অবশেষে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার ক্যাসিনো সম্রাট
সপ্তাহ দুয়েকের অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর র্যাব এই ব্যবসায়ের প্রধান হোতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের প্রেসিডেন্ট সম্রাটকে রোববার (৬ অক্টোবর) ভোর পাঁচটার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাসেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্রাট ঢাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতেন। অবৈধ জুয়ার ব্যবসা ও ক্যাসিনো চালিয়ে এবং টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।
১৯৯০ সালে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে ছিলেন সম্রাট। তখনও প্রয়াত জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায়।সম্রাটের কাজ ছিল দেশের নানা জায়গায় এরশাদবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা।এজন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। সেখানে নির্যাতনের শিকারও হন সম্রাট।
নব্বইয়ের শেষে এরশাদের পতনের পরের বছর সম্রাট যুবলীগে যোগ দেন। তখন যুবলীগের নগর ইউনিটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। সম্রাটের উত্থানের পেছনে তার সহযোগিতা বড় ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় সম্রাট প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের সময়ও সম্রাট সংগঠনে তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিলেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে সম্রাটের উত্থান একইভাবে চলতে থাকে। সংগঠনেও তার অবস্থান দৃঢ় হতে থাকে। ২০১২ সালের ১৪ জুলাইতে অনুষ্ঠিত যুবলীগের ষষ্ঠতম কাউন্সিলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সম্রাট ও তার সঙ্গীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়ে যাওয়ায়, ঢাকায় বিভিন্ন অপরাধ, টেন্ডারবাজি ও মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না বলে মাস দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও চিঠিতে বলা হয়।
এর প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।ঢাকার জুয়ার সাম্রাজ্যের মুল হোতা বলে সম্রাটকে মনে করা হয়।
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাবের হাতে প্রথমেই ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
এরপর র্যাব রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে গ্রেফতার করে।। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো-সাম্রাজ্য নিয়ে তথ্য দেন।
১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর রাতে সম্রাট কাকরাইলের ভুঁইয়া ম্যানশনে তার অফিসে গা-ঢাকা দেন। শত শত যুবলীগ কর্মী কয়েক দিন তার অফিস ভবনটি ঘিরে রাখেন।সে সময় সম্রাট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে ফোনালাপে তার অসুস্থতার জন্য বিদেশে যাবার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। এটাও বলেছিলেন যে, তিনি গা-ঢাকা দেননি, নিজের অফিসে প্রায়ই এভাবে অবস্থান করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা ডিভিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে একটি কালো গাড়িতে চড়ে সম্রাট তার অফিস ভবন ত্যাগ করেন।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, সম্রাট এরপর গ্রেফতার এড়াতে কোনো একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান কেবল র্যাবই চালাচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষকে বিব্রত না হতে হয়।
তিনি আরও বলেছিলেন, সম্রাট যে-ই হোন তাতে কিছু যায় আসে না। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।