অ্যাপ জানাবে হতদরিদ্রদের চাল নিয়ে অনিয়মের তথ্য
করোনা দুর্যোগের এই সময় গণমাধ্যমে প্রায়ই ১০ টাকা কেজি দরের চাল নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর দেখা যায়। কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা কার্যক্রমের অনিয়ম ও দুর্নীতি। তালিকা তৈরির সময় নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন হত দরিদ্ররা। তবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভিন্নধর্মী এক উদ্যোগ নিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। চালু করেছে সহজে ব্যবহার যোগ্য মোবাইল অ্যাপ। যার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যাচ্ছে হতদরিদ্রদের তালিকার অনিয়ম-দুর্নীতি।
গত ৮ মে থেকে জেলাব্যাপী কার্যক্রমটি শুরু করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। সহায়তা কার্যক্রমে এ সব অনিয়ম ঠেকাতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন বঞ্চিত হত দরিদ্ররাও।
'কমিউনিটি ইন্সপেকশন টুল' নামে অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। আর খুব সহজেই সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছে তার এলাকার উপকারভোগীদের তালিকা।
জেলা প্রশাসন বলছে, সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করে সহজ ব্যবহার পদ্ধতি দিয়ে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। শুরুতেই থাকছে এলাকা নির্বাচন; যেখানে রয়েছে বিভাগ থকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত অপশন। এরপর আসবে নামের তালিকা। প্রতিটি নামের সঙ্গে আছে অভিযোগ দেওয়ার বাটন। অনিয়ম দেখলে নাম পরিচয় গোপন করে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারবে।
জেলার ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারমনে, ইউপি সদস্যকে জানানো হয়। পাশাপাশি একজন কর্মকর্তা যাকে ট্যাগ অফিসার বলা হয় তিনি এটি মনিটর করেন।
কী ধরনের অভিযোগ আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "কেউ হয়ত মারা গেছেন, গরীব না কিংবা বিদেশে থাকেন অথবা একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।"
ফুলপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এই কার্যক্রমের একজন ট্যাগ অফিসার।
তিনি বলেন, "অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই। ঘটনা সত্য হলে নাম কেটে তালিকায় নতুন করে হতদরিদ্রের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।"
উপকারভোগীদের নাম সাধারণ মানুষের হাতে চলে যাওয়ায়, সতর্ক হচ্ছেন তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকা সংশ্লিষ্টরা। বলছেন অ্যাপসের কারণে গোপন থাকছে না কিছুই। তাই আগে থেকেই তালিকা তৈরিতে সতর্ক থাকছেন তারা।
ফুলপুর উপজেলার বাইটকান্দি ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসমত আলী বলেন, "আমাকে তালিকায় অনেক সংশোধন করতে হচ্ছে। অনেককে বাদ দিয়ে প্রকৃত অসহায়দের নাম অর্ন্তভুক্ত করার কাজ এখন সহজ হচ্ছে।"
বাইটকান্দি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমদ বলেন, "তালিকা তৈরিতে কোনো ভুল করলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আগে থেকে আমরা এখন অনেক সতর্ক। অনেক সময় তালিকা তৈরিতে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই মাঝে-মধ্যে কিছু ভুল ক্রটি হয়ে যায়। তবে অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ আসলে দ্রুত তা ঠিক করে দেই।"
এমন উদ্যোগে খুশি ময়মনসিংহের মানুষ। ত্রিশাল উপজেলার শ্রমিক আবদুল আজিজ বলেন, "অ্যাপসের কারণে প্রকৃত অসহায়রা সুযোগ পাচ্ছে। আমরা নিজেরা অভিযোগ করতে পারি।"
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা সকল কার্যক্রমে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন এই পদ্ধতির উদ্যোক্তা ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, "অ্যাপে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তদন্ত করে তাদের নাম কেটে নতুন নাম সংযোজন করা হচ্ছে। এতে সুযোগ পাচ্ছে বঞ্চিত হতদরিদ্ররা। সামাজিক নিরাপত্তার সকল কর্মসূচি এই অ্যাপের আওতায় আনা হচ্ছে। এতে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বাড়বে। সেই সঙ্গে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, "অ্যাপ কার্যক্রমের পরিধি শুধু ময়মনসিংহে না রেখে সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিলে জবাবদিহিতা বাড়বে; একই সঙ্গে কমবে অনিয়ম ও দুর্নীতিও।"