ঈদের পর সংক্রমণ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত
মার্কেট ও সড়কে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে ঈদের পর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ঈদের পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য এখনই হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও আইসিইউ বেড বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তবে এখনো এক-তৃতীয়াংশ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই, জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই, ভ্যাকসিনের মজুত আছে মাত্র সাতদিনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিনিয়ত প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে রোগী অনেক বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য সংক্রমণ প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. ইকবাল আরসালান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন ঘরমুখী মানুষের যে চাপ বেড়েছে তাতে ঈদের পর সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর আমরা এই চলাচলের ফল আমরা দেখতে পাবো'।
ড. ইকবাল আরসালান বলেন, 'সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার চাপ পড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর। এখনো যেসব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই, সেসব হাসপাতালে দ্রুততার সাথে অক্সিজেন লাইন বসাতে হবে। ভারতে অক্সিজেনের যে দুরবস্থা আমরা দেখেছি সেটি যেন আমাদের না হয় সেজন্য এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে'।
এরইমধ্যে দেশে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের মধ্যে ৯৪ লাখ ডোজ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫,৮১৯,৯০০ জন। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে আছে মাত্র ৭ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। সে হিসেবে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে ঈদের পর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি আছে। সেজন্য এখনি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন, আইসিইউ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তুতি নিতে হবে'।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এখনো সংক্রমণ ঠেকানোর সুযোগ আছে। যাদেরই লক্ষণ দেখা দিবে তারা যেন টেস্ট করে নিজেদের ১৪ দিন আইসোলেট করে রাখে। টেস্ট কিটের কোন সংকট নেই। কিন্তু মানুষ টেস্ট করতে আসছেনা'।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, 'প্রস্তুতির তো শেষ আছে। আমাদের ১২ হাজারের বেশি বেড রয়েছে যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া যাবে। কিন্তু এখন যে হারে মানুষের চলাফেরা বেড়েছে এর ফলে ঈদের পর যদি সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায় তখন আমাদের জন্য সামলানো কঠিন হয়ে যাবে'।
ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, 'ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে। তবে চীনের ভ্যাকসিন আসবে শিগগিরই। এছাড়া দেশেও চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও সরকারিভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা ভ্যাকসিন পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি'।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা না করেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের ফেরি পারাপারসহ বেপরোয়া চলাচলকে আত্মহত্যার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, "ঈদে ঘরমুখো মানুষ লকডাউনের সামান্য শিথিলতার সুযোগ নিয়ে দলবেঁধে গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধির কোনরকম তোয়াক্কা না করে যেভাবে ফেরি পারাপারসহ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করছে তা একেবারে সুইসাইড সিদ্ধান্তের শামিল।"
'পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। ভারতীয় নতুন ভ্যারিয়েন্টটি এখন নেপালে ছড়িয়ে গিয়ে সেখানে ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট এখন আমাদের দেশেও চলে এসেছে। এইরকম ক্রিটিকাল সময়ে এই ভাইরাস দেহে নিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষ যদি গ্রামে চলে যায়, তাহলে গ্রামে থাকা পরিবার পরিজনসহ গ্রামবাসী গণহারে আক্রান্ত হতে পারে।'
বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত দেশে ১১ হাজার ৯৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার গ্রাফ গত মাসের তুলনায় এ মাসে কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। গত এক বছরে যত মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ১ হাজার ৫১৪ জনের দেহে। মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জনে। সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভে চলতি মাসে সংক্রমণের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও গত কয়েক দিন ধরেই লকডাউনের মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।