কক্সবাজারে চলছে ৩টি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ, সৃষ্টি হবে ২০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা: প্রতিমন্ত্রী
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন এদেশের গণমানুষের মুক্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পদ্ধতির মাধ্যমেই এদেশের সাফল্য নিশ্চিত হবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) কর্তৃক ঘোষিত এ বছরের প্রতিপাদ্য- "অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধিতে পর্যটন" বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনকেই প্রতিফলিত করছে।
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুকিং শো এবং ঘোড়ার গাড়ির র্যালির উদ্বোধন করেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দেশ। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ পর্যটন। পর্যটন শিল্পের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য কাজ করছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যটন খাতে এখন পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের। ২০১৯ সালে দেশের জাতীয় আয়ে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৯৫০.৭ বিলিয়ন টাকা যা জিডিপির ৪.৩০ শতাংশ, অদূর ভবিষ্যতে তা ৬ শতাংশে পরিণত হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
শুধুমাত্র কক্সবাজারেই তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পার্ক তিনটির কাজ সমাপ্তির পর প্রতিবছর এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এছাড়া দেশের প্রান্তিক মানুষকে পর্যটন শিল্পে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যটন ও কমিউনিটি বেইজড পর্যটন উন্নয়নে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: 'অপরিকল্পিত নগরায়নে' যেন কংক্রিট ও আবর্জনার শহর কক্সবাজার!
মাহবুব আলী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা পৃথিবীর পর্যটন শিল্প একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একটি দীর্ঘ সময় পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশও বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির বাইরে নয়। দীর্ঘ সময় ব্যবসা করতে না পারায় আমাদের পর্যটন শিল্পের আর্থিক ক্ষতি অনেক। বর্তমানে দেশে সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পট ও এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে সকল পর্যটন কেন্দ্র। করোনার এই সময়েও প্রায় ২ কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটক দেশের ভিতরে ভ্রমণ করেছেন। গতি ফিরতে শুরু করেছে দেশের পর্যটন শিল্পের।
তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমাদের পর্যটন শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত ১,৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।
এছাড়াও, পর্যটন শিল্পের ক্ষতি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, করোনাকালীন সময়ে পর্যটন শিল্প পুনরায় চালুকরণের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশিকা প্রস্তুত ও বিতরণ, অনুসরণীয় নির্দেশিকার উপর পর্যটন শিল্পের অংশীজনদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্যুরিজম রিকভারি প্ল্যান প্রস্তুতকরণ, পর্যটন শিল্পে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/দপ্তরের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়, পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন অংশীজনদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, জেলা ও উপজেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ, অন-এরাইভাল ভিসার আওতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ হান্নান মিয়া, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ প্রমুখ।