আইএসও সনদের সুফল পাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো
আইএসও সনদ অর্জনের বিষয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ধারণা না থাকায় এ সার্টিফিকেট পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই)।
এ সংস্থাটি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও) সনদ পেতে উদ্যোক্তাদের সহোযোগীতা করছে । ইতোমধ্যেই ৯০ টি প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার মধ্যে ১৩ টি প্রতিষ্ঠান আইএসও সনদ পেয়েছেন। এসএমই ফাউন্ডেশন মনে করছে এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় বাজারে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পারবে । পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানিতেও তা সহায়ক হবে।
ব্যবসাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশগ্রহণ, মান অর্জন, ক্ষতি প্রতিরোধসহ নানা কাজে আইএসও সনদের গুরুত্ব আছে। শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়, দেশেও এখন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন হয় এ সনদ দিয়েই। আইএসও সনদ পেলেই সেসব প্রতিষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াচ্ছেন।
২০১৩ সাল থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন আইএসও সনদ পেতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। দেশীয় বাজারে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে রপ্তানি এবং বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশন এই লক্ষ্যে 'টেকনোলজি আপ-গ্রেডেশন থ্রু ইমপ্লিমেন্টেশন অব ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফর আইএসও২২০০০:২০১৮' শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় এসএমই শিল্প উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক মান আইএসও ২২০০ সম্পর্কে জানানো হয়। কীভাবে উদ্যোক্তারা তার প্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়ন করবে ও সনদ অর্জন করবে এব্যাপারে নির্দেশনা দেয়।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা প্রতিষ্ঠানে গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (জিএমও) প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেই। আইএসও'র মানদন্ড অনুসারে খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তার গ্রহণ পর্যন্ত যে সমস্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেই। যে সব সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেই প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকি। দেশে যত বেশি ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে দেশ তত বেশি উন্নত হবে। তাই আমরা মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে সহায়তা করছি।"
রুপগঞ্জের কে পি সি ইন্ডাস্ট্রিতে পেপার কাপ তৈরি হয়। এসএমই ফাউন্ডেশনের সহোযোগীতায় আইএসও সনদ অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এসএমই ফাউন্ডেশনের ট্রেনিং পাওয়ায় আইএসও সনদ পাওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়েছ। আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের কী কী কাজ করতে হবে।"
২০১৮ সালে আইএসও সনদ পায় কে পি সি ইন্ডাস্ট্রিজ। মহামারির আগে এ প্রতিষ্ঠান পেপার কাপ রপ্তানি করতো। এখন দেশের বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি করছে না।
সাজিদুর রহমান বলেন, "আইএসও সনদ থাকলে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য কেনার আগ্রহ দেখায়। আমাদের করপোরেট গ্রাহকদের তালিকায় আছে পেপসি, নেসলে, ইউনিলিভার।"
অ্যাগ্রো-প্রসেসিং খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএমএমএস), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমও), গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (জিএপি) সহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয় প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক মান সনদ প্রাপ্তিতে কারিগরি সহযোগিতা প্রদানসহ বহুমুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে পণ্যের মানোন্নয়ন, বহুমুখী নতুন পণ্য উৎপাদন, যথাযথ আধুনিক প্যাকেজিং, ইত্যাদি ক্ষেত্রে কারিগরি পরামর্শ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংযোগ স্থাপনে সহযোগিতা প্রদান করছে সংস্থাটি।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে আইএসও সনদ অর্জনে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি আয়োজন করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এ কর্মসূচির প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার ও সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে তাদের মনোনীত প্রতিনিধিকে ৭ দিনের 'প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোর্স অন ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম- আইএসও২২০০০: ২০১৮' শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আইএসও২২০০০ সনদপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। এরপর আগ্রহী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বল্প মেয়াদে পরামর্শক নিয়োগ করে এসএমই ফাউন্ডেশন। কীভাবে প্রযোজনীয় কাগজ তৈরি করবে এবং ডকুমেন্টেশন তৈরি করবে এব্যাপারেও সহযোগিতা করা হয়।
আইএসও সনদের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পর অভ্যন্তরীণ অডিট করা হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মিলিয়ে দেখা হয়। এ অডিটের ওপরই নির্ভর করে আইএসও সনদপ্রাপ্তি।
প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এ অডিট রিপোর্ট তৈরি করবে সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয় এসএমই ফাউন্ডেশন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, "২০২০ অর্থবছরে আরও ১০ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএমএমএস) বাস্তবায়নের কর্মসূচি চলমান আছে।"
এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আইএসও সনদ পাওয়া ১৩ টি প্রতিষ্ঠান হল: ওয়েল ফুডস লিমিটেড, এফ এম প্লাস্টিক ইন্ডান্ট্রিজ লিমিটেড, সেঞ্চুরী ফার্মস লিমিটেড, হিফজ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, আহমেদ ফুড ইন্ডান্ট্রিজ, ইনাডা ইনকর্পোরেশন, আরকু ফুডস ইন্ডান্ট্রিজ, কে পি সি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রাজ কামাল এভারবেস্ট কর্পোরেশন, ইকো টেকনোলজিস লিমিটেড, গ্রিনটেক অ্যাগ্রো লিমিটেড, নুর ফুডস লিমিটেড।
মার্কস টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ন কবীর টিবিএসকে বলেন, "আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন ও প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মানম্পন্ন করার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়। এতে সার্বিক বিষয়টি সহজে সমাধান করা যায় । কোন বিষয়ে ঘাটতি থাকলে তা আগে থেকেই বোঝা যায়।"
প্রসঙ্গত, আইএসওর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডে। এ প্রতিষ্ঠানটি কোনো সনদ প্রদান করে না, এটি মূলত বিভিন্ন ধরনের মান তৈরি ও উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের সার্টিফিকেশন বডি সংস্থাটির মান অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করে আইএসও সনদ দিয়ে থাকে।বর্তমানে দেশে সরকারি পর্যায়ে একমাত্র মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান 'বিএসটিআই' আইএসও সনদ দিচ্ছে।