খুলনায় ১০ হাজার পাটকল শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন
খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর মুহসীন মোড় থেকে রেলিগেট পর্যন্ত রেল লাইনসংলগ্ন সড়কের পাশে সারি সারি পাটের গোডাউন; কিন্তু নেই শ্রমিকদের হাঁকডাক, মেশিন চলার শব্দ। যেন শুনশান নিরবতা। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ পাটের গোডাউনগুলো। এ সব পাটের গোডাউনের কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে খুলনা থেকে চীনে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর ও রেলিগেট এবং দিঘলিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ২৫টি জুট প্রেসের বেশিরভাগই বন্ধ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনটনে।
কাঁচাপাট শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দু'মাস ধরে কাজ বন্ধ। সে কারণে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু ভ্যানও সব সময় চালাতে পারছি না। প্রশাসনের লোকের সামনে পড়লে মারপিটের শিকার হতে হচ্ছে।
আরেক শ্রমিক আফজাল মিয়া বলেন, করোনার কারণে কোম্পানি বন্ধ। আয় নেই। তারপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো কাজও পাচ্ছি না। তাছাড়া এখন রোজার সময়। সব মিলিয়ে ৫ জনের সংসারে না খেয়েই দিন যাচ্ছে।
দৌলতপুর জুট বেলিং ওয়ার্কাস ইউনিয়ানের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মাস্টার বলেন, প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। দেড়-দুই মাসে মাত্র একবার সরকার থেকে কিছু ত্রাণ দিয়েছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। শ্রমিকদের অবস্থা খুব খারাপ। শ্রমিকরা এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এই বিপদে মালিক পক্ষ কোনো খবর নিচ্ছে না।
দৌলতপুরের কাঁচা পাট রপ্তানিকারক এ এম হারুনুর রশীদ আকুঞ্জি বলেন, খুলনা থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। যার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু গত প্রায় তিন মাস ধরে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারী ও রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। শ্রমিকদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। আর মালিকদের ব্যাংক ঋণের সুদ ও গোডাউন ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী বলেন, করোনার কারণে আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। এই খাত থেকে সরকারের কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আসে। তা এখন বন্ধ। শ্রমিকদের সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।