খুলনা মেডিকেলে নমুনার স্তুপ, বিলম্বিত রিপোর্টে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পিসিআর মেশিনে একদিনে করোনা পরীক্ষার সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে ১৯২টি। তবে নমুনা আসছে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক। ফলে জমতে জমতে রীতিমত স্তূপে পরিণত হয়েছে নমুনার সংখ্যা।
সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে চেষ্টা করলেও, সবমিলিয়ে এখন সহস্রাধিক নমুনা অপেক্ষমান থাকছে। ফলে টেস্টের রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে পাঁচ থেকে সাত দিন। এতে সামগ্রিক চিকিৎসা সেবা এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধের প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনার ল্যাবে যথেষ্ট জনবল রয়েছে; এখানে আরেকটি মেশিন দেওয়া হলে এ সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিনে একদিনে করোনা পরীক্ষার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ১৯২টি। গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে বুধবার পর্যন্ত খুমেকের ল্যাবে পরীক্ষা হয়েছে আট হাজার ৬৮৮টি নমুনা। যা দিনের হিসাবে প্রতিদিন দেড়শ'র কাছাকাছি।
সূত্র জানায়, বুধবার পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ল্যাবের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে টেস্ট করলেও, তা শেষ হতে অন্তত সাত দিন লাগবে। এরমধ্যে আরও বেশি নমুনা আসলে স্বাভাবিকভাবেই একজন রোগীর নমুনা নেওয়ার পর রিপোর্ট দিতে পাঁচ দিনের বেশি সময় লাগবে। ফলে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত দুই দিনে পিসিআর ল্যাব থেকে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তার অধিকাংশ স্যাম্পলই পাঁচ থেকে সাত দিন আগে নেওয়া।
নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের তাসলিমা বেগম ও পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ নমুনা দিয়েছিলেন গত ১ জুন। তারা রিপোর্ট পেয়েছেন ৮ জুন। নগরীর বয়রার আবদুল আজিজ নমুনা দিয়েছিলেন গত ৩ জুন। তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন ৯ জুন। একইভাবে ফুলতলা উপজেলার সুমন সানা নমুনা দিয়েছিলেন ৩০ মে। তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন ৮ জুন।
এছাড়া, খুলনা মহানগরীর বাসিন্দাদের নমুনা তিন থেকে চারদিন এবং নগরীর বাইরের বাসিন্দাদের গড়ে পাঁচ দিন পর রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। একইভাবে খুলনা জেলার বাইরের রিপোর্ট প্রকাশ হতে প্রায় সাত দিন সময় লাগছে।
সূত্রমতে, খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শিশু ছিল ৯ জন। তবে মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র দুই জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।
এদিকে, করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনও তাদের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ফলে তারা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে খুমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম তুষার আলম বলেন, খুলনার বাইরে করোনার সঠিক ও নির্ভুল পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভব হলে জেলায় জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া যশোর ও কুষ্টিয়ায় নমুনা পরীক্ষায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ল্যাব চালু হলে- খুলনার ওপর অনেকটাই চাপ কমবে।
তিনি আরও বলেন, খুমেকে জনবল আছে। এখানে এই মুহূর্তে আরেকটি মেশিন দেওয়া হলে আমাদের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে সৃষ্ট জটিলতাগুলো অনেকটাই নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।