আমি কোনো অন্যায় করিনি: ইভ্যালি সিইও রাসেল
এক গ্রাহকের করা অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণায় মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।
তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদের শেষ দিন সোমবার তিনি গুলশান থানা পুলিশের কাছে বলেছেন, আইনি লড়াইয়ে শেষমেষ তিনি টিকে যাবেন, তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। তবে অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা পাচারের প্রশ্নে তেমন একটা মুখ খুলছেন না মোহাম্মাদ রাসেল, মামলার তদন্তের তদারকিতে থাকা কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এমন কথা জানিয়েছেন। এর বাইরে, রাসেল দম্পতি ও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাবও চাইছে পুলিশ।
"আমি তো কোন অন্যায় করিনি, হ্যা অন্যায় করলে অনেক কম দামে, বেশি ছাড়ে পণ্য দিয়েছি। সবাই যে, পণ্য পাননি বিষয়টা এমন নয়, অনেকেই তো পণ্য পেয়েছেন। এখন সবাই বলছেন আমি এতো টাকা কি করেছি, কম ছাড়ে পণ্য দেয়া, ইভ্যালির প্রচারণা-বিজ্ঞাপনেও তো টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখনও আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো পারলে আমি বিদেশে কোথাও টাকা পাচার করেছি কিনা তা বের করে দেখান"।
এদিকে, তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রীকে হাজির করবে গুলশান থানা পুলিশ। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন আছে কিনা, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগে বিশেষ সভায় বসেন উপ-কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তবে আজ আবারো রিমান্ড চাওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আসাদুজ্জামান টিবিএসকে সোমবার রাতে বলেন, তারা নতুন করে রিমান্ডের জন্য আবেদন করবেন কিন্তু তা কতদিনের জন্য হতে পারে তা তিনি উল্লেখ করেননি।
নিজের স্ত্রী ও ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীমা নাসরীনকেও জিজ্ঞাসাবাদে নির্দোষ দাবি করেছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেছেন, এখনো হাজারো গ্রাহক তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে, এসকল সাধারণ গ্রাহকদের জন্যই তিনি আবার মুক্ত হয়ে আসবেন।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, তারা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জোর দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। দেশে-বিদেশে সেই অর্থ কোথাও স্থানান্তর হয়েছে কিনা সেই বিষয়েও তারা জানার চেষ্টা করছেন।
"অর্থ পাচারের বিষয়টি যদিও গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার সাথে সর্ম্পকিত নয়, আমরা তারপরও তার থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। পাচারের কোন আলামত বা প্রমাণ পেলে আমরা সিআইডির সাথে তথ্য বিনিময় করবো, যেহেতু সিআইডি আগে থেকেই বিষয়টি নজরদারি করছে," আমিনুল ইসলাম বলেন।
"এর বাইরে আমরা অগ্রিম টাকা দেয়া গ্রাহক ও পণ্য বিক্রি করা মার্চেন্টদের তালিকা পেয়েছি। তবে এটি ঠিক কত হাজার তা এখনই বলতে চাচ্ছি না। ইভ্যালির সার্ভার থেকেই আমরা সব তথ্য সংগ্রহ করেছি, এসব বিষয়ও আমরা আদালতকে অবহিত করবো," যোগ করেন আমিনুল।
এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি আরেক বিড়ম্বনায় পড়েছেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গ্রাহকরা ফোন করে তাদের ইনভয়েস নম্বর দিচ্ছেন যেন, ইভ্যালির সিইও রাসেলকে তাদের পণ্যটি দ্রুত ডেলিভারি দিতে বলা হয়।
"মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কিভাবে জানি অনেকেই আমার ফোন নম্বর পেয়ে গেছেন, অনেক পুলিশ সহকর্মীরাও তাদের পণ্য দ্রুত পেতে কি করা যায় সে বিষয়ে ফোন করছেন," ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন।
গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডি থানায় এক মার্চেন্টের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরীনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
গুলশান থানার মামলায় আবারো রিমান্ড না চাইলে, ধানমন্ডি থানা পুলিশ দুইজনকে রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন, ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইহসানুল ফেরদৌস।
তিনি বলেন, "মামলায় এরা দুইজন মূল আসামি, এর বাইরে ইভ্যালির অনেক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। রাসেল ও তার স্ত্রীকে আমাদের জিম্মায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকি আসামিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে"।