কোভিড ১৯: দু্ই সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে ৫১%
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত বেড রয়েছে ২৭৫টি। হাসপাতালটিতে বৃহস্পতিবার রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৪১ জন। অর্থাৎ হাসপাতালটিকে এখন বেডের তুলনায় ২৪% বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালটির ১০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) একটিও খালি নেই। শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নয় এখন কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর ৯১% বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে কোভিড হাসপাতালগুলোতে রোগী বেড়েছে ৫১%।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৯টি হাসপাতালে ৩২১৫টি সাধারণ বেডের মধ্যে ১৮০৯ টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র ৮০টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মাত্র ২৯টি আইসিইউ বেড খালি আছে। কুর্মিটোলা ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে একটি বেডও খালি নেই। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ৫ মার্চ হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগী ভর্তি ছিলো ১০৯৭ জন, বৃহস্পতিবার তা ১৮০৯ জনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কয়েকদিন ধরে আমাদের হাসপাতালে রোগীর ফ্লো বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও আমাদের ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২ জন ছিলো। কিন্তু আজ আমাদের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৫৬ জন। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১০০টি বেড ভর্তি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোগী আরো বাড়লে নন-কোভিড ওয়ার্ডকে কোভিড ডেডিকেটেড করা হবে'।
ডা. খলিলুর রহমান বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে এখনই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর সংকট রয়েছে। কোভিড রোগী বাড়লে সে সংকট আরো বাড়বে। কারণ কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করা কর্মচারীদের একটি অংশ ১৪ দিন করে কোয়ারেন্টাইনে থাকবে। তখন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর সংকটের প্রভাব পড়বে নন কোভিড ওয়ার্ড, কোভিড-১৯ টেস্ট ও ভ্যাকসিনের ওপর।
এখন হাসপাতালগুলোতে দিনে গড়ে ১৮০০ রোগী ভর্তি থাকছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই হারে রোগী ভর্তি থাকতো হাসপাতালগুলোতে। তখন কোভিড রোগী বেশি থাকায় হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বেড বেশি ছিলো। পরে রোগী কমতে থাকায় অনেক কোভিড হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছিলো এবং নন-কোভিড বেড বাড়ানো হয়েছিলো। তবে এ বছরের মার্চের শুরু থেকে নতুন রোগী শনাক্ত, মৃত্যু, সংক্রমণ হার সবাই বাড়ছে। গত ১০০ দিনের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের হাসপাতালের রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। গত দুই মাসে প্রায় ৫০% বেড খালি থাকতো সেখানে এখন অধিকাংশ বেডই রোগীতে ভর্তি। আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। প্রতিদিন আইসিইউ বেডের জন্য অসংখ্য অনুরোধ পাচ্ছি কিন্তু বেডের ব্যবস্থা করতে পারছিনা। রোগী আরো বাড়লে নন কোভিড কেবিনে কোভিড রোগী ভর্তি করা হবে'।
তিনি বলেন, 'রোগী বাড়ায় আমরা অনেক চাপে আছি। নন কোভিড রোগী, ভ্যাকসিনেশন, কোভিড টেস্ট সবকিছু সামলাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট লোকবল দিয়ে। সবাইকে বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। রোগী আরো বাড়লে নন কোভিড কেবিনে কোভিড রোগী ভর্তি করা হবে'।
সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরইমধ্যে হাসপাতালগুলোতে কোভিড ওয়ার্ডে বেড বাড়ানো, আইসিইউ বেড বাড়ানো, অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যালুনার ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য দেশের সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, 'সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সংক্রমণ কমাতে লকডাউন নয় বরং মানুষের চলাচল কমাতে হবে। কক্সবাজার, সিলেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ, সেসব বন্ধ করতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। সব মন্ত্রণালয়কে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে'।
আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, 'এখন সংক্রমণ বাড়ছে ফলে কয়েকদিন পর মৃত্যু আরো বাড়বে। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। সরকারকে রিস্ক কমিউনিকেশনে জোর দিতে হবে। মাস্ক না পড়লে বা ভ্যাকসিন না নিলে কি ঝুঁকি আছে তা বোঝাতে হবে মানুষকে'।
লকডাউনের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার লকডাউন দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'লকডাউনের চিন্তা আমরা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) না, এটা সরকার করে। সরকারের সকল সংস্থা মিলেই বসে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি, এখন সরকার ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিবে'।
জাহিদ মালেক বলেন, 'আমরা চাই দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। করোনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, তা–ও চাই। স্বাস্থবিধি মানলে লকডাউনের প্রয়োজন হবেনা'।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'মৃত্যুহার বেড়ে গেছে, সংক্রমণ বেড়েছে। করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। দেশের মানুষ এখনো ভালো অছে। কিন্তু যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে কেউই ভালো থাকবে না। করোনা এখনো দেশ থেকে যায়নি। এখনো বেড়ানোর সময় হয়নি। আরেকটু ধৈর্য ধরুন। বেঁচে থাকলে সবাই বেড়াতে পারবেন'।