করোনাকালে কৃষি কর্মকর্তার বিনামূল্যের বীজ বিতরণ
কবি রামপ্রসাদের ভাষায়, ''মন রে কৃষিকাজ জান না। এমন মানব জনম রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা''।
প্রয়োজন শুধু একটু ইচ্ছা আর যত্নের, তাহলে যেকোন পতিত জমিতেই সম্ভব সোনা ফলানো। খুলনায় যেন তাই প্রমাণ করে দেখালেন কৃষকরা।
বাড়ির আঙ্গিনাও এখন আর কোনো পতিত জায়গা নয়। এখন বাড়ির আঙ্গিনাতেও আবাদ করে সোনা ফলছে। খুলনার রূপসা উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকের বসতবাড়ির আঙ্গিনা এখন সবুজ শাকসবজির ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনার পাশাপাশি কৃষকরা তাদের পতিত জমিতেও ফলিয়েছেন নানা ধরনের শাক সবজি। যা দেখলে দু' চোখ জুড়িয়ে যায়।
মূলত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে শাক সবজির ক্ষেত। রূপসা উপজেলার আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান নিজ বেতনের টাকায় কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করায় তার সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিটি জমির ব্যবহার এবং করোনা পরবর্তী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের আলাইপুর ব্লকের উদ্যোগে কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমিতে শাকসবজি চাষে সহায়তা হিসাবে কৃষকের বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে বীজ বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়।
এ কর্মসূচির আওতায় এপ্রিল মাসের শেষে আলাইপুর ব্লকের আলাইপুর, পুঁটিমারি ও আনন্দনগর গ্রামের ১৫ জন কৃষক ও কৃষাণীর বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়। সেই বীজে কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ও পতিত জমিতে এখন সবুজ শাকসবজির সমারোহ। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আলাইপুর গ্রামের কৃষক মহব্বত আলী শেখ জানান, মহামারি করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ও লকডাউনের কারণে ঘরে অলস বসেছিলাম। এ সময় আমাদের এলাকার কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান বাড়িতে এসে কয়েক প্রকার সবজির বীজ বিনামূল্যে দিয়ে তা বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে লাগাতে বলেন।
তিনি বলেণ, প্রথমে ঝামেলা মনে হলেও পরে বীজগুলো বসত বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে লাগাই। ইতোমধ্যে এসব বীজ থেকে চারা গজিয়ে তা বড়ো হয়েছে। এখন এসব শাকসবজির পরিচর্যা করেই সময় কাটছে আমার। অল্প দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যাবে এবং ফলনও ভালো হবে। ঘরের কাছেই নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে পেরে খুশি কৃষক মহব্বত আলী শেখ।
তিনি বলেন, এখন আর বাজার থেকে সবজি কিনতে হবে না। এমনকি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে নগদ কিছু টাকা আয় করে পরিবারের কাজে লাগানো যাবে।
আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, তিনি করোনা ভাইরাসের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথমে স্ব-উদ্যোগে এবং পরে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসারের সহযোগিতায় ১৫ জন কৃষক ও কৃষাণীদের বাড়িতে লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, গিমাকলমি, লাউ, উচ্ছে ও ধুন্দলসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির বীজ পৌঁছে দেন।
পরবর্তীতে তিনি এসব কৃষক ও কৃষাণির বাড়িতে গিয়ে বিতরণকৃত শাক সবজি চাষের কাজ নিয়মিত তদারকি করেন। বিনামূল্যে শাক সবজির বীজ পেয়ে কৃষকরা তাদের বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে তা বপণ করেন। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই বীজ থেকে সহজে শাকসবজির চারা গজায়; যা এখন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে।
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, রূপসা উপজেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে আলাইপুর ব্লকের আবদুর রহমান সর্ব প্রথম নিজ উদ্যোগে বসত বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে শাক সবজি চাষে সহায়তা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ শুরু করেন। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় অন্য ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও বসত বাড়িতে শাক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করছেন।
এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী বাগমারার সংগঠন আরআর এন ও আমদাবাদের ম্যাক্স সমবায় সমিতি এবং ইলাইপুরের অনুশীলন মজার স্কুলের উদ্যোগেও কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে শাক সবজির বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বসত বাড়িতে সবজি ও পুষ্টিবাগান স্থাপনের লক্ষ্যে রূপসা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি কৃষি পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার, বেড়া ও পরিচর্যা বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপকরণ সরবরাহের জন্য প্রণোদনা সহায়তা প্রদানের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি কৃষকের বসত বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমি শাক সবজি চাষের আওতায় আসবে।