চট্টগ্রামের ৪০ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট
চট্টগ্রামের ৪০ শতাংশ নবজাতক ও শিশুর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট। সম্প্রতি এক গবেষণায় মিলেছে এই তথ্য। এছাড়া, কিশোর ও তরুণদের মাঝেও বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যহীনতা। এক হাজার রোগীর ওপর গবেষণা চালানোর পর এমন দাবি করছে গবেষক দলটি।
২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল ও সেভরন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট এক হাজার রোগীর ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। এর মধ্যে, ৪৩০ জন পুরুষ ও ৫৭০ জন নারী রোগী রয়েছে। বয়স অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচে ৪৭৬ জন, ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১৮৬ জন, ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১০৯ জন, ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩০ জন এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৯৯ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. আদনান মান্নান ও মাহবুব হাসান এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহিদ সুলতানা, ও নবজাতক নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের (এনআইসিইউ) পরিচালক ডা. ওয়াজির আহমেদ। তাদের সহযোগিতা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরোজা আকতার তন্বী।
গবেষণাপত্রটি ১০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক জার্নাল 'প্লস ওয়ান'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ওয়াজির আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গবেষণায় এক হাজার রোগীর ৫০ শতাংশই ছিল শিশু, যাদের ৪০ শতাংশই অন্তত তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অণুজীবে সংক্রমিত। ভবিষ্যতে এসব শিশুর ক্ষেত্রে আরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে গেলে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে।"
তিনি বলেন, "বয়স্কদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষের মধ্যে তিনটি অ্যান্টিবায়োটিকই অকার্যকার পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৭০ শতাংশ মানুষের চিকিৎসায় অন্তত একটি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর প্রমানিত হয়েছে।"
"মূলত অতিরক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ ও পুরোপুরি কোর্স সম্পন্ন না করার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি চারজন নিউমোনিয়া আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে তিনজনের শরীরেই তিনটি বা তার বেশি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর দেখা গেছে", বলেন ডা. ওয়াজির আহমেদ।
গবেষণায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে নিউমোনিয়া ক্লেবজিয়েলা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাধিক ব্যবহৃত ২০টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে সেফুরক্সিম, সেফিক্সিম, সেফোটাক্সিম ও সেফটাজিডিম গোত্রের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে।
সেফুরক্সিম, সেফিক্সিম, সেফোটাক্সিম, সেফটাজিডিম, সেফেপিম, সেফট্রিয়াজোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অণুজীবের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ, ৭৭ শতাংশ, ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ৭১ শতাংশ, ৬৬ শতাংশ এবং ৬৫ শতাংশ হারে অকার্যকার পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সিংহভাগই চারটি স্থান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে। হাসপাতালের বেসিন, নালার পানি, বিছানার চাদর, দেয়ালের বিভিন্ন নমুনাতে অ্যান্টিবায়টিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী এমন একাধিক জিনও চিহ্নিত করা হয়।
ডা. ওয়াজির আহমেদ বলেন, "গবেষণায় চট্টগ্রামের নিউমোনিয়া রোগীদের মধ্যে মাল্টি-ড্রাগ প্রতিরোধের কেপিএন স্ট্রেনের একটি উচ্চ বিস্তার খুঁজে পাওয়া গেছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন এনডিএম-১ এর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রায় ৬০ শতাংশ। এছাড়া, এসএইচভি-১১ এর উপস্থিতি ৪০ শতাংশ ও ইউজিই জিনের বিস্তার প্রায় ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে। তাই এখনই জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় রোধে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া এবং প্লাজমিডের নিয়মিত নজরদারি এবং নিয়মিত ক্লিনিকাল সনাক্তকরণ প্রয়োজন।"
এই গবেষণার অর্থায়ন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তর এবং সহায়তায় ছিল চট্টগ্রামের ডিজিজ বায়োলজি এন্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ।