করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিয়োজিতদের জন্য ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ: প্রধানমন্ত্রী
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা নববর্ষের আগের দিন সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, "যে সব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতোমধ্যেই তাঁদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।"
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করা সকলের জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখা হাসিনা বলেন, "দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সুরক্ষা সরঞ্জামের কোন ঘাটতি নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীগণ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একইসঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য আমি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশ-সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীগণসহ জরুরি সেবা কাজে যাঁরা নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।"
বক্তব্যের শুরুতেই দেশে ও বিদেশে অবস্থান করা সকল বাঙ্গালীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের, এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত তার পরিবারের সদস্যদের।
দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "করোনাভাইসের কারণে গোটা বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আভাস দিচ্ছে। আপনারা জানেন, এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ। অর্থাৎ নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখা। বিশ্বের ২৫০ কোটিরও বেশি মানুষ আজ ঘরবন্দি। কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কার্ফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়েছে। বাংলাদেশেও গত ২৫-এ মার্চ থেকে ২৫-এ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ৩২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোট-খাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। আমাদের আমদানি-রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে।"
তিনি বলেন, "আমরা বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানিনে, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপি'র ৩.৩ শতাংশ।"
বাঙ্গালীর চিরায়ত উৎসব নববর্ষকে এবার ঘরে বসেই পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "এবার সবাইকে অনুরোধ করবো কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজ-সহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।"