চট্টগ্রামে বেড়েছে সর্দি-কাশি গলাব্যথার রোগী
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭৩৫ জন। মঙ্গলবার জেলার ৫২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে এ সব রোগী সেবা নেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চার হাজার ৯৬৩ জন নারী, দুই হাজার ৯৯১ জন পুরুষ ও এক হাজার ১৩৭ জন শিশু রোগী সেবা নিয়েছে। এদের মধ্যে সর্দি-কাশি ও গলাব্যাথার চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৭৩৫ জন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই) বলতে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কুইলাইটাস ও নিউমোনিয়াকে বোঝানো হয়। প্রতিবছর আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মানুষ এআরআইতে বেশি আক্রান্ত হন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এআরআই রোগী বেশি পাচ্ছি। আবহাওয়া পরিবর্তন, দূষণসহ নানা কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ হতে পারে। তবুও আমরা যেসব এলাকায় রোগী বেশি পাচ্ছি সেখানে নজরদারি বাড়াচ্ছি।
চিকিৎসকরা এআরআই রোগী বাড়ার একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি মানেই করোনাভাইরাস নয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, আবহাওয়া স্থিতিশীল নয়। প্রতিবছর এই সময়ে এ ধরনের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। তখন অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগীরা নানা সমস্যায় ভোগেন।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন পর শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি দেখা দেয়। ১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা মারাত্বকভাবে অবনতি হয়। এরপর ভেন্টিলেটরের সাহায্য ছাড়া শ্বাস নিতে পারেন না। তাছাড়া প্রচণ্ড শরীর ব্যাথা এবং ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই সাধারণ শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হলে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য করোনা পরীক্ষার করা গেলে ভালো।
এ দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এআরআই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাচ্ছেন তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. শায়লা তাসুনভা বলেন, প্রতিবছর এই সময়টাতে আমরা নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি পাই। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসেন। এবারও একই অবস্থা। তবে অনেকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে আছে।
হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, এআরআই রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা খেয়াল করেছি। তবে এটি কী কারণে বাড়ছে সেটি বুঝতে আরও সময় লাগবে। শারীরিক অবস্থা দেখে রোগীদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে। ইতোমধ্যে ২৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত দুই ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা একই পরিবারের সদস্য। তাদেরকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরও চারজন রোগীকে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য দুইটি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১৫০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনার রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ছয়শ জন চিকিৎসককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হচ্ছে।