চট্টগ্রামে পূজা মণ্ডপে হামলা: গ্রেপ্তার ৮৭, রিমান্ডের আবেদন
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় জেএম সেন হলের পূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮৭ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে কোতয়ালী থানার উপপরিদর্শক আকাশ মাহমুদ ফরিদের দায়ের করা এই মামলায় আসামি হিসেবে ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে।
রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (কোতয়ালী) আদালতে গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে কোতয়ালী থানা পুলিশ।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, সরকারি সম্পত্তি ভাংচুর, পুলিশের সরকারি কর্তব্য পালনে বাধাদান, পুলিশকে হুমকি, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত, ধর্মের অবমাননার উদ্দেশ্যে দেবী দূর্গার ছবি নষ্ট করে অন্তর্ঘাতমমূলক কাজের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করার অভিযোগ আনা হয়।
গত শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর কুমিল্লায় কথিত 'কোরআন অবমাননা'র ঘটনায় চট্টগ্রামে প্রতিবাদে মিছিল থেকে জেএমএস হলের পুজা মণ্ডপে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা দূর্গাপুজা উপলক্ষে টাঙ্গানো ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তবে মণ্ডপের ভেতরে কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ওই মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের কর্মসূচি তাৎক্ষণিক স্থগিত করলেও পরে রাতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দরকিল্লা ও জে এম সেন হল এলাকায় হরতাল পালন করা হয়।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হামলার ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুক্রবার ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। শনিবার রাতে ২ জন গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার সকালে আরো ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।"
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার উপ পরিদর্শক বাবলু কুমার পাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রোববার আদালতে গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।"
হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে পূজা উদযাপন পরিষদের ৬ দফা দাবিতে ৪ দিনের কর্মসূচি
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিতে ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি আশিষ কুমার ভট্টাচার্য।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৭২ এর সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সম-অধিকার নিশ্চিত করা। এবারের দূর্গা পূজা চলাকালীন চট্টগ্রামের প্রধান পূজা মন্ডপ জেএমসেন হলসহ সারাদেশে দূর্গা প্রতিমা ভাংচুর, মঠ মন্দিরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও পূজার্থীদের উপর হামলায় জড়িতের দ্রুত গ্রেপ্তর ও দ্রুত বিচার আইনে আলাদা আলাদা মামলা করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দেওয়া। ক্ষতিগ্রস্ত মঠ মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মাণ করা। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করা। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সরকারি অনুদান দিয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া। এবং রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
এসব দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে পূজা উদযাপন পরিষদ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ অক্টোবর বিকেল ৪ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, ১৯ অক্টোবর সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত জেএমসেন হলে প্রতীকী অনশন, ২১ অক্টোবর বিকাল বিকাল ৩ টায় জেএমসেন হলে সমাবেশ এবং ২২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টায় জেএমসেন হলে মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ।