গালি দিলেও, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে আইন অনুসারেই চলব: আইনমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন তিনি আইন অনুযায়ীই চলবেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সাংসদ জি এম সিরাজের দাবির প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী বলেন, "বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। উনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।"
পয়েন্ট অব অর্ডারে জি এম সিরাজ তার দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক দিক বিবেচনায় দু-এক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান।
জি এম সিরাজ বলেন, গত এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের শারীরিক অবস্থা চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত জামিন দিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।
খালেদাকে বিদেশে না পাঠানো হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও হুঁশিয়ারি দেন এমপি সিরাজ। বিএনপির এই সাংসদ বলেন, তাকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং অবস্থা চরম হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে আওয়ামী লীগকে তার দায়বহন করতে হবে।
"আমরা ছয়জন এই সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এই পার্লামেন্টের জন্য অলঙ্কার। আজকে তাই বলতে চাই, আমাদের সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যি সত্যি অলঙ্কারই হয়ে থাকি, তাহলে পার্লামেন্ট অলঙ্কারবিহীন করবেন না। এই কারণে, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে এমনও হতে পারে, ম্যাডামের যদি চরম অবস্থা চলে যায়, তাহলে হয়ত এই পার্লামেন্টে আমাদের থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।"
আগের দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সিরাজ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন রাগ-বিরাগের বশবর্তী হবেন না। উনার গতকালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিনয়ের সাথে বলছি, উনার বক্তব্যের সাথে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক।
সিরাজ বলেন, "দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির দেশে আছে। ১৯৭৯ সালে আসম আব্দুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সুযোগ পান।
খালেদা জিয়া কেন সেই সুযোগ পাবেন না- সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, "এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই করতে পারবেন, করেন। সর্বময় ক্ষমতার মালিক তিনি। এটা পাবলিক পারসেপশন।"
প্রধানমন্ত্রীকে সিরাজ অনুরোধ করেন: "মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে দুয়েক দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশ পাঠানো হোক। না হলে কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার সারাজীবন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।"
জিএম সিরাজের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাংসদরা হইচই শুরু করেন। স্পিকার তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৪০১ ধারায় নিস্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
"বাংলাদেশের আইনে এটা নাই। উনারা যদি দেখাতে পারেন, তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু, উনারও দেখাতে পারবেন না, তাই বিবেচনার প্রশ্নও আসে না"।
তিনি বক্তব্য শেষ করেন, বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনে নেই। উনারা আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন…আমি আইন মোতাবেক চলব।