এক সপ্তাহে হাসপাতালে কোভিড রোগী কমেছে ১২%, বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
দেড় মাস ধরে নির্ধারিত বেডের তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকার পর সোমবার (১৬ আগস্ট) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৯টি বেড খালি ছিলো। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মত মুগদা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। দুই সপ্তাহ আগেও বেড সংকটের কারণে রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছিলো হাসপাতালগুলো। এখন পরিস্থিতিতে বদলেছে, কোন রোগী ফেরত পাঠাচ্ছেনা হাসপাতালগুলো।
গত চারদিন ধরে দৈনিক কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিড হাসপাতালগুলোতে জেনারেল বেডে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে, তবে আইসিইউতে রোগীর চাপ এখনো বেশি। হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর চাপ কিছুটা কমলেও ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু ও কোভিড দুটি রোগের বিষয়েই সচেতন থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বাংলাদেশে আরও ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি সর্বশেষ শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ৬ হাজার ৯৫৯ জনের দেহে। এটিও বিগত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন।
৩৩ হাজার ১৫টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ২১ দশমিক ০৮ জনের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৯ আগস্ট সারাদেশে হাসপাতালগুলোর জেনারেল বেডে ৬২.২৬% ও আইসিইউতে ৮৭.৮২% রোগী ভর্তি ছিলো। এক সপ্তাহ পর সোমবার জেনারেল বেডে ৪৯.৪৮% ও আইসিইউতে ৭৪.৭১% রোগী ভর্তি ছিলো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত চারদিন ধরে আমাদের হাসপাতালে কোভিড রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। আগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকতো, এখন তা ৫০-৫৫ জনে নেমে এসেছে। তবে আইসিইউ বেড খালি নেই। আইসিইউয়ের জন্য চাপ এখনো রয়েছে"।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ। তিনি বলেন, "চারদিন ধরে আমরা কোন রোগী ফেরত পাঠাচ্ছিনা। সবাই ভর্তি হতে পারছে। এখন দুই-একটি জেনারেল বেড খালি থাকছে। আইসিইউয়ের জন্য আগে দিনে ১৫-২০টা আবেদন আসতো, এখন সেটি কমে ৫-৬টিতে নেমে এসেছে"।
অসীম কুমার নাথ বলেন, "সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে কোভিড রোগী কিছুটা কমেছে। তবে পজিটিভিটি রেট এখনো অনেক বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানায় অবহেলা করা যাবেনা, তাহলে আবার পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে"।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মহামারির ৩২তম সপ্তাহে (এপিডেমিওলজিক্যাল উইক: ৯-১৫ আগস্ট) নতুন কোভিড রোগী ১০.৯৭% ও মৃত্যু ১২.২৭% কমেছে।
গত দুই মাসে প্রতিদিন ৭০-৭৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হতো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এ সপ্তাহে তা ৩০-৩৫ জনে নেমে এসেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, "আমাদের হাসপাতালে ঢাকার বাইরের রোগী বেশি আসে। তবে এ সপ্তাহে রোগীর চাপ কম। এখন আইসিইউতে শুধু আমাদের ভর্তি থাকা ক্রিটিক্যাল রোগী ভর্তি করা হচ্ছে, বাইরে থেকে রেফার্ড রোগীর জন্য অনুরোধ কম আসছে"।
হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ
কিছুদিন ধরে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে, প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আগস্টের ১৬দিনে দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৩ জন। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু ডেঙ্গু রোগীর চাপ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২১ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি হয়েছেন ১৯৯ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০৩২ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৬২জন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিঙ্কর ঘোষ টিবিএসকে বলেন, জুন-জুলাই মাসে শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলো ১০৪ জন। কিন্তু আগস্টের ১৬ দিনেই ভর্তি রোগী ১৬৫ ছাড়িয়েছে। সোমবার হাসপাতালে ৫৫ জন রোগী ভর্তি ছিলো। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ৫-১০ বছর বয়সী শিশুরা এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
শিশু হাসপাতালে কোভিড রোগী এখনো কমেনি। কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২০ বেডের একটিও খালি নেই বলে জানিয়েছেন কিঙ্কর ঘোষ।
তিনি বলেন, "কোভিডের কারণে শিশুরা বাড়িতেই থাকছে। তাই ঘরবাড়ি পরিস্কার রাখতে হবে, শিশুরা যাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয়, সে জন্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের জ্বর হলেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গু আর কোভিডে একসাথে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। তাই কোভিডের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে"।
এ বছরের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টের ১৬ দিনে ৩৬৬৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।