আছেন যারা অন্যদের সাথে সহজেই সময় কাটাতে পারেন, বা আড্ডায় অংশ নেন। এক্সট্রোভার্টদের সাথে তাদের পার্থক্য হলো, বাইরে যাওয়ার বিষয়টি তাদের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। দিনশেষে, নিজেদেরকে রিচার্জ করার জন্য তাদের একান্তে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
একইভাবে, এক্সট্রোভার্টরা যে সবসময় অন্যদের সাথেই সময় কাটায়, এমনও নয়। তাদেরও একটি শান্ত দিক থাকতে পারে। এদেরকে সাধারণত অন্যরা ইন্ট্রোভার্ট হিসেবে ধরে নেয়, বা এমনও হতে পারে যে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ইন্ট্রোভার্ট বিবেচনা করে। কিন্তু, আড্ডা, ভিড়ের মধ্যে থাকা এবং অন্যদের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে শক্তি ফিরে পাওয়া ব্যক্তিরাই মূলত এক্সট্রোভার্ট।
তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন: আপনার মানসিক বা শারীরিক শক্তির উৎস কী!
অনেকেই ভাবতে পারে যে, সে এক্সট্রোভার্ট নাকি ইন্ট্রোভার্ট তা জেনে আদতে কী হবে।
নিজের ব্যক্তিসত্ত্বা জানার বেশকিছু উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো।
আত্ম-সচেতনতা তৈরি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা
আপনি যদি ইন্ট্রোভার্ট হয়েও নিজেকে এক্সট্রোভার্ট ভেবে থাকেন (বা এর বিপরীত), তাহলে নিজের চাহিদা, সীমাবদ্ধতা এবং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা 'স্ট্রেস বিহেভিয়ার'কে আপনি ঠিকভাবে বুঝবেন না।
অন্যভাবে বলতে গেলে, আপনি এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে খুঁজে পাবেন যা অজান্তেই আপনাকে নিরুৎসাহিত করে তুলবে।
নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আত্ম-সচেতনতাও বাড়ে। এতে করে চাহিদা এবং সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে নিজের যত্নও নেওয়া যায় ভালভাবে।
বিশেষ করে উদ্যোক্তা বা কোনো ব্যবসার মালিক এবং কর্মজীবিদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরও প্রভাব ফেলে। এক্সট্রোভার্ট নাকি ইন্ট্রোভার্ট, তা জানলে আপনি দিন ও সপ্তাহের হিসাব আগে থেকেই করে রাখতে পারবেন। তাছাড়া, একটি কাজে আপনি কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে চান এবং ব্যক্তিগতভাবে কোন কাজে বেশি ফোকাস করতে চান, সেটিও বুঝতে পারবেন এর মাধ্যমে।
এর সবই যেমন আপনার ব্যবসা বা কাজের জন্য ভাল, তেমনি আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারি।
সামাজিক সচেতনতা তৈরি
নিজস্ব চাহিদা, সীমাবদ্ধতা এবং স্ট্রেস-বিহেভিয়ার ট্রিগার সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আপনি অন্যের দিকটিও ভালো বুঝতে পারবেন। ফলেই, নিজের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করুন।
সময়ের সাথে সাথে আপনি বুঝতে পারবেন, কিভাবে অন্যদের সাথে আরও সহজভাবে সম্পর্ক তৈরি করতে হয়, এবং কিভাবে তাদের চাহিদার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা যায়।
এটি আপনার নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এক কথায় বলা যায়, আপনি একজন ইন্ট্রোভার্ট বা এক্সট্রোভার্ট কিনা তা বোঝার মাধ্যমে আপনি নিজের আবেগ আরও ভালভাবে বুঝতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এর ফলস্বরূপ আপনার মধ্যে তৈরি হবে সামাজিক সচেতনতা, যা আপনাকে উচ্চতর মানসিক বুদ্ধিমত্তার দিকে নিয়ে যাবে।
নিজের সত্ত্বা অনুধাবনের মাধ্যমে যেমন নিজেকে জানা যায়, তেমনি বোঝা যায় অপরকেও।
- সূত্র- ইঙ্ক ডটকম