এখনও ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরে নড়াইলের পাঁচ জেলে পরিবার
ভোঁদড় প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে হলেও এখন কোথাও কোথাও টিকে আছে। নড়াইলে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরার প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে গোয়ালবাড়ি গ্রামের পাঁচটি পরিবার। এছাড়া সুন্দরবনেও ভোঁদড়ের অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামে ভোঁদড়কে আঞ্চলিক ভাষায় 'ধেড়ে বা ধাইড়ে' বলে ডাকে। গোয়ালবাড়ির ধ্রুব বিশ্বাস, ভবেন বিশ্বাস, শ্যাম বিশ্বাস, নবীন বিশ্বাস ও রবিন বিশ্বাসের পাঁচ পরিবার এখনও ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। নৌকায় ভোঁদড় সাথে নিয়ে গিয়ে মাছ ধরেন তারা। পরিবারগুলোর কাছে ভোঁদড় রয়েছে ২১টি। প্রাণীটির প্রধান খাবার মাছ। তবে ব্যাঙ বা ছোট আকৃতির জলজ পোকাও ভোঁদড় খায়। প্রতিটি ভোঁদড় বছরে ২-৬টি বাচ্চা দেয়, ৯-১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
মাছ ধরার কৌশল:
নৌকার এক প্রান্তে ভোঁদড়ের জন্য আলাদা করে খাঁচা বানানো থাকে। মাছ ধরার সময় খাঁচার ঢাকনা খুলে দেওয়া হয়। জেলেরা নৌকায় বাঁধা জাল নদীতে ফেলে ভোঁদড় ছেড়ে দেন। লাঠির সঙ্গে এদের শরীর দড়ি দিয়ে এমনভাবে বাঁধা থাকে যেন ভোঁদড় ছুটে হারিয়ে না যায়। নৌকা নদীর তীরে আসতে থাকে আর ভোঁদড়ের তাড়া খেয়ে মাছ পাতা জালে এসে আটকা পড়ে।
শ্যাম বিশ্বাস জানান, 'আমাদের পূর্ব পুরুষরা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করে আসছেন। পৈত্রিক পেশা থেকে আমারও এ পেশায় আসা। এটা আমাদের শত বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা। বছরের কয়েক মাস মাছ ধরে যা রোজগার হয় সেটি দিয়েই সারাবছর চলতে হয়। তবে এখন নদীতে মাছ কমে গেছে। খাল-বিল, নালাগুলোতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরেন অন্য জেলেরা। এর ফলে আমাদের মাছ ধরা ও রোজগার কমে গেছে। সেকারণে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছে।'
তিনি আরও জানান, একটি ভোঁদড় ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যখন মাছ ধরার মৌসুম থাকে না; তখন মাছ কিনে খাওয়াতে হয় ভোঁদড়কে।
শ্যাম বিশ্বাসের স্ত্রী লতিকা জানান, ৩০-৩৫ দিন আগে আমাদের একটি ভোঁদড় চারটি বাচ্চা দিয়েছে। এদের এখন ছোট মাছ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। প্রথমদিকে মানুষের মতো ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াতে হতো। দুই মাস পর থেকে নিজেরাই মাছ ধরে খেতে পারবে।
আরেক মাছ শিকারী ধ্রুব বিশ্বাসের ছেলে দেব বিশ্বাস বলেন, এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য হলেও আমাদের এই পেশায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আমরা এখন লেখাপড়া শিখছি, কলেজে উঠেছি। আগামী ১০ বছর পর এই পেশায় আর কেউ থাকবে না।
নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, এভাবে মাছ ধরা জেলেদের তালিকা বা তাদের জন্য কোন কর্মসূচি নেই। তাদের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাবনা করা হবে।
এদিকে, পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের কর্মকর্তা এম.এ হাসান জানান, ভোঁদড় একটি বন্যপ্রাণি। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরার চিত্র সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চ এলাকায় দেখা যায় না। তবে বাগেরহাট অঞ্চলে কিছু রয়েছে। সুন্দরবনে এখনও ভোঁদড়ের অস্তিত্ব রয়েছে। পায়ের ছাপ, মাছ খেয়ে ফেলে রাখা এসব দেখেই তাদের অস্তিত্বের প্রামাণ মেলে। তবে কী পরিমাণ রয়েছে সেটির কোন পরিসংখ্যান বন বিভাগের কাছে নেই।