কোয়ারেন্টিন করা হবে শুনেই পালালেন সেই নারীর স্বজনরা
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা লন্ডন প্রবাসী নারী মারা যান রোববার ভোরে। দুপুরে সংক্রমণ বিধি মেনে শহরের মানিক পীর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরপরই সিভিল সার্জন ঘোষণা দেন, ওই নারীর স্বজন ও তার কাছাকাছি আসা সকলকে কোয়ারেন্টিন করা হবে। এই ঘোষণার পরই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছেন মারা যাওয়া সেই নারীর স্বজনরা। রোববার বিকেলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে কাউকে খুঁজে পাননি।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বিকেলে পুলিশ নিয়ে আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর শামীমাবাদে ওই নারীর বাসায় গিয়েছিলেন। তবে বাসায় গিয়ে তারা কাউকে পাননি। দরজা তালাবদ্ধ ছিল। তার এক স্বজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে সবাইকে বাসায় আসতে বলা হয়েছে। আমরা পরে আবার গিয়ে খোঁজ নেব।
রোববার ভোরে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই নারী। গত ৪ মার্চ তিনি দেশে ফেরেন ও ২০ মার্চ জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর সিলেটে এই হাসপাতালটিকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রোববারই আইইডিসিআরর একটি প্রতিনিধি দল সিলেট পৌঁছে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ওই নারীর রক্তের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল।
শামীমাবাদ এলাকার অবস্থান সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, মারা যাওয়া নারীর মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের পাটলি গ্রামে। তিনি শামীমাবাদের হলিভিউ আবাসিক এলাকায় ভাড়া থাকতেন। স্বামীর সঙ্গে দেশে এসেছেন তিনি। তাদের সন্তানরা যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই বাসায় তাদের নাতি সম্পর্কিত আরেকজন স্বজন থাকেন। তবে সদ্য যুক্তরাজ্য থেকে ফেরায় প্রতিবেশি কারো সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সখ্যতা ছিল না।
প্রবাসী এই নারীর মৃত্যুর পর রোববার দুপুরে নগরীর মানিকপীর গোরস্তানে কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য উপিস্থত ছিলেন। এ ছাড়া মারা যাওয়া নারীরও একজন স্বজন সেখানে ছিলেন।
দাফন শেষে সিভিল সার্জন বলেন, মৃত নারী নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত কি-না তা নিশ্চিত হতে তার মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে ওই নারীর স্বজন ও তার কাছাকাছি আসা সকলকে কোয়ারেন্টিন করা হবে। তার গ্রামের বাড়ির স্বজনদেরও কোয়ারেন্টিন করা হবে।
তবে টেলিভিশনে সিভিল সার্জনের এই ঘোষণা শুনেই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান ওই নারীর স্বজনরা। মারা যাওয়া নারীর পরিবারকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হলেও শামীমাবাদ এলাকাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম।