ওসমানী হবে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল হাসপাতাল’
অটোমেশনের আওতায় আসছে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এজন্য হাসপাতালে চালু করা হচ্ছে 'হসপিটাল হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম'। আগামী বছরের মধ্যেই এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। আর তা চালু হলে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ওসমানীই প্রথম 'ডিজিটাল হাসপাতাল' হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের রোগের যাবতীয় তথ্যের ডাটাবেজ থাকবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। এ কাজে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সিলেট বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ওসমানী হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৯০০। তবে প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ১৫০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন আরও প্রায় দুই হাজার রোগী। এই বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপের সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসকসহ লোকবল সঙ্কট। এ দুয়ে মিলে ব্যাহত হয় হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা।
রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকসহ অন্য স্টাফদের। তবে অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে চিকিৎসকের জন্য সেবাপ্রদান আরও সহজতর হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কর্মকর্তারা।
ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিলেটকে স্মার্ট সিটি করতে 'ডিজিটাল সিলেট সিটি' নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। এই প্রকল্পের আওতায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে 'হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম' চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে হাসপাতালে আগত সকল রোগীর ই-হেলথ রেকর্ড থাকবে। রোগীর সকল তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষিত হবে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, অটোমেশনের আওতায় শুধুমাত্র রোগীদের তথ্যই নয়, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টও করা হবে। এতে অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রমও চালু হবে। যার মাধ্যমে ফোনে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারবেন যে কেউ।
হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, কোনো রোগী ওসমানী হাসপাতালে একবার চিকিৎসা নিলে তার যাবতীয় তথ্য হাসপাতালের ডাটাবেজে রেকর্ড থাকবে। ওই রোগীকে হাসপাতালে কী কারণে কোন ওষুধ প্রদান করা হয়েছিল, তাকে কোন কোন মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়েছিল সব তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। ফলে ওই রোগী যদি পরবর্তী সময়ে কখনো হাসপাতালে আসেন, তবে ডাটাবেজ থেকে তার পূর্বের রোগের সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। ফলে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক সেবা প্রদান সহজতর হবে। রোগীরাও উপকৃত হবেন।
হিমাংশু লাল রায় আরও জানান, অটোমেশন সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক একটি প্রজেক্ট পেপার তৈরি করেছেন। সেটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। আগামী জুন নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
'হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম' চালুর বিষয়ে গত মঙ্গলবার ওসমানী হাসপাতালে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ সময় তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ওসমানীতেই প্রথমবারের মতো এ সিস্টেম চালু হচ্ছে। এখানে সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে পরবর্তীকালে দেশের অন্যান্য হাসপাতালেও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বছরের মধ্যেই শতভাগ ডিজিটাল সেবার মধ্যে আসবে সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি। এটি সফল হলে উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের সরকারি চিকিৎসা সেবাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।