করোনার ঝুঁকি: ‘ধারণা ও প্রস্তুতি নেই’ ধান কাটা শ্রমিকদের
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বগুড়া ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজে থাকা শ্রমিকরা মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
শ্রমিকরা বলছেন, মাস্ক ব্যবহার করলে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। একই সঙ্গে জমিতে ঘনঘন হাত ধোয়াও সম্ভব নয়।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকদের ঝুঁকি কমাতে জমির মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের পৃথকভাবে রাখার চেষ্টাও করা হচ্ছে।
বগুড়া ও নাটোর কৃষি বিভাগের প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও শাজাহানপুরসহ কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় এখন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। তবে এসব কাজে নিয়োজিত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিকের অধিকাংশই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শাজাহারপাড়া গ্রাম থেকে আল মামুন নামে এক কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে আরও ছয় জন ধান কাটতে এসেছেন বগুড়া নন্দীগ্রামে।
করোনাভাইরাস সর্ম্পকে জানেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে আল মামুন জানান, ''এ ভাইরাসের নাম কখনও শুনিনি।''
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাগদা ফার্ম এলাকা থেকে নন্দীগ্রামে ধান কাটতে এসেছেন ২২ জন। তাদের মধ্যে একজন আবদুস সাত্তার। করোনাভাইরাস সম্পর্কে কী জানেন এবং কীভাবে সর্তক থাকতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এ টুকুই জানি।
মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''মাস্ক লাগালে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।''
নিজেদের সুরক্ষায় তারা কী প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নে সাত্তার আলীর সঙ্গে আসা আরেক কৃষি শ্রমিক পকেট থেকে একটি মাস্ক বের করে দেখান।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রাম থেকে নুরুল ইসলামসহ ১৩ জন এসেছেন নন্দীগ্রামে। সেখান থেকে কাজের সন্ধানে যাবেন বিভিন্ন গ্রামে। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তারা জানেন কিনা। মাস্ক ফেলে আসা নুরুল ইসলাম জানান, মুখে মুখে যেটুকু শুনেছেন। এর বেশি কেউ তাদের ধারণা দেয়নি।
যারা ধান কাটতে শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছেন তাদের একজন নন্দীগ্রাম উপজেলার পশ্চিমপাড়ার শাহ আলম। শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব, মাস্কের ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে তাদের সর্তক করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি তার মাথায় আসেনি। এ কারণে করোনা ঝুঁকি সম্পর্কে তাদেরকে সর্তক করা হয়নি।
"আমার নিজেরও করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। সে কারণে মাঠে ধান কাটতে ১৩ জন শ্রমিককে করোনার ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে পারিনি।" বললেন, শাহ আলম।
একই চিত্র নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। ওই উপজেলার কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এসে ধান কাটতে শুরু করেছে। তবে তাদের কারও মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়নি।
নন্দীগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার জানান, স্বাস্থ্য সনদ নিয়েই কৃষি শ্রমিকেরা এলাকায় আসছেন। তারপরেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদেরকে সর্তক করছেন।
''করোনা সংক্রমণ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শ্রমিকদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করছি।" বললেন শারমিন আখতার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে বলা হয়েছে, এ বছরে তিন কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সাধারণত এক বিঘা জমিতে ধান কাটেন ৬ থেকে ৮ জন শ্রমিক। তবে এ বছর শ্রমিকদের পাশাপাশি যন্ত্র দিয়েও ধান কাটা হচ্ছে।