এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পাবেন সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা
করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
আগামী একমাসের মধ্যে ৪০টি কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদহারে এ ঋণ পাবেন ।
ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, যারা আগে প্রণোদনার পাননি, অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, নারী উদ্যোক্তা, শারীরিকভাবে অক্ষম ও তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
তবে নারী উদ্যোক্তারা পাবেন মোট ঋণের ২৫-৩০ শতাংশ।
সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন উদ্যোক্তারা।
ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগ এবং প্রান্তিক ক্ষুদ্র, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তারা ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫জন গ্রুপ ঋণ নিতে পারবেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহা ব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, "প্রান্তিক এলাকার এই উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার বড় প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। সর্বোপরি করোনার সময় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।"
গতবছর করোনা মহামারি শুরুর পর ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। তবে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পাননি এমন অভিযোগ উঠে।
প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার ঋণ বিতরণে এনজিওকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ বছরের ১৭ জানুয়ারি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও কৃষকদের জন্য ১৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অনুমোদন দেয় সরকার।
এই প্রণোদনা বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ), পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড তিনশ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পায়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিএসসিআইসি) ও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে (এসএফডিএফ) ১০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জয়িতা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনকে।
তবে এনজিও'র মাধ্যমে বিতরণ না করে এসএমই ফাউন্ডেশন ব্যাংকিং চ্যানেলেই ঋণ বিতরণ করতে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে ৯টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বিভিন্ন ক্লাস্টার ভাগ করে দিয়েছে। আরও ৬টি ব্যাংকের সাথে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যাংকের চাহিদাকৃত তথ্যাদি 'সম্পূর্ণ/পরিপূর্ণ ঋণ আবেদনপত্র' ব্যাংকের নিকট দাখিলের পর ঋণ মঞ্জুর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এক্ষেত্রে জটিলতা বাড়বে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, "ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিলেও জটিলতা হবে না। কারণ উদ্যোক্তাদের সরাসরি ডেকে নিয়ে ঋণ দেওয়া হবে। কোনো জটিলতা থাকলে তা সমাধানে ফাউন্ডেশন কাজ করবে। আর ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণে কোনো জামানত প্রয়োজন হবে না।"
এই তিনশ কোটি টাকার মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। অবশিষ্ট ২০০ কোটি টাকা আগামী অর্থবছর পাবে।
কারা ঋণ পাবেন?
এসএমই ফাউন্ডেশন শুধু তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদেরই ঋণ দিবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সারাদেশে বিভিন্ন শিল্পের ১৭৭টি ক্লাস্টার রয়েছে। দেশের ২০টির বেশি জেলার ৪০টি ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হবে।
সরকারের দেওয়া প্রণোদনার অর্থ পর্যায়ক্রমে সবগুলো ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের দিবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এবারের প্রণোদনায় করোনার ক্ষতিগ্রস্থ ও অর্থের চাহিদার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হবে।
পরবর্তী বছরে এসএমই ফাউন্ডেশন আরও দুইশ কোটি টাকা ঋন দিবে। এবার যেসব উদ্যোক্তারা ঋণ নিবেন, পরবর্তীতে তারা প্রণোদনা ঋণ পাবেন না।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্প, ক্রিকেট ব্যাট শিল্প, হোসিয়ারি, ব্যান্ডেজ ও গজ তৈরী শিল্প, ফুড প্রসেসিং, ঝুট গার্মেন্টস, আগর-আতর শিল্প, টেক্সটাইল শিল্প, হস্ত শিল্প (হোগলা পাটি, মোড়া ও বাঁশজাত পণ্য), হামলা প্রকৌশল, প্লাাস্টিক, হ্যান্ডলুম, মুদ্রণ শিল্প, ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্টস, শাঁওইল হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ক্লাস্টার, কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক শিল্প, জামদানি ক্লাস্টার, হস্তশিল্প, শতরঞ্জি ক্লাস্টার, নকশীকাঁথা ক্লাস্টার, জুট ডাইভারসিফিকেশন ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন এবার।